শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

তিন শিক্ষক বরখাস্ত হলেও বহাল তবিয়তে ইউআরসি কর্মকর্তা!

শরীয়তপুর সদর প্রতিনিধি
  ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
তিন শিক্ষক বরখাস্ত হলেও বহাল তবিয়তে ইউআরসি কর্মকর্তা!

প্রথমে উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ট্রেনিংয়ের ভাতার টাকা আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ আনা হয়। পরে ওই কর্মকর্তা তিন অভিযোগদাতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও অসদাচরণের অভিযোগ তোলেন। এ ঘটনায় তিন অভিযোগদাতা কোনোপ্রকার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ছাড়াই চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হন। অথচ এখনও বহাল তবিয়তে আছেন রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর শাহীনুর আক্তার। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মাত্র কয়েকদিন আগে এমন ঘটনা ঘটেছে।

সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে তুমুল সমালোচনার ঝড় বইছে। চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া তিন শিক্ষক হলেন- ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আফতাবুল করিম মেনন, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান ও সহ-সম্পাদক শামীমা আক্তার সীমা।

1

জানা যায়, উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের (ইউআরসি) ইন্সট্রাক্টর শাহীনুর আক্তারের বিরুদ্ধে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক ট্রেনিংয়ে শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া ব্যাগ, কলম, নাস্তা ও ভাতাসহ নানা উপকরণ সঠিকভাবে বণ্টন না করার অভিযোগ আনেন উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী ৪৫ জন শিক্ষক। গত ২৩ জুন এমন অভিযোগ জেলা প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) সুপারিনটেনডেন্ট বরাবর প্রদান করেন ভুক্তভোগী শিক্ষকাভ।

উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে কর্মরত শিক্ষকরভ জানান, ইন্সট্রাক্টর শাহীনুর আক্তারের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের তথ্য সংগ্রহসহ শিক্ষকদের স্বাক্ষর সংগ্রহে নেতৃত্ব দেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকনেতা আফতাবুল করিম মেনন, নাজমুল হাসান ও শামীমা আক্তার সীমা। শিক্ষকদের দেওয়া অভিযোগের তদন্ত চলাকালীন গত ২৫ জুলাই ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর শাহীনুর ওই তিন শিক্ষকনেতার বিরুদ্ধে ট্রেনিংয়ের প্রতি ব্যাচ থেকে তিন হাজার টাকা চাঁদাদাবি করাসহ অসদাচরণের অভিযোগ তুলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু কোনো প্রকার তদন্ত ছাড়াই সরকারের পতন হওয়ার মাত্র কয়েকদিন আগে (২৯ আগস্ট) আফতাবুল করিম মেনন, নাজমুল হাসান ও শামীমা আক্তার সীমাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নূরুল হাসান। অন্যদিকে ৪৫ জন শিক্ষক কর্তৃক প্রদত্ত অভিযোগের তদন্তে কমিটি করলেও সেই কমিটির কার্যক্রম ধীরগতিতে চলছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষকনেতা আফতাবুল করিম মেনন বলেন, ইন্সট্রাক্টর শাহীনুরের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষকদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে পিটিআই অফিসার বরাবরসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেই আমিসহ নাজমুল হাসান ও শামীমা আক্তার সীমা। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে চাঁদাদাবিসহ অসদাচরণের অভিযোগ করেন, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।'

অভিযোগের বিষয়ে ইন্সট্রাক্টর শাহীনুর আক্তার বলেন, সরকারি বিধি অনুযায়ী আমি ট্রেনিংয়ের ব্যয় নির্বাহ করে থাকি। আফতাবুল করিম মেনন, নাজমুল হাসান ও শামীমা আক্তার সীমা ট্রেনিংয়ে ব্যাগ সাপস্নাই করে ব্যবসা করার সুযোগ দিতে বলেছিলেন। যদি সেই সুযোগ তাদের দেওয়া না হয় তাহলে প্রতি ব্যাচের জন্য তারা তিন হাজার টাকা চা-মিষ্টির জন্য দাবি জানান। যা একপ্রকার চাঁদাবাজি। এটি নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।'

তার বিরুদ্ধে ওই তিন শিক্ষক অভিযোগ দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, 'অনেক আগে থেকেই তারা আমার কাছে ব্যবসা এবং চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। এতদিন বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের অনুরোধে আমি অভিযোগ দিইনি। এবার অভিযোগ দিয়েছি এবং তারা শাস্তিও পেয়েছে।'

শরীয়তপুরের প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নূরুল হাসান বলেন, চাঁদাদাবিসহ অসদাচরণের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সাধারণত অভিযোগ পাওয়ার পরই প্রথমে অভিযুক্তদের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর তদন্ত কমিটিসহ তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। এমন নিয়ম প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের। সরকারি কর্মচারী আইন- ২০১৮ এর ৩৯ (১) ধারায় তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।'

শরীয়তপুরের পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট কামরুন নাহার বলেন, 'ইন্সট্রাক্টর শাহীনুর আক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্তে প্রমাণিত হলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে