বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভূঞাপুরে পলিথিনের ঘরে এক দম্পত্তির মানবেতর জীবন

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
  ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ভূঞাপুরে পলিথিনের ঘরে এক দম্পত্তির মানবেতর জীবন
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে পলিথিনে মোড়ানো অভিরাম ও অসুস্থ প্রতিবন্ধী শ্যামলী রাণীর বসত ঘর -যাযাদি

টাঙ্গাইালের ভূঞাপুরে পলিথিনে মোড়ানো ঘরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন অভিরাম (৬২) ও অসুস্থ এবং প্রতিবন্ধী শ্যামলী রাণী (৫৫) দম্পত্তি। পলিথিনে মোড়ানো ছাপড়া ঘরটিতে দীর্র্ঘকাল বসবাস করছেন তারা। পোঁকা-মাকড়ের আতঙ্ক থাকলেও সেখানেই দুই বছর ধরে বসবাস করছেন এই ভূমিহীন অসহায় দম্পত্তি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পরিত্যক্ত একটি পুকুর পাড়ের বাঁশঝাড়ে নিচে গ্রামের প্রতিবেশিদের সহযোগিতায় ৬টি টিন ও শোলার (পাটখড়ি) বেড়া দিয়ে ছাপড়া তুলে বসবাস করছেন উপজেলার চরনিকলা গ্রামের পূর্ণ সরকারের ছেলে অভিরাম সরকার। ছাপড়ার পাশেই একটি মাটির রাস্তা। ওই রাস্তা দিয়ে আশপাশের মানুষজন চলাচল করে। টিন জং ধরায় পলিথিন মোড়ানো হয়েছে চালে যাতে বৃষ্টিতে ঘরে পানি না পড়ে। তারপরও বৃষ্টি হলে পানি পড়ে অভিরামের পাটখরির ঘরে। এছাড়া রাস্তার পাশে ছাপড়া থাকায় পলিথিন দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে। মাটির তৈরি পাট দিয়ে টয়লেট থাকলেও সেটি পলিথিনে মোড়ানো। অসুস্থ্য প্রতিবন্ধি স্ত্রী শ্যামলীকে রেখেই কাজে যেতে হয় অভিরামকে।

1

জানা গেছে, অভিরাম সরকার ও শ্যামলী দম্পত্তির ঘরে চৈতন্য নামের এক ছেলে এবং ও গৌড়ি নামের এক মেয়ে রয়েছে। বাড়ির জায়গা-জমি বিক্রি কওে ২০০৪ সালে স্বপরিবার ভা তে পাড়ি জমান। সেখানে জায়গা কিনে কাজ করে ছেলে মেয়েদের বড় করেন। মেয়েকে বিয়ে দেন সেখানেই। এরপরই হঠাৎ একদিন তার স্ত্রী শ্যামলী বিদু্যৎস্পৃষ্টে গুরুত্বর আহত হন। সঠিক চিকিৎসা না হওয়ায় ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে তিনি শ্রবণশক্তি হারান ও শারীরিক প্রতিবন্ধি হয়ে পড়েন। পরে বিগত প্রায় ১০ বছর আগে ভারতে থাকা বাড়ি ও ছেলেকে রেখে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে দেশের বাড়ি চলে আসেন। কারণ ছেলে বিয়ে করায় বৃদ্ধ বাবা-মাকে আর ভোরণপোষণ দেয় না। সহায়-সম্বল না থাকায় দেশের বাড়িতে এসে বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। কিন্তু সর্বশেষ দুই বছর আগে কোনো জায়গা না পেয়ে এক আত্মীয়ের পুকুর পাড়ের বাঁশ ঝাড়ের নিচে একটি ছাপড়া ঘর তুলে এলাকার লোকজনের আর্থিক সহায়তায়। বর্ষার সময় পুকুর ভরাট হলে পানিতে তলিয়ে যায় তার পলিথিনের মোড়ানো ছাপড়া ঘরটি। এলাকায় তিনি মাছ কিনে বিক্রি করে যা উপার্জন করেন তাতে সংসার চলে না। তার উপর আবার স্ত্রীর ওষুধ কিনতে হয়। তার ছেলে ও মেয়েরাও খোঁজ নেয় না বৃদ্ধ বাবা-মাকে। ফলে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

চরনিকলা গ্রামের হালিম মিয়া বলেন, আড়া-জঙলে এভাবে মানুষ বসবাস করে না এই যুগে। কষ্ট কি সেটা তাদের দেখলেই বোঝা যায়। তার ছাপড়া ঘরটি এলাকার মানুষের আর্থিক সহায়তায় হয়েছে ঠিকই কিন্তু সেটা চিরস্থায়ী না। বৃষ্টির হাত থেকে বাচঁতে পলিথিন দেয়া হয়েছে। মাছ বিক্রি করে যে কয়টা উপার্জন হয় তাকে তার স্ত্রীর ওষুধ কেনা যায় না খাবে কি। এমন ভূমিহীনকে সরকার যেন সহায়তা করে।

অভিরাম সরকার বলেন, 'আমার বড় ভাইও পরিবারসহ ভারতে চলে গিয়েছে। সেই সুবাদে আমিও ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে চলে গিয়েছিলাম। বেশ কয়েকজন সেখানে থাকার পর দেশে এসেছি। ছেলেকে বড় করলেও মানুষ করতে পারিনি। উপার্জন করতে না পারায় ছেলের বউ ভাত দিতে চায় না। তাই অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে দেশে চলে আসি। থাকার জায়গা না পেয়ে পুকুর পাড়েই আছি। এই বয়সে তেমন কাজ করতে পারি না। হাট-বাজার থেকে মাছ কিনে এনে গ্রামের বাজারে বিক্রি করি। তাতে সংসার চলতে চায় না। তবে স্ত্রী যদি সুস্থ থাকতো তাহলে কষ্ট কিছুটা হলেও কম হতো। চিরনিকলার সাবেক ইউপি সদস্য মোকলেছুর রহমান জানান, অভিরামের মত অভাবী মানুষ নেই দেশে। তার স্ত্রীর একটা প্রতিবন্ধি কার্ড করে দিয়েছিলাম পরিষদ থেকে মেম্বার থাকার সময়। এখন তার খুবই অভাব। সরকার যদি অসহায় ওই ভূমিহীন দম্পত্তিকে একটা থাকার ঘর দেয় তাহলে তারা নিরাপদে থাকতেন।

অলোয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম হাসান বলেন, অসহায় ওই পরিবারের জন্য ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক সহযোগিতা করার পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে