বান্দরবান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলীর পদ এক মাস ধরে রয়েছে শূন্য। এতে প্রতিষ্ঠানটির জেলা সদরসহ উপজেলা পর্যায়ে ব্যাহত হচ্ছে উন্নয়ন কাজ। আটকা পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ শতাধিক কাজের ফাইল। এ অবস্থায় চলমান প্রকল্পগুলো সময়মতো শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঠিকাদাররা। এ ছাড়াও অফিস প্রধান না থাকায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে অধিদপ্তরের বিভিন্ন কার্যক্রমে।
সংশ্লিষ্ট অধিপ্তরের সূত্রে জানা যায়, গত ৬ নভেম্বর নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মো. জিয়াউল ইসলাম মজুমদার অন্যত্র বদলী হয়ে চলে যান। সেই থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে শূন্য রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এ পদটি। তবে শূন্য পদটিতে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পাশের জেলা রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ শফিকে। কিন্তু পার্বত্য এলাকা হওয়ায় এবং নিজ দপ্তরে কাজের চাপ থাকায় সপ্তাহে একদিনও আসেন না তিনি। এতে একটি জেলার সব কাজ সামলানো তার পক্ষে করা সম্ভব হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও ঠিকাদারদের অভিযোগ, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সবকিছু জানার পরও এ জেলায় নতুন নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে না।
অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলা-উপজেলায় ব্রিজ-কালভার্ট, রাস্তা, সুইচগেইট ও ভবনসহ দেড়শ' কোটির টাকার নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু এসব কাজের বিল, জামানত সময়মতো উঠাতে পারছেন না ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে জেলার নানা উন্নয়ন কাজ।
গত ২৭ ডিসেম্বর বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় সজেমিনে গিয়ে দেখা যায়, পান বাজারের চম্পক পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘেঁষে সেন মেরীজ স্কুল এন্ড কলেজ হয়ে বটতলী পাড়া রাস্তা পর্যন্ত সড়ক পাকাকরনের কাজ চলছে। সড়ক নির্মাণ কাজে নিয়োজিত থাকা মিস্ত্রি নাজিম উদ্দিন ও মামুন জানান, এ ধরনের নির্মাণ কাজে কম হলেও ২২ থেকে ২৪ জন শ্রমিক থাকার কথা। কিন্তু ঠিকাদারের আর্তিক সমস্যার কারনে তারা ৬ জন কাজ করছেন।
আলীকদমের মিশন পাড়ার বাসিন্দা গ্রেনার ত্রিপুরা জানান, এখানে দেড় কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের কাজ চলছে। সরকার পতনের আগে থেকে সড়কের ইটগুলো তুলে ফেলা হয়েছিল। এরপর দীর্ঘদিন কাজ ফেলে রাখেন ঠিকাদার। এতে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করা এখানকার বাসিন্দারা নানা ভোগান্তিতে পড়েছেন।
তিনি আরও জানান, রাস্তার কাজে প্রকৌশলীদের তদারকি করতে দেখেননি কোন সময়। ফলে ঠিকাদাররা নিজেদের মত করে কাজ করছে বলেও অভিযোগ তার।
রেইছা এলাকার বাসিন্দা মংপুসে মারমা জানান, রেইছা-গোয়ালিয়া খোলা সড়কের পাশে চলছে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সুইচগেইট নির্মাণের কাজ। নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের পাথর, স্থানীয় বালু ও নিম্নমানের রড। ঢালাইয়ের কাজে ঠিকাদার নিজের মতো করে কাজ করছেন, দেখার কেউ নেই। অফিস থেকে কয়েকজন পরিদর্শনে আসলেও কিছুক্ষণ থেকে তারা চলে যান। কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে মাসে এক দিনও দেখতে আসেননি নির্বাহী প্রকৌশলী।
বান্দরবানের স্থানীয় ঠিকাদার আনিসুর রহমান সুজন জানান, এলজিইডি'র অর্থায়নে তার কয়েকটি কাজ চলছে। কিন্তু নির্বাহী প্রকৌশলী না থাকায় চলমান কাজের বিল পাচ্ছেন না। তাই আর্থিক সংকটে বাধ্য হয়ে কাজগুলো বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে বান্দরবান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সিনিয়র প্রকৌশলী পাভেজ সরওয়ার হোসেনকে বেশ কয়েকবার মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে সহকারী প্রকৌশলী জয় সেন বলেন, জেলায় প্রায় দেড়শ' কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলীর অনুপস্থিতিতে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। তবে দেড়মাস পর্যন্ত তারা কোন ঠিকাদারকে বিল দিতে পারছেন না। তবুও কাজের গুণগত মান নিয়ে কোনো আপস করা হচ্ছে না।
রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী ও বান্দরবানে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহমেদ শফি বলেন, দুই জেলার দায়িত্ব পালন করা খুবই কষ্টকর। তবে ঠিকাদাররা যেহেতু অনেকদিন ধরে চলমান কাজের বিল নিতে পারছেন না, সেহেতু তিনি বান্দরবানের সিনিয়র প্রকৌশলীকে চলমান কাজগুলো পরিদর্শন করে বিল তৈরির জন্য বলেছেন। কাজের মান ঠিক থাকলে ঠিকাদারদের বিল দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, এ পদে অচিরেই অভিজ্ঞ প্রকৌশলী আসছেন। আশা করছেন শিগগিরই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।