মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২

নওগাঁয় তিতির পাখি পালনে সফলতা

বরেন্দ্র অঞ্চল (নওগাঁ) প্রতিনিধি
  ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
নওগাঁয় তিতির পাখি পালনে সফলতা
নওগাঁর মান্দায় বাণিজ্যিকভাবে পালন করা তিতির পাখি -যাযাদি

ধান আর আমে সমৃদ্ধ হলেও প্রাণিসম্পদ খাতে পিছিয়ে নেই নওগাঁ জেলা। জেলার একটি প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা সুমন কর্মকার। বাড়ি জেলার মান্দা উপজেলার কিত্তলী গ্রামে। বাণিজ্যিকভাবে তিতির পাখি পালন করে সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি। এতে ঘুরেছে তার ভাগ্যের চাকা। শোভাবর্ধণকারী পাখিগুলোর মধ্যে তিতির অন্যতম এবং খুব শান্ত। খাদ্য ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় লাভ বেশি। মাংস ও ডিম খুবই সুস্বাদু। মৃতু্যঝুঁকি কম হওয়ায় তিতির পালনে আমিষের অভাব পূরণের পাশাপাশি বেকারত্ব দূর হবে। গ্রামীণ পরিবেশেই হাঁস মুরগির সঙ্গে লালন-পালন করা যায়।

জানা গেছে, দেশে সাধারণত দুই ধরনের তিতির আছে সাধারণ ও কালো তিতির। ডিমের রঙ ঘন বাদামি, ছোট ছোট দাগ থাকে, লাটিম আকৃতিরও ছোট। পুরুষ তিতির মাথার মুকুট স্ত্রীর চেয়ে বড়। পায়ের রঙ কালচে। এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। প্রাকৃতিক খাদ্য খায় বলে খরচ অনেক কম। উন্নতমানের ঘর দরকার হয় না। ৬-৭ মাস বয়সে ডিম পাড়ে। বছরে ১০০-১২০টি ডিম দেয়। ৫-৬ মাসে বিক্রির উপযোগী হয়। ডিম ফুটাতে কৃত্রিমভাবে ইনকিউবেটরের মাধ্যমে ২৭-২৮ দিন সময় লাগে। প্রজনন মৌসুম মার্চ-অক্টোবর। বিদেশি গিনি ফাউল ও চিনা মুরগি নামে পরিচিত তিতির শোভাবর্ধনকারী পাখিগুলোর মধ্যে অন্যতম। সুস্বাদু মাংস ও ডিমের জন্য শত শত বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি পালিত হয়ে আসছে। আমাদের দেশে তিতির একটি শৌখিন পাখি। তবে বাণিজ্যিকভাবে তিতির খামার এ দেশে তেমন একটা গড়ে ওঠেনি।

তিতির পাখির আদি বাসস্থান আফ্রিকা মহাদেশে। আমাদের দেশে পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর পরিমাণে তিতির পাখি দেখা যায়। এরা বন্য প্রকৃতির। সাধারণত এদের পার্ল প্রজাতি, সাদা প্রজাতি ও ল্যাভেন্ডার এই তিন প্রজাতি হয়ে থাকে। তবে পার্ল প্রজাতি সবচেয়ে জনপ্রিয়। অল্পবয়স্ক তিতিরের মাংস নরম এবং অন্যান্য বন্য পাখি যেমন ঘুঘু, ডাহুক ইত্যাদি অপেক্ষা এদের মাংসে সুন্দর গন্ধ পাওয়া যায়। দেশের আবহাওয়ায় সাধারণত ফেব্রম্নয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ডিম পাড়ে। প্রতিটি ডিমের ওজন ৪০-৪৫ গ্রাম। দানাদার শস্য, কচি ঘাস, ভুসি, কুঁড়া, পোকা-মাকড়, সবজি এদের প্রধান খাদ্য।

তিতিরের তেমন কোনো রোগবালাই নেই। শুধু বাচ্চা ফোটার প্রথম দুই সপ্তাহ ভালোভাবে পরিচর্যা করলে পরবর্তী সময়ে মৃতু্যর হার নেই বললেই চলে। মুরগির চেয়ে এদের রোগবালাই কম হয়, ডিম বেশি পাড়ে, ওজন বেশি হয়, উৎপাদন খরচ কম ও দেখতে সুন্দর। এ জন্য তিতির পালন লাভজনক। দেশে বাণিজ্যিকভাবে এ পাখি পালনের যথেষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে।

সফল উদ্যোক্তা সুমন কর্মকার বলেন, ২০২২ সালে টিভিতে প্রথম দেখে মাত্র ৫টি তিতিরের বাচ্চা দিয়ে খামার শুরু করেন। এখন তার খামারে ৫০০ তিতির পাখি রয়েছে। এরা পরিবেশের সঙ্গে অনেক সংবেদনশীল। তাই বাড়িতে তিতির পালন করা খুব সহজ।

তিনি আরও বলেন, অনেক বড় বড় হোটেল ও রেঁস্তোরায় এই তিতিরের মাংসের বেশ কদর আছে। সব কিছু বাদ দিয়ে প্রতি মাসে অন্তত ৫০ হাজার টাকা আয় হয় তার। আর বেকারদের উদ্দ্যেশে বলেন, স্বল্পখরচে তিতির পাখি পালন করলে বেকার থাকতে হবে না। আর তিনি বিনা পয়সায় বেকার ভাইদের সহযোগিতা করবেন বলে জানান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে