বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ফটিকছড়িতে রাত হলেই শুরু হয় জমির উর্বর মাটি ও হালদার পাড় কাটা উৎসব

ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
  ০১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে রাতের আঁধারে কেটে নেওয়া কৃষিজমির উর্বর মাটি ও হালদা নদীর পাড় -যাযাদি

পরিবেশ আইন অমান্য করে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বিভিন্ন এলাকায় রাতের আঁধারে এশিয়ার সর্ববৃহৎ মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীর পাড় এবং কৃষিজমির উর্বর মাটি কাটার মহোৎসব চলে। এসব মাটি সরবরাহ করে বিক্রি করছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং দুষ্কৃতকারীরা। অন্যদিকে দিনে-দুপুরে চলে হালদা নদী, ধুরুং খাল, সর্তা খাল ও ফটিকছড়ি খাল থেকে ড্রেজার মেশিন এবং নৌকা দিয়ে বালু উত্তোলন।

এতে একদিকে উর্বর জমি বিলীন হচ্ছে, অন্যদিকে নদী ও খাল ভাঙনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। আর হুমকির মুখে পড়েছে হালদা জীববৈচিত্র্য, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্যও। রাতের অন্ধকার নেমে আসলেই চলাচল শুরু করে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় মাটিভর্তি শতাধিক ট্রাক। চলে রাতভর। মাটিবাহী এসব ট্রাকের প্রভাব পড়ছে সড়কগুলোতেও।

সরেজমিনে পরিদর্শন করে এবং খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের নাসির মোহাম্মদ ঘাটের বিপরীতে উত্তরে হালদার পাড়, অপরদিকে নৌকা দিয়ে বালু উত্তোলন, নাজিরহাট পৌরসভা সুয়াবিল ইউনিয়ন পরিষদের সামনে, সুয়াবিল অংশের বিভিন্ন স্থানে, হারুয়ালছড়ি ইউপি, ভূজপুর ইউপিসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষিজমি থেকে রাতে অবাধে কাটা হচ্ছে মাটি। শুষ্ক মৌসুমে চলে মাটিকাটা। সম্প্রতি তা বেড়েছে।

অন্যদিকে, পাইন্দং এলাকা এবং সুয়াবিল এলাকার হালদা অংশ, সর্তা খালের খিরাম অংশ, ধুরুং এবং ফটিকছড়ি খালে ড্রেজার মেশিন এবং নৌকা দিয়ে বালি তোলা হচ্ছে। মাটি দসু্যদের দৌরাত্ম্যে ফটিকছড়িতে আশঙ্কাজনক হারে উর্বরতা হারাচ্ছে ফসলি জমি। হুমকির মুখে পড়ছে নদী-খাল। সাবাড় করে দিচ্ছে ফসলি জমির ওপরের অতিগুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সমৃদ্ধ মাটি (টপ সয়েল) এবং নদীর পাড়ের মাটি-বালু।

মাটি ব্যবসায়ীদের লুট থেকে বাদ যাচ্ছে না মালিকানা জমি, খাসজমি, খাল ও নদীর পাড়। গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নেওয়ায় কৃষিজমি জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। গভীর গর্ত করে মাটি কাটায় ওইসব জমিতে দিন দিন কমে যাচ্ছে ফসল উৎপাদন।

প্রশাসন বলছে, অভিযান চলছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র হলো, দিনে এবং মাঝেমধ্যে রাতে অভিযান চললেও মাটি ব্যবসায়ীরা বেছে নিচ্ছেন রাতের আঁধার।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মাটি পরিবহণে ব্যবহৃত ভারী যানবাহনগুলোর কারণে গ্রামীণ সড়কগুলো বিধ্বস্ত হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি হলেই তা পিচ্ছিল হয়ে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কগুলো নির্মাণ করলেও এসব কারণে সেগুলো করুণ দশায় উপনীত হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, কৃষিকাজের জন্য টপ সয়েল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি দীর্ঘদিন ধরে প্রাকৃতিকভাবে ও জৈব ব্যবস্থাপনার ফলে মাটির ওপরের ৮-১০ ইঞ্চি জমির প্রাণশক্তিতে পরিণত হয়। এ টপ সয়েল সরিয়ে নিলে মাটির গুণাবলি নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে যে মাটি জমিতে থাকে তা ফসল ফলানোর জন্য উপযুক্ত থাকে না।

তিনি বলেন, টপ সয়েল কাটার ফলে জমির যে ক্ষতি হবে তা ১০০ বছরেও পূরণ করা সম্ভব নয়। জমির প্রাণশক্তি ফিরে পেতে দীর্ঘকাল প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে, হালদার চর সোনার চেয়ে খাঁটি। এ মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া সত্যিই অমানবিক।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোজাম্মেল হক বলেন- 'আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। কিন্তু এত বড় ফটিকছড়িতে সবাই সহযোগিতা না করলে সারাদিন অভিযানই করতে হবে, অফিস করা যাবে না। স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানদের বলার পরেও তারা কোনো সহযোগিতা করছেন না।'

এদিকে ফটিকছড়ি পৌরসভার উত্তর রাঙ্গামাটিয়া এলাকায় নিজস্ব কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে গেছে বলে ইউএনও বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন জমির মালিক রফিকুল আলম, শফিউল আজম ও মঈন উদ্দিন শাহজাহান। এর বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইউএনও এসিল্যান্ডকে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে