বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কালিয়ায় ও হোসেনপুরে টমেটো চাষে সফলতা

স্বদেশ ডেস্ক
  ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
কালিয়ায় ও হোসেনপুরে টমেটো চাষে সফলতা
কালিয়ায় ও হোসেনপুরে টমেটো চাষে সফলতা

নড়াইলের কালিয়ায় আগাম জাতের টমেটো চাষে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। অন্যদিকে, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে পলিনেট হাউসে চেরি টমেটো চাষে সাফল্য পেয়েছেন কৃষক। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-

কালিয়া (নড়াইল) প্রতিনিধি জানান, নড়াইলের কালিয়ায় ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের আওতায় টমেটো চাষ করেছেন রমজান খান। আগাম টমেটো চাষ করে দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় চারা রোপণের পর থেকে বর্তমানে টমেটো চাষে ব্যস্ত সময় পার করেছেন।

1

কালিয়া উপজেলার পৌরসভা বস্নকে ১নং ওয়ার্ডের ঘোষনাওরা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আগাম টমেটো চাষ করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নে রাত দিন ক্ষেতের পরিচর্যায় সময় পার করছেন রমজান। বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে পানি নিষ্কাশনের জন্য পলিমালসের মাধ্যমে চাষাবাদ করেছেন।

টমেটোচাষি রমজান খান বলেন, চলতি মৌসুমে ২৫ শতাংশ জমিতে গ্রীষ্মকালীন বাহুবলী জাতের ১০০০ টমেটো চারা রোপণ করেছেন। ভালো দাম পাওয়ার আশায় আগাম চাষ করেন। তার ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। চারার বয়স ৯৫ দিনের পরের থেকে টমেটো বাজারে বিক্রি করছেন। প্রথমে ১৮০ কেজি দরে বর্তমান খুচরা বাজারে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। যদি ৫০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি করেন তাহলে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা লাভ করতে পারবেন বলে তার আশা।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রুবেল হাওলাদার বলেন, মাঠ পর্যায়ে টমেটো চাষে নিরাপদ সবজি উৎপাদনে জৈব বালাইনাশক ব্যাবহারের পরামর্শের পাশাপাশি আগাম জাতের সবজি চাষের পরামর্শ দিচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইভা মলিস্নক জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উপজেলায় ২৫ শতাংশ জমিতে গ্রীষ্মকালীন বাহুবলী জাতের টমেটো চাষ করেছেন রমজান খান। কৃষি অফিস থেকে চাষিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিনামূল্যে বীজ, সার, কীটনাশকসহ নানা কৃষি উপকরণ ও প্রদর্শনী দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি টমেটো চাষের জন্য সব ধরনের পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া চাষিদের আগাম টমেটো ও বিভিন্ন সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে লালছে বর্ণের এক ধরনের সবজি। দেখতে অনুরূপ চেরি ফলের মতো। কিন্তু এগুলো চেরিফল নয়। চেরি জাতের এক ধরনের টমেটো। দেখতে সুন্দর, সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এ টমেটোর ফলনও হয়েছে দ্বিগুণ। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে পলিনেট হাউজে এ জাতের টমেটো চাষ করে সফলতা পেয়েছেন এখলাস উদ্দিন সবুজ নামে এক যুবক।

জানা গেছে, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় পলিনেট হাউস প্রর্দশনী বাস্তবায়নে কাজ করছেন এ যুবক। এবার চেরি টমেটো চাষ করেছেন তিনি। দেখতে চেরি ফলের মতো হওয়ায় এ টমেটোর চাহিদা অনেক। বাজারে উচ্চ মূল্য পাওয়া যায়।

চেরি টমেটো আকারে আঙুরের চেয়ে কিছুটা বড়। এ টমেটো কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে তা গাঢ় লাল ও কমলা রং ধারণ করে। সাধারণত ৯০ দিন পর ফলন পাওয়া যায়। এটি শীত প্রধান দেশের ফসল হলেও এ দেশের আবহাওয়াতেও ফলন হয়েছে আশানুরূপ। প্রতিটি গাছ থেকে সাত থেকে আট কেজি টমেটো ধারণা করছেন এ উদ্যোক্তা। অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের ফলে এর উৎপাদন খরচ কিছুটা বেশি।

সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও অনেক। বর্তমানে চেরি টমেটো স্থানীয় বাজারে কেজি প্রতি ১৫০-২০০ টাকা দরে বিক্রি করার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এই টমেটো চাষে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। উৎপাদন বেশি এবং বাজারে চাহিদা থাকায় অনেক লাভবান হতে পারবেন বলে জানালেন তিনি।

এ দিকে, তার চাষ পদ্ধতি ও ফলন দেখে আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে। প্রচুর ফলন হওয়ায় অন্য কৃষক ও বেকার যুবকরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

স্থানীয় যুবক মোজাম্মেল জানান, পলিনেট হাউজে শিক্ষিত কৃষক সবুজের বিভিন্ন জাতের বিদেশি সবজি চাষ এলাকার অন্য যুবকদের কৃষিতে আগ্রহী করে তুলছে।

কৃষক সবুজ জানান, এর আগেও তিনি ক্যাপসিকাম চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। এবার চেরি টমেটো চাষ করেছেন। তিনি আশাবাদী এসব উন্নত জাতের সবজি একসময় বিদেশে রপ্তানি করে দেশ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করবে।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুদাসিল হায়দার আলমগীর বলেন, উপজেলায় এ জাতের সবজি আগে তেমন চাষ হয়নি। কৃষক সবুজের এ চাষাবাদে সার্বক্ষনিক খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম শাহজাহান কবির বলেন, নতুন জাতের এই টমেটো চাষে স্থানীয় কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এ টমেটো উচ্চ ফলনশীল ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। কৃষি অফিস থেকে কৃষক সবুজকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে