রোববার, ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রমেক হাসপাতালে ক্যাথল্যাবে নতুন মেশিন সংযোজন

চিকিৎসায় ভারতে যেতে না পেরে সরকারি হাসপাতালে হৃদরোগীদের ভিড় বাড়ছে
আবেদুল হাফিজ, রংপুর
  ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
রমেক হাসপাতালে ক্যাথল্যাবে নতুন মেশিন সংযোজন

বর্তমানে আছে তিনগুণের বেশি হৃদরোগ রোগিদের চাপ, মেয়াদোত্তীর্ণ মেশিন, জনবল সংকট, নেই অধ্যাপক পদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, টেকসিশিয়ান ও ঝুঁকি ভাতা। বিকল হয়ে আছে মনিটর, অক্সিজেন লাইন, ইকোকার্ডিওগ্রাম, সিসি ক্যামেরা। এমন পরিস্থিতিতে ক্যাথল্যাবে নতুন মেশিন সংযোজন করা হচ্ছে। এমন চিত্র বিরাজ করছে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ ও ক্যাথল্যাবের চিকিৎসা সেবায়।

রংপুর ভিসা আবেদন কেন্দ্র সূত্র জানায়, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে টানাপোড়েন। এ অবস্থায় ভারত সরকার বাংলাদেশের মধ্যে পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। রাজশাহীর ভিসা সেন্টারে মেডিকেল ভিসায় সীমিত সংখ্যক রোগী চিকিৎসার জন্য ভারতে যেতে পারলেও ভ্রমন ভিসা একদম বন্ধ রয়েছে। তবে রংপুর ভিসা আবেদন কেন্দ্র থেকে ভিসা দেওয়া পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ফলে রংপুরের রোগি ও ভ্রমন বিলাসীরা নানা সমস্যায় পড়েছেন।

1

সূত্র মতে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগে রংপুর ভিসা আবেদন কেন্দ্রে প্রতিদিন দেড়শ আবেদন জমা পড়ত। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ মেডিকেল ভিসা। এখন রংপুর ভিসা কেন্দ্রে ভিসা দেওয়া হচ্ছেনা। এতে করে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া রোগীরা বাধ্য হয়ে দেশের সরকারি মেডিকেল হাসপাতালগুলোতে স্বল্প খরচে চিকিৎসা নিতে ভিড় করছেন। এর মধ্যে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অন্যতম।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে ঠাঁই নেই অবস্থা। পুরাতন ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ২৪টি ও নতুন ৩৬ ওয়ার্ডে সিসিইউতে ১০টিসহ ৫৩টি শয্যা রয়েছে। তার বিপরীতে রোগি রয়েছে তিনগুনের বেশি। এর পাশাপাশি প্রতিদিন সেখানে ৪০ থেকে ৫০ জন রোগি যোগ হচ্ছেন। অনেকেই শয্যা না পেয়ে হাসপাতালের মেঝেতেই বিছানা পেতেছেন। রোডিগর গাদাগাদিতে কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারী ও রোগির স্বজনদের এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যেতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। স্বল্প জনবলের কারণে চিকিৎসক ও কর্মচারীদের উপর পড়ছে অতিরিক্ত চাপ। এ জন্য দ্বিগুণ জনবল প্রয়োজন।

হৃদরোগ বিভাগ সূত্র জানায়, বর্তমানে এই বিভিাগে সহযোগি অধ্যাপক পদে ১ জন সহকারী অধ্যাপক ২ জন রেজিস্ট্রার ১ জন ও সহকারী রেজিস্ট্রার রয়েছেন ৪ জন। সূত্র মতে, অধ্যাপক পদের কেউ না থাকায় রংপুর মেডিকেল কলেজে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট (এমডি) কোর্স চালু হচ্ছেনা। একারণে হৃদরোগে যথাপোযুক্ত চিকিৎসা পাচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিকৎসকরা। তাদের জায়গায় ডিপেস্নামার ৩ ছাত্র দিয়ে কাজ চলছে। এছাড়াও স্থায়ীভাবে মিড লেবেল চিকিৎসক প্রয়োজন ১০ জন। স্থায়ী ফলে মেডিকেল অফিসার, রেজিস্ট্রার ও সহকারী রেজিস্ট্রাররা হৃদরোগ বিভাগে বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠার প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। টেকনিশিয়ান না থাকায় অন্যবিভাগ থেকে একজনকে ধার করে এনে কাজ চালানো হচ্ছে। তারা স্থায়ীভাবে মিড লেবেল ডাক্তার ও টেকনিশিয়ান দেওয়ার দাবি জানান।

রমেক কার্ডিওলজির সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার মো. আবু জাহিদ বসুনিয়া, ডা. হাসানুল আলম ও সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, তারা ক্যাথল্যাবে এনজিও গ্রাম, পেসমেকার ও রিং বসানো কাজ করে থাকেন। এদের মধ্যে রিং বসানো কাজ বেশি করেছেন ডা. মাহবুবুর রহমান। তারা জানান, নতুন মেশিন স্থাপন করা হলে জনবলের সংখ্যা দ্বিগুণ বাড়াতে হবে। বর্তমানে সোম, মঙ্গল ও বুধবার ক্যাথল্যাবে কাজ হচ্ছে। নতুন মেশিনে সপ্তাহে ৫ দিন ক্যাথল্যাবে কাজ চলবে।

জানা গেছে, ক্যাথল্যাবের মেশিনটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে ১২ বছর আগে। ওই মেশিনে কাজ করতে গিয়ে নস্ট হচ্ছে বার বার। ফের মেরামত করে ফের চালু করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় বদৌলতে ক্যাথল্যাবের জন্য জাপানের তৈরি অত্যাধুনিক মেশিন আনা হয়েছে। এই মেশিনটি চালু করতে পর্যাপ্ত সময়ের প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন পরিচালক।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. আশিকুর রহমান জানান সরকারি যন্ত্রপাতি ক্রয়করা প্রতিষ্ঠান সিএমএসডি থেকে মেশিনটি বরাদ্দ আনা হয়েছে। মেশিনটি স্থাপন হওয়ার পর রোগীর চাপ আরো বাড়ার সাথে জনবল আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে