বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
তবুও ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্য

মানিকছড়িতে কমেছে তামাক চাষ, বেড়েছে বালু উত্তোলন

মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি
  ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
মানিকছড়িতে কমেছে তামাক চাষ, বেড়েছে বালু উত্তোলন
খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে ক্ষত-বিক্ষত কৃষি জমি -যাযাদি

গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র (রুই জাতীয়) হালদা নদীর উজান খাগড়াছড়ি মানিকছড়িতে আবাদে চলছে বিষাক্ত তামাক চাষ ও ইজারা বহির্ভূত হালদা খালসহ পুকুর ও কৃষি জমি থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব। ফলে হুমকিতে পড়েছে জনস্বাস্থ্য এবং হালদার বুক ক্ষত-বিক্ষত হয়ে ধ্বংস হচ্ছে হালদার জীববৈচিত্র্য। এমন ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধে বছরের পর বছর বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়ভাবে নানা উদ্যোগ ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি গত এক দশকে।

জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে মানিকছড়ি উপজেলার ঘোরখানা, ছদুরখীল, বড়বিল, তুলাবিল, আছাদতলী ও যোগ্যাছোলার বিস্তীর্ণ সমতল কৃষি ভূমিতে দেড়শ'র অধিক প্রান্তিক কৃষক কোম্পানির প্রলোভনে পড়ে তামাক চাষ করে আসছিলেন। টানা দীর্ঘ কয়েক বছর হালদা নদীর উজানের দুইপাড়ে তামাক হয়ে আসার ফলে নষ্ট হচ্ছিল হালদা নদীতে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও জীববৈচিত্র্য এবং স্থানীয় জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ে। তামাক চুলস্নীতে লাকড়ির জোগান দিতে ধ্বংস করা হচ্ছে বনের গাছ, নানা রোগ বাসা বেঁধেছে শিশু ও বয়স্কদের মাঝে। এমন পরিস্থিতিতে হালদার জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও তামাক চাষিদের বিকল্প জীবিকায় সৃষ্টিতে ২০১৬ সাল থেকে স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইডিএফ ও পিকেএসএফ। উপজেলা প্রশাসন ও বেসরকারি সংস্থার কার্যকরী পদক্ষেপে হালদা উজানে কমে এসেছে তামাক চাষ। ১৫০ জন থেকে কমে এসে বর্তমানে নিবন্ধিত তামাক চাষি রয়েছেন মাত্র ৯ জন। ফলে হালদার চরে এখন চাষ হচ্ছে বিভিন্ন শাকসবজি। এতে জীববৈচিত্র্যে ফিরে এসেছে সজীবতা। কৃষিজীবীরা পেয়েছেন স্বাস্থ্যকর চাষাবাদের উপায়।

1

তামাক চাষি কামাল হোসেন ও সাইফুল ইসলাম জানান, 'তামাক চাষ করলে নিজের এবং পরিবারের নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা হয়। তা ছাড়া জমিতে অধিক পরিমান সার ব্যবহারের ফলে অন্যান্য ফসলও কম হয়। তাই তামাক চাষ ছেড়ে ধান ও অন্যান্য মৌসুমী সবজি চাষ করছি।'

এ দিকে হালদার উজানে বিষাক্ত তামাক চাষ কমে আসলেও কমেনি বালু খেকোদের আগ্রাসন। ২০১২ সাল থেকে উপজেলার যোগ্যাছোলা, গোদাতলী, গোরখানা, ছদুরখীল, বড়বিল, তিনঘরিয়াপাড়া, ডাইনছড়ি ও বাটনাতলী এলাকায় হালদা খাল ও আশপাশের কৃষি জমি, খাল ও ডোবা থেকে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে উত্তোলন করা হচ্ছে শত শত ট্রাক সাদা ও লাল বালু। ফলে হালদা নদীর যোগ্যাছোলা থেকে বাটনাতলী অংশের অধিকাংশ পাড়ই ক্ষত-বিক্ষত হয়ে আছে। নদীতে বিলীন হচ্ছে ফসলী জমি। উপজেলা গোরখানা, তুলাবিল ও বড়লি এলাকায় ৩টি পয়েন্টের ইজারা থাকলে অবৈধভাবে অন্তত শতাধিক পয়েন্টে প্রতিদিনই চলছে বালু উত্তোলনের কর্মযজ্ঞ। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত এইসব অবৈধ বালু মহালে অভিযান, জেল, জরিমান করে আসলেও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চলছে এসব বালু মহাল।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আফরোজ ভুঁইয়া বলেন, 'উপজেলায় মাত্র ৩টি বৈধ বালু মহাল রয়েছে। গোপনে যেসব স্থানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয়, সেখানে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জেল, জরিমানা ও বালু-মেশিন জব্দ করা হচ্ছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে