শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

এক রাস্তা নির্মাণে চাষাবাদের আওতায় ১২শ' বিঘা জমি

টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় হোগলার বিলের মাঝে তৈরি করা রাস্তা -যাযাদি

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে দু'টি ইউনিয়ন বর্ণি ও গোপালপুর। এই দুই ইউনিয়নের মাঝে ৫০০ কৃষকের ১ হাজার ২০০ বিঘা জমি নিম্ন জলাভূমি বেষ্টিত। বছরের অধিকাংশ সময় এসব জমি জলাবদ্ধ থাকত। প্রায় ২৫ বছর ধরে এখানে চাষাবাদ হয় না। এ বিলের পানি একটু শুকাতেই প্রাকৃতিকভাবে হোগলা জন্মায়। তাই বিস্তীর্ণ এই জায়গাটির নাম হোগলার বিল। এ বিলের এপার ওপারে মাছের ঘেরে নৌকায় চলাচল করতে হতো। কচুরিপানা ঠেলে ঘেরে নৌকায় যাওয়া আসা করতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগত। তাই বিলের মাঝে একটি রাস্তা নির্মাণের বহু বছরের দাবি ছিল দুই ইউনিয়নের অন্তত ৫ হাজার বাসিন্দার। অবশেষে তাদের দাবি পূরণ হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ (কাবিখা) প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই বিলের মাঝে ১ হাজার ২৬৮ মিটার ইটের রাস্তা নির্মাণ করে দিয়েছে। আর তাতেই ১ হাজার ২০০ বিঘা জমির চিত্র বদলাতে শুরু করেছে। বর্তমানে ওই রাস্তার পাশে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হয়েছে। বোরো মৌসুমে জমিতে আবাদ শুরু করেছেন কৃষক। আশপাশে গড়ে উঠেছে বসতবাড়ি। এখন কৃষকরা সহজেই এখানে চাষাবাদ করে তাদের কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। রাস্তার সুবাদে বিলের জায়গার দাম বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ।

বর্ণি ইউনিয়নের কৃষক ফরহাদ হোসেন বলেন, 'আগে আমাদের এই বিলে অনেক ধান হতো। কিন্তু গত ২৫ বছর ধরে ১ হাজার ২০০ বিঘা জমি পতিত হয়ে পড়েছিল। তাই এখানে কোনো মানুষ আসত না। এখন এই রাস্তা হওয়াতে আমরা দুই ইউনিয়নেই সহজে যাওয়া-আসা করতে পারি। এখানে অনেক ঘরবাড়ি ও মাছের ঘের তৈরি হয়েছে। আর কৃষকরা আবার জমিতে আবাদ শুরু করেছেন। আমরা কষ্টের ফসল সহজেই ঘরে তুলতে পারব। এ রাস্তা নির্মিত হওয়ায় আমরা খুবই খুশি।

দক্ষিণ বর্ণি গ্রামের মাছচাষি মান্নান শেখ বলেন, বিলের ওপারে মিত্রডাঙ্গা গ্রামে আমার একটি মাছের ঘের রয়েছে। কচুরি ঠেলে সেই ঘেরে নৌকা নিয়ে যাওয়া-আসা করতে হতো। এতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগত ও খুব পরিশ্রম হতো। উৎপাদিত মাছ বাজারজাত করতে সমস্যাও হতো। এখন ঘেরে মোটর সাইকেল, বাই সাইকেল ও ভ্যানে করে যেতে পারি। মাছ ও কৃষিপণ্য সহজে বাজারজাত করতে পারছি। এ রাস্তার জন্য আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে।

গোপালপুরের মিত্রডাঙ্গা গ্রামের গৌতম মন্ডল বলেন, এই একটি রাস্তায় আমাদের কপাল খুলে দিয়েছে। এখন আমরা জমিতে ও রাস্তার পাশ দিয়ে শাকসবজি আবাদ করতে পারছি। এছাড়া মাছের ঘের করতে পারছি। আর রাস্তা দিয়ে সহজেই কষ্টের সফল বিক্রি করে টাকা উপার্জন করছি। একটি রাস্তা আমাদের কয়েক গ্রামের মানুষের দুঃখ কষ্ট লাঘব করেছে।

মিত্রডাঙ্গা গ্রামের আরেক কৃষক শক্তিপদ কীর্তনীয়া বলেন, এই রাস্তার কারণে গত এক বছরে অনেক বসতবাড়ি উঠেছে। কারণ লোকজন সহজেই আসা-যাওয়া করতে পারছে। আগে এখানে এক বিঘা জমি (৫২ শতাংশ) বিক্রি হতো মাত্র ৬ থেকে ৭ লাখ টাকায়। এখন এক বিঘা জমি ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর এই রাস্তায় আমাদের মতো কৃষকদের খুব উপকার হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, গোপালপুর ও বর্ণি ইউনিয়নের ১ হাজার ২০০ বিঘা জমি জলাবদ্ধতার কারণে অনাবাদি হিসেবে পড়েছিল। পাঁচ গ্রামের মানুষের এখানে চলাচলের একমাত্র ভরসা ছিল নৌকা। তাই তাদের দুঃখ লাঘবে কাবিখা প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথমে মাটির রাস্তা করে দেওয়া হয়। পরে এইচবিবি প্রকল্পের মাধ্যমে মাটির রাস্তা টেকসই করা হয়েছে। এখানে কৃষক ৩ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন করতে পারছেন। যার বাজার দর ১০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সহজেই কৃষক তাদের উৎপাদিত সফল ঘরে তুলতে পারছেন। এ ফসল বাজারজাত করে ন্যায্যমূল্য পেয়ে লাভবান হচ্ছেন। এ রাস্তা নির্মিত হওয়ায় দুই ইউনিয়নের বিল বেষ্টিত এলাকার ১০ হাজার মানুষের উপকৃত হচ্ছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে