সোমবার, ২৬ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ সমাধিস্থল কসবার 'কোলস্না পাথর'

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ সমাধিস্থল কসবার 'কোলস্না পাথর'
মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ সমাধিস্থল কসবার 'কোলস্না পাথর'

মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ সমাধিস্থল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার কোলস্না পাথর। এ সমাধিস্থলে ৫০ জন বীর শহীদকে সমাহিত করা হয়েছে। উপজেলার সীমান্তবর্তী বায়েক ইউনিয়নে অবস্থিত সমাধিস্থলটি।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় উপজেলার ২নং সেক্টরের আওতাভুক্ত ছিলো। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা সীমান্তে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থাকায় এখানে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমন বেশি হতো। ফলে বায়েক ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকতো লাশ। তাদের ঠিকমতো দাফন করা হতো না।

1

তখন এখানে স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল করিম ও তার পরিবারের লোকজন পরিচয়হীন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ এনে গোসল ও জানাজা শেষে কবর দেন। কোলস্না পাথর শহীদ সমাধিস্থলে বীর বিক্রম, বীর উত্তম ও বীর প্রতীকসহ ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদের লাশ দাফন করা হয়। পরে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল করিম ও তার স্ত্রী মারা গেলে তাদের লাশও এই সমাধিস্থলে দাফন করা হয়। মহান স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে শহীদদের আত্মীয়-স্বজনদের আগমন ঘটে এখানে।

সরজমিনে দেখা যায়, সীমান্তবর্তী এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত কোলস্না পাথর শহীদ সমাধিস্থল। সমাধিস্থলের সামনে একটি মাঠ ও রেস্ট হাউস, মসজিদ ও হাতের ডান পাশে সুসজ্জিত পুকুরঘাট। সমাধিস্থলটি পাহাড়ের ওপর অবস্থিত। কোলস্না পাথরে সারিবদ্ধভাবে নাম-ঠিকানা অনুসারে শহীদের কবর সাজানো রয়েছে। দর্শনার্থীরা খুব সহজেই শহীদের পরিচয় সম্পর্কে জানতে পারছেন। কেউ পরিবার-পরিজন, অনেকে বন্ধু-বান্ধব মিলে ঘুরতে আসেন এখানে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোলস্না পাথর সমাধিস্থল দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল করিম। কোলস্না পাথরের সমাধিস্থলটা ছিল তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। স্মৃতিসৌধের জন্য তাদের পরিবার ৬৫ শতাংশ জায়গা দান করে। ১৯৭২ সালে এ সম্পত্তি সরকারকে দান করেছেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল করিমের পিতা আব্দুল মান্নান। পিতার মৃতু্যর পর থেকে আব্দুল করিম এ সমাধিস্থল দেখাশুনা করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল করিম এবং তার আত্মীয়রা মিলে ৫০ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার লাশ সংগ্রহ করে এখানে দাফন করেন। ৫ ডিসেম্বর এ এলাকা হানাদারমুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধের পর তৎকালীন জেলা প্রশাসক কোলস্নাপাথর শহীদের স্মৃতিজড়িত কবর চিহ্নিত করে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেন। ১৯৮০ সালে সেখানে একটি কাঠের তৈরি রেস্টহাউজ হয়। পরে কোলস্নাপাথরে গড়ে উঠে স্মৃতিসৌধ, মসজিদ, রেস্টহাউজ, সীমানা প্রাচীর ও পুকুরঘাট। প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ এ কাজ বাস্তবায়ন করে।

কসবা উপজেলার কামালপুর গ্রামের বাসিন্দা রনি হোসেন জানান, এটি মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মৃতি বিজরিত এলাকা। এটি উপজেলার একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিত।

কোলস্না পাথর সমাধিস্থল দেখতে আসা শাহানা বেগম জানান, 'এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সমাহিত করা হয়েছে। মাঝে মধ্যে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এই সমাধিস্থলে মুক্তিযোদ্ধাদের কবর দেখতে আসি।'

অভিষেক রায় জানান, এ জায়গাটি দান করেছেন কোলস্নাপাথর এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল করিম। ২০২০ সালের করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। এখানে প্রতিদিনই দূর দূরান্ত থেকে অনেক লোক ঘুরতে আসেন। তবে শুক্র ও শনিবারে পর্যটকদের বেশি ভিড় থাকে।

খাড়েরা এলাকার টিপু মিয়া জানান, এটি একটি ঐতিহ্যবাহী জায়গা, তাই এলাকায় ঘুরতে আসা। ১৯৭১ সালের অনেক শহীদের স্মৃতি বিজড়িত একটি জায়গা। এর পাশে বড় একটিসহ আরও কয়েকটি ছোট পাহাড় রয়েছে। পাহাড়গুলো সমাধিস্থলটিকে খুবই অপরূপ রূপে সাজিয়েছে। তাই এই পাহাড় ও সমাধিস্থল দেখতে পর্যটকদের খুব ভিড় হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহর থেকে কোলস্না পাথর সমাধিস্থলের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। জেলা শহরের কাউতলী থেকে বাস বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা যোগে কসবা। এরপর আবার অটোরিকশা করে নয়নপুর বাজার। নয়নপুর বাজার থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা করে কোলস্না পাথর সমাধিস্থল খুব সহজে যাতায়াত করা যায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে