বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
শায়েস্তাগঞ্জে খোয়াই নদীর বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ

নরসিংদীতে বেড়িবাঁধ না থাকায় মেঘনা গিলে খাচ্ছে ফসলি জমি

নরসিংদী ও শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
নরসিংদীতে বেড়িবাঁধ না থাকায় মেঘনা গিলে খাচ্ছে ফসলি জমি
নরসিংদীর রায়পুরায় বেড়িবাঁধবিহীন মেঘনা নদী -যাযাদি

ফসলের জন্য উর্বর পলিমাটির এক বিস্তৃত এলাকা মলিস্নকপুর। যেখানে প্রায় আড়াই হাজার মানুষের বসতি। নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার পলাশতুলী ইউনিয়নের এক নিভৃত পলস্নী এলাকায় অবস্থিত এই মলিস্নকপুর গ্রাম। গ্রামটির পূর্ব-দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মেঘনা নদী।

এই নদী তীরবর্তী পলিমাটিতে আবৃত উর্বর শত শত একর ফসিল জমি। যেখানে কৃষকেরা অনায়াসে ফসল উৎপাদন করতে পারেন। বিশেষ করে শস্য জাতীয় ফসল। আলু, শরিসা, বাদাম, পটল, বেগুন, পাটসহ নানা জাতের শাকসবজি এই উর্বর মাটিতে উৎপাদন হয়। মলিস্নকপুরবাসী এতে অনেক ধন্য।

1

কিন্তু এ এলাকার মানুষের একটাই দু:খ নদী ভাঙন। নদীর তীরে একটি বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতিবছর বহু ফসলি জমি নদীর পেটে বিলীন হয়। গত বুধবার বিকালে এই এলাকার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বহু কৃষকের ফসিল জমি নদীর ভাঙ্গনের কবলে রয়েছে এবং ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ফসিল জমি ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।

মলিস্নকপুর গ্রামের বাসিন্দা মাইন উদ্দিন ফকির জানিয়েছেন, গত পঞ্চাশ বছরে এই এলাকার অন্তত ৫০টি বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। তারা শেষ পর্যন্ত এলাকা ছেড়ে অন্যত্র বাড়ি করে বাস করছেন। তিনি জানান, গ্রামবাসীর এখন একটাই দাবি, একটি বেড়িবাঁধ। একটি বাঁধ তৈরি করলে এই এলাকার কৃষি জমি অনেকটাই রক্ষা পাবে। নয়তো এভাবেই বিলীন হয়ে যাবে ফসিল জমি।

এদিকে, শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় বন্যা থেকে রক্ষার জন্য খোয়াই নদীর বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এখনো মেরামত হয়নি। দুশ্চিন্তায় উপজেলার পৌরশহর ও ইউনিয়ন গুলো কয়েক হাজার মানুষ আতংকে রয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁধের অনেক স্থানে দুর্বল ও বন্যা সময় বাঁধের ভেতর থেকে পানি বের হয়। এমন কি কোনো বাঁধে দিকে ছোট- বড় গর্ত থাকলে ও দেবে গেছে। গত আগস্ট মাসে ভারত থেকে নেমে আসা বন্যা পানি খোয়াই নদীর পানি কোনো স্থানে পানি পড়ে এবং প্রচুর পরিমাণ বালুর বস্তা দিয়ে আটকিয়ে রাখা হয়।

শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা পৌর শহর ও ইউনিয়নবাসী সারারাত অশান্তি ও কেউ না ঘুমিয়ে সারারাত খোয়াই নদীর বাঁধ পাহাড়া দিচ্ছে। বাঁধের উপর দিয়ে পৌরবাসীসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নবাসী লোক জন ও স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা ছাত্র চলাচল করে।

খোয়াই নদীর পাশে আশ্রয়ণ প্রকল্পে অর্ধ শতাধিক লোক জন বসবাস করছেন। ৪ মাস ধরে খোয়াই নদীর বাঁধ মেরামত না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপজেলাবাসী। এ দিকে শায়েস্তাগঞ্জে খোয়াই নদীর বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ে মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে বাঁধের পাশে বসবাসকারীরা জানান।

ঝুঁকিপূর্ণ স্থান দিয়ে খোয়াই নদীর বাঁধ ভেঙে গেলে সরকারি অফিস, বেসরকারি অফিস, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, হাটবাজার, রেলওয়ে স্টেশন, মাজার শরীফ, মসজিদ, পুকুর-দীঘির মাছ, কৃষিজমি ও ঘরবাড়ি তলিয়ে যাবে। এতে কয়েক হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হবে।

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হাবিবুর রেজা বলেন, শায়েস্তাগঞ্জ খোয়াই নদীর বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশে মেরামত করার জন্য নকশা প্রণয়ন হচ্ছে। দরপত্র আহবান করে আগামী এক মাসের মধ্যে মেরামত কাজ শুরু হবে।

এ দিকে সরকারিভাবে খোয়াই নদী থেকে বালু উওোলন জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে সরকারিভাবে দরপত্র আহবান করে এবং দরপত্র আহবান করে ইজারাদার খোয়াই নদী থেকে বালু উত্তোলনের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এসব বালু নদী থেকে উত্তোলন করায় নদী গভীর হওয়ায় বাঁধ ভেঙে যায়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে