সোমবার, ২৬ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
নতুন দিগন্তের উন্মোচন

নতুন বছরেই শুরু হচ্ছে বে-টার্মিনাল প্রকল্প!

সাশ্রয়ী টার্মিনাল সুবিধায় কার্যক্রমের গতি বাড়বে তৈরি হবে সাড়ে ১৩ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ
সন্‌জীব নাথ, চট্টগ্রাম
  ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
নতুন বছরেই শুরু হচ্ছে বে-টার্মিনাল প্রকল্প!
চট্টগ্রাম বন্দরে বে-টার্মিনাল নির্মাণ -ফাইল ফটো

সরকার নতুন বছরেই চট্টগ্রাম বন্দরে বে-টার্মিনাল নির্মাণ শুরু করার পরিকল্পনা করছে। গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটি দেশের প্রধান বাণিজ্যিক গেটওয়ের ক্ষমতা ছয়গুণ বাড়াতে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি হবে দেশের প্রথম সবুজ বন্দর, যেখানে ৩০ শতাংশ এলাকা বনায়নের জন্য বরাদ্দ থাকবে। এ পরিমাণ বনায়ন বন বিভাগের পরিকল্পিত ৫১ একরের চেয়েও বেশি। সব মিলিয়ে, বে টার্মিনাল দেশের জন্য একটি নতুন দিগন্তের উন্মোচন করতে যাচ্ছে। এটি রপ্তানি বাড়াবে এবং আধুনিক, সাশ্রয়ী টার্মিনাল সুবিধা দিয়ে কার্যক্রমের গতি ও দক্ষতা বৃদ্ধি করবে।

এ প্রকল্পের আওতায় সাত কিলোমিটার ন্যাভিগেশনাল এক্সেস চ্যানেল এবং ছয় কিলোমিটার ব্রেকওয়াটার নির্মাণের জন্য প্রথম বিস্তারিত প্রকল্প পরিকল্পনা (ডিপিপি) চূড়ান্ত অনুমোদনের কাজ চলছে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিশেষ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে জানানো হয়েছে, অন্যান্য ডিপিপি তৈরি সম্পর্কিত কাজও চলমান রয়েছে।

1

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, এক্সেস চ্যানেল প্রস্তাবটি ২০২৫ সালের জানুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।

গত জুন মাসে বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ৬৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে। সরকার ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য দ্রম্নত ডিপিপি প্রস্তুত করতে আগ্রহী।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ফাওজুল কবির খান গণমাধ্যমকে জানান, বিশ্বব্যাংক ইতোমধ্যে ৬৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে। সরকার ডিসেম্বরের মধ্যে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করার পরিকল্পনা করলেও কিছু বিলম্ব হয়েছে। চুক্তি দ্রম্নত চূড়ান্ত করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কার্যক্রম গতিশীল করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ফাওজুল কবির জানান, জানুয়ারিতে একনেকের অনুমোদন পাওয়ার পর নতুন বছরে প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হবে।

এদিকে, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা যায়, ্তুসরকার সময়মতো বিশ্বব্যাংকের ঋণ গ্রহণ করতে দ্রম্নত প্রস্তাবগুলো তৈরি করছে। বিশ্বব্যাংকও চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য তাগাদা দিচ্ছে এবং প্রকল্পটি নিয়ে অত্যন্ত আগ্রহী। এমনকি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ যে টার্মিনাল ৩ নির্মাণ করবে, তাতেও অর্থায়নের প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রকল্পে বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করেছে।্থ

২০১৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের সম্প্রসারণের জন্য বে টার্মিনাল নির্মাণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। একই বছর জার্মান প্রতিষ্ঠান হ্যামবুর্গ পোর্ট কনসাল্টিং একটি প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করে। ২০১৭ সালে বিস্তারিত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং মাস্টারপস্ন্যান তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালে কোরিয়ান কোম্পানি কুনহওয়া সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং মাস্টারপস্ন্যান তৈরির কাজ সম্পন্ন করে। চূড়ান্ত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।

সম্ভাব্যতা সমীক্ষার ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ পুরো বে-টার্মিনাল প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ২.৮ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করেছে। এতে তিনটি টার্মিনাল, অ্যাক্সেস চ্যানেল এবং ব্রেকওয়াটার নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এ ব্যয়ের মধ্যে টার্মিনাল ১ এবং টার্মিনাল ২-এর প্রতিটির জন্য ৬০৯.৪৪ মিলিয়ন ডলার এবং টার্মিনাল ৩ নির্মাণে ৭৫৫.১১ মিলিয়ন ডলার খরচ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া, ন্যাভিগেশনাল এক্সেস চ্যানেল এবং ব্রেকওয়াটার নির্মাণে ৮৩১ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে। টার্মিনাল ৩ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করবে। বাকি দুটি টার্মিনাল পিপিপি মডেলের আওতায় নির্মাণ করা হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পিএসএ সিঙ্গাপুর একটি টার্মিনাল নির্মাণে আগ্রহ দেখিয়েছে, তবে তাদের অংশগ্রহণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি। গভীর সমুদ্রবন্দর, রেল ও অভ্যন্তরীণ সুবিধাসহ ২৬টি দেশে টার্মিনাল পরিচালনা করা পিএসএ বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম পোর্ট অপারেটরগুলোর একটি।

এই প্রকল্পে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে, যা দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, অভ্যন্তরীণ নৌপথ এবং রেলপথের সঙ্গে সংযোগ থাকার ফলে বে টার্মিনাল লজিস্টিক কার্যক্রমের দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করবে। ২০৪০ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম কন্টেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) এবং নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)-এর কার্যক্ষমতা শেষ হয়ে গেলে বে টার্মিনাল চট্টগ্রামের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে