সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্থানীয় নেতাদের পক্ষ পরিবর্তনে ভোটবিমুখ হয় সাধারণ জনগণ

চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
  ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

স্থানীয় নেতাদের ক্রমাগত পক্ষ পরিবর্তনের কারণে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে জনমনে। আজ যে নেতার কাতারে সমবেত হয়ে কর্মীরা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করেন, দেখা যাচ্ছে ওই নেতা দুই দিন পর আগের পক্ষ ত্যাগ করে প্রতিদ্বন্দ্বী অপর নেতার অনুসারী হয়ে গেছেন। এর ফলে ভোটারদের মনে ভোট প্রদানে আগ্রহ যেন দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। ফরিদপুর-৪ আসনভুক্ত উপজেলাগুলোতে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে গত ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসন। এ আসনে বরাবরই আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়লাভ করলেও ২০১৪ সালের নির্বাচনে ঘটে তার ব্যতিক্রম। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী জাফর উলস্নাহকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন।

নিক্সন চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলেও মূলত তিনিও আওয়ামী পরিবারের সন্তান। ওই নির্বাচন থেকেই ব্যাপক আকারে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে পক্ষ পরিবর্তনের প্রবণতা দেখা দেয়। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও কাজী জাফর উলস্নাহ পরাজিত হন নিক্সনের কাছে।

গত ৯ বছরে এ আসনের অনেক স্থানীয় নেতাই একাধিকবার পক্ষ পরিবর্তন করেছেন। তাদের এরূপ আচরণ বিরূপ প্রভাব ফেলে সাধারণ জনগণের মধ্যে। কেননা স্থানীয় নেতাদের নিজস্ব কিছু অনুসারী থাকে। নেতার আচরণ বিরূপ প্রভাব ফেলে তাদের ওপর। ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে তারা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে যায়। ফলে অনেকেই হয়ে যান ভোটবিমুখ।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেন রুবেলের। তিনি বলেন, যারা প্রকৃত দলকে ভালোবাসে, কখনই তারা প্রতীকের বাইরে যায় না। তবে এক শ্রেণির নেতা রয়েছেন যারা বিভিন্ন সময় তাদের অনুসারীদের প্রদর্শন করে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার, পাশাপাশি বিভিন্ন সুযোগ গ্রহণ করে থাকেন। সুযোগ বুঝে তারাই আবার পক্ষ পরিবর্তন করেন। বঞ্চিত হয় তার অনুসারীরা। এতে ওই স্থানীয় নেতার প্রতি তাদের (অনুসারীদের) আস্থা নষ্ট হয়ে যায়। তাদের মধ্যে ভোট বা নির্বাচন নিয়ে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে। অনেকে অভিমান করে ভোট প্রদান হতেও বিরত থাকেন।

এ বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন চায়ের দোকানদার, কাঠমিস্ত্রি, জেলে ও রিকশা চালকের সঙ্গে আলাপ হলে তাদের থেকে যে তথ্যটি পাওয়া যায় তা হলো- তাদের অনেকেই বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে স্থানীয় নেতাদের সহযোগিতা নিয়ে থাকেন। সে সুবাদে ওই নেতার অনুসারী হয়ে যান। নির্বাচনের আগে এ নেতারা ভোটের দাবি নিয়ে তাদের কাছে আসেন। অথচ দেখা যায় এর আগে অন্য কারও জন্য সুপারিশ নিয়ে এসেছেন তিনি। তাদের এ নীতি পরিবর্তনে ভোট প্রদানে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন তারা।

অবশ্য এদের দু-একজন ভিন্ন মতও প্রকাশ করেন। তাদের মতে, নেতারা পক্ষ পরিবর্তন করে তাদের স্বার্থে। সাধারণ ভোটারদের মধ্যে কোনো প্রভাব ফেলার কথা নয়। যার ভোট সে যাকে যোগ্য মনে করবে তাকে প্রদান করবে।

প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসন হতে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে এদের মধ্যে এবারও মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউলস্নাহ ও ঈগল প্রতীকে যুবলীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে