সোমবার, ২৬ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কিশোরগঞ্জে বোরোর লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
  ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
কিশোরগঞ্জে বোরোর লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন
কিশোরগঞ্জের হাওড়াঞ্চলে বোরো ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত কৃষক -যাযাদি

কিশোরগঞ্জের হাওড়াঞ্চলে বোরো ধান আবাদের ধুম লেগেছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। এবার ডিজেল ও সার-কীটনাশকের দাম গতবারের চেয়ে বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

চলতি মৌসুমে কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চলে এক লাখ চার হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসেবে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৭ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিকটন। সরকার নির্ধারিত দামে বাজার মূল্য হবে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা।

1

কিশোরগঞ্জ হাওরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কেউ বোরো ধানের চাড়া রোপণে ব্যস্ত। আবার কেউ জমিকে চাড়া রোপণের উপযোগী করে তোলতে কাজ করছেন। কেউ ব্যস্ত বীজতলা থেকে চাড়া উত্তোলনে। প্রতিবছর এ মৌসুমে বোরো ধানের আবাদ নিয়ে এমন কর্মব্যস্তার দেখা মিলে কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে। ইতিমধ্যে হাওড়ের প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে চাড়া রোপণ শেষ। খুব দ্রম্নতই বাকি জমিতে রোপণ শেষ হবে। তবে, সার, ডিজেল, কীটনাশকের দাম বেশি থাকায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় সরকারিভাবে ধানের দাম বাড়ানোর দাবি কৃষকের।

মিঠামইন হাওরের কৃষক জমির উদ্দিন বলেন, ত্রিশ কাঠা জমি রোপণ করছেন। এখন, সার ও ডিজেলের দাম বেশি। সরকার যদি কমিয়ে দিতো তাহলে পুষে যেত। ইটনা হাওরের কৃষক কামাল মিয়া বলেন, অর্ধেক জমি রোপণ শেষ। এখন জিনিসের দাম বাড়তি, সে তুলনায় ধানের দাম কম। এ বছর জমিগুলো আগাম রোপণ করে ফেলছেন। আবহাওয়া ভালো, এবার আগাম বন্যা না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

অষ্টগ্রাম হাওড়ের কৃষক আলতু মিয়া বলেন, এবার হাওড়ের পানি সময়মত নেমেছে। হালচাষ করে চাড়া রোপণ করছেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে আশা করা যায় ফসল ভালো হবে।

হাওড়াঞ্চলসহ সমস্ত জেলায় বোরো আবাদে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে পাশে থাকার কথা জানালেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ।

তিনি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। যদি বৈরী আবহাওয়া না হয় আশা করছি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। আবহাওয়া এ মূহুর্তে অনুকূলে আছে এবং এবার হাইব্রিড ধানের চাষ বাড়ছে। আমরা চলিস্নশ হাজার কৃষককে দুই কেজি করে বীজধান এবং সার বিতরণ করেছি। কৃষি উপকরণ যাতে পর্যাপ্ত হয়, কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্যে কিনতে পারে, সে জন্য সার্বক্ষণিক মনিটরিং অব্যাহব আছে। সব মিলিয়ে এবার বাম্পার ফলনের আশা হাওড়ে।'

আজমিরীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, আজমিরীগঞ্জে উপজেলার বিভিন্ন হাওরে বোরো ধান আবাদ শুরু হয়েছে। কনকনে শীত ও হিমেল হাওয়াকে উপেক্ষা করে কৃষকেরা ভোর সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সরেজমিনে বিভিন্ন হাওড়ে গিয়ে দেখা যায়, জমি তৈরি, হালচাষ ও বীজতলা থেকে চারাগাছ উঠানো শেষে পুরোদমে রোপণের কাজ করা হচ্ছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আবাদে তেমন সমস্যা হবে না। ভোরের আলো ফোটার পরই কৃষক শ্রমিক দল বেঁধে যাচ্ছেন ফসলের মাঠে। বীজতলা থেকে চারা উত্তোলনের কাজ করছে নারীরা। কোথাও দেয়া হচ্ছে পানি সেচ। দীর্ঘ দৃষ্টিতে মাঠের দিখে তাকালে এক মহাযজ্ঞের দেখা মিলে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৬২৫ হেক্টর।

এদিকে কৃষকরা জানান, রোপা আমনে আশানুরূপ ফলন ও ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় বোরো আবাদে তেমন সমস্যা হচ্ছে না। ভালো ফলনের আশা নিয়ে স্বপ্ন বুনছেন তারা।

কৃষক হানিফ মিয়া, সন্ধিপ দাস ও রুবেল মিয়া বলেন, বোরো ধান আবাদে দিন-রাত পরিশ্রম করতে হচ্ছে। আমনের চেয়ে বোরো আবাদের খরচ বেশি। লাগানোর পর থেকে অনেক যত্ন ও পরিচর্যা করতে হয়। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে ভালো ফলনের আশাবাদী তারা। ভালো মূল্য পেলে লাভবান হবেন বলেও কৃষকরা জানান।

আজমিরীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফে আল মুঈজ বলেন, গতকয়েকদিন আগে আনুষ্ঠানিকভাবে বোরো রোপণ শুরু হয়েছে। আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূলে থাকলে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে এবার। এ জন্য কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে