বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

গাংনীতে কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না তামাক চাষ

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি
  ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
গাংনীতে কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না তামাক চাষ

মেহেরপুরের গাংনীতে কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না তামাকের উৎপাদন ও বিপণন। বিভিন্ন তামাক কোম্পানিগুলোর নানামুখী প্রচারণা ও প্রণোদনার কারণে চাষিরা ঝুঁকছেন তামাক চাষে। তাছাড়া একের পর এক খাদ্যপণ্যের দাম নিম্নমুখী হওয়ায় অন্য ফসলের চেয়ে তামাক চাষ লাভজনক বলে মনে করছেন চাষিরা। তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেটি কোনো কাজে আসছে না। এদিকে চোখের সামনে তামাক চাষ হলেও তা রোধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কৃষি বিভাগ, এমনি অভিযোগ সাধারণ চাষিদের।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উপজেলায় এবার ৪৫০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। গেল বছর তামাক চাষ হয়েছে ৪৩৫ হেক্টর। চাষিরা কে-২, কোরবান ও গোলপাতা জাতের তামাক আবাদ করছেন। তবে কে-২ জাতের তামাক বেশি। চাষিরা খাদ্যশস্যে আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় অনেকেই তামাক চাষ করছেন বলে চাষিরা দাবি করেছেন। কিন্তু এ দাবি মানতে নারাজ কৃষি অফিস।

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন মাঠজুড়ে রয়েছে তামাক ক্ষেত। কোথাও কোথাও তামাক পাতা সঁ্যাকার জন্য তোলা হচ্ছে চুলিস্ন। এসব চুলিস্নতে বিভিন্ন ধরনের পলিথিন ও ঝুঁকাপড় পোড়ানো হয়। ফলে বিকট গন্ধে বাতাস দূষিত হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবার বেশি তামাক চাষ হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন চাষিরা। বিভিন্ন তামাক কোম্পানির লোকজন নানা ধরনের প্রণোদনা দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছে সার কীটনাশক, পলিথিন ও টাকা। চাষিরা তামাক বিক্রি করে ওই টাকা পরিশোধ করেন। মোটা অঙ্কের টাকার লোভে চাষিরা কোম্পানির কথায় তামাক চাষ করছেন।

চাঁদপুর গ্রামের তামাক চাষি ছানোয়ার জানান, তিনি এবার ৮ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছেন। তামাক চাষে লাভ বেশি। এক বিঘা জমিতে খরচ হয় ৭-৮ হাজার টাকা এবং তামাক ভালো হলে ৫-৬ মণ ফলন পাওয়া যায়। সব বাদ দিয়ে প্রচুর টাকা লাভ থাকে। তামাক চাষে যা যা লাগে সবই কোম্পানির লোকজন দেয়। ফলে তামাক চাষ অত্যন্ত সহজ।

কৃষক আলম হোসেন জানান, এক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, সব খরচ কোম্পানির। উৎপাদিত তামাক বাজার মূল্য ধরে যা দাম হবে তাদের খরচ বাদ দিয়ে বাকি টাকা দিয়ে তারা তামাক নিয়ে যাবে। একই কথা জানালেন শিমুলতলার চাষি মনিরুল ইসলাম ও সেকেন্দার আলী। চাষিদের অভিযোগ, কৃষি অফিস তামাক চাষের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে না।

মেহেরপুর ক্যাবের প্রেসিডেন্ট রফিকুল আলম জানান, তামাক চাষ শুধু ক্ষতিকরই না, অত্যন্ত অলাভজনক। তামাক চাষের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত খরচ হিসেবে করলেই তার প্রমাণ মিলে। এ ছাড়া তামাকের উচ্ছিষ্ট অংশ হৃৎপিন্ডে ঢুকে ক্যানসারসহ নানা মরণব্যাধি হতে পারে। তিনি আরও জানান, প্রতিটি চাষি তার বাড়িতে চুলিস্ন তৈরি করে। এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপুর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর।

তামাক চাষ স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ এমন প্রশ্নের জবাবে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের চিকিৎসক ফারুখ হোসেন জানান, তামাক নানাভাবে স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। যারা তামাকের পরিচর্যা করেন তারাও নানা শারীরিক সমস্যায় ভোগেন। ধূমপায়ীদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে হাঁপানি, ফুসফুসে প্রদাহ ও ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন তারা।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার ইমনান হোসেন জানান, 'আমরা বিভিন্নভাবে তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করছি। আমরা তামাকের বদলে অন্য ফসল চাষ করার জন্য তাদের বলছি। তবুও কিছু তামাক কোম্পানি কৃষকদের প্রভাবিত করছে। এ ছাড়া চাষিরা খাদ্যশস্যের দাম পাচ্ছেন না বলে দাবি করেন। কিন্তু এটি যুক্তিযুক্ত নয়।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে