সোমবার, ২৬ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

স্বাগত ২০২৫, বিদায় ২০২৪

যাযাদি রিপোর্ট
  ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
স্বাগত ২০২৫, বিদায় ২০২৪
২০২৪ সালের শেষ সূর্যাস্ত। ছবিটি বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে তুলেছেন জেলা প্রতিনিধি জাবেদ আবেদীন শাহীন।

পৌষের কুয়াশার আঁচল সরিয়ে পূর্বাকাশে উদিত হয়েছে ভোরের সূর্য। এ সূর্য নতুন বছরের, নতুন দিনের, নতুন স্বপ্নের। আজ খ্রিষ্টীয় নতুন বছরের প্রথম দিন। পুরনোকে বিদায় জানিয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়া নতুন সূর্যের 'আলোকের ঝরনাধারায়' বিগত সময়ের দুঃখ, কষ্ট, হতাশা, গস্নানি ভুলে- সুন্দরের প্রত্যাশায়, নতুন উদ্যমে জেগে ওঠার পালা।

পেছনের সব জীর্ণতাকে দূরে সরিয়ে নতুনকে ঘরে তুলতে হয়, তাকে স্বাগত জানাতে হয়- এ এক শাশ্বত রীতি। নতুনের হাত ধরে উন্মোচিত হয় সম্ভাবনার দিগন্ত। বিগত বছরের সব অপূর্ণতার দীর্ঘশ্বাস মুছে যাক নতুন বছরে। নতুন বছরে সবার মুখে ফুটুক হাসি ও ধ্বনিত হোক মানবতার জয়গান।

1

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, মানুষের এগিয়ে যাওয়ার স্পৃহা তাকে নিয়ে এসেছে এতদূর। তাই সব অপশক্তি আর বাধাকে জয় করে নতুন স্বপ্ন বুকে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ এগিয়ে যাবে। বাঙালির অগ্রযাত্রার যে ধারা শুরু হয়েছে তাতে ২০২৫ সালে যুক্ত হোক নতুন মাত্রা। রাজনৈতিক, সামাজিক, অথনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে, অমিত সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাবে দেশ- এমন প্রত্যাশা সব মানুষের।

বাঙালির জাতীয় জীবনে ২০২৪ ছিল ঘটনাবহুল একটি বছর। কোটাসংস্কার এবং এই সংস্কার ঘিরে একপর্যায়ে সরকারের পতন ছিল বিগত বছরের অন্যতম আলোচিত বিষয়। কোটা সংস্কারের দাবিতে ৩৬ দিন ধরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নিলে দেশজুড়ে সংঘাত-মৃতু্যর ঘটনা দেশবাসীকে ব্যথিত-ক্ষুব্ধ করে। জুলাই-আগস্টে এই অভূতপূর্ব গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগ করলে আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ৮ আগস্ট নোবেল পুরস্কার জয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন।

বিদায়ী বছরের ১২ মার্চ এমভি আব্দুলস্নাহ নামের বাংলাদেশের একটি কয়লাবাহী জাহাজ সোমালিয়ান জলদসু্যরা ছিনতাই করে। ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক পড়েন জিম্মিদশায়। ১৫ এপ্রিল সোমালিয়ান জলদসু্যদের হাত থেকে ছাড়া পায় এমভি আব্দুলস্নাহ। প্রাকৃতিক দুর্যোগও ছিল বছরজুড়ে। ২৬ মে সন্ধ্যা থেকে ২৭ মে সকাল নাগাদ দেশের উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। এতে ঝরে যায় ৭ প্রাণ। ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনাও ঘটে বিদায়ী বছরে। ঢাকার বেইলি রোডের একটি বহুতল ভবনে আগুন লেগে ৪৬ জনের মৃতু্য হয়। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল ভারতকে ফাইনালে হারিয়ে এসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ শিরোপা জয় করে।

বিদায়ী বছরেও দেশের অনেক গুণী ব্যক্তি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। এছাড়া, হত্যাকান্ড, দুর্ঘটনা ও মব জাস্টিসে মৃতু্য, পণ্যের উচ্চমূল্য, ধর্ষণসহ নানা ধরনের নৈরাজ্যকর ঘটনার মুখোমুখি হতে হয় মানুষকে। নতুন বছরে এসব থেকে পরিত্রাণ পাক দেশের মানুষ- এমনটি প্রত্যাশা।

নববর্ষ-২০২৫ উপলক্ষ্যে দেশে ও প্রবাসে বসবাসকারী সব বাংলাদেশিসহ বিশ্ববাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

এক বাণীতে তিনি বলেন, 'সময়ের চিরায়ত আবর্তনে খ্রিষ্টীয় নববর্ষ আমাদের মাঝে সমাগত। আমাদের ব্যবহারিক জীবনে খ্রিষ্টীয় বর্ষপঞ্জিকা বহুল ব্যবহৃত। খ্রিস্টাব্দ তাই জাতীয় জীবনে এবং প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ।'

এদিকে নতুন বছরে দেশের মানুষের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দেশবাসী এবং প্রবাসী বাঙালিসহ বিশ্ববাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

এক বাণীতে তিনি বলেন, 'নতুনের আগমনী বার্তা আমাদের উদ্বেলিত করে, নব উদ্যমে সুন্দর আগামীর পথচলার জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়। নতুন বছরের এই মাহেন্দ্রক্ষণে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নতুন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে উন্নতির নতুন শিখরে আরোহণে অঙ্গীকারবদ্ধ বর্তমান অন্তর্র্ব‌তীকালীন সরকার।'

নববর্ষেও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তিনি তাদের সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, বহমান সময়ের সঙ্গে আরও একটি বছর পেরিয়ে গেল। নানা ঘটনা-দুর্ঘটনার কালের সাক্ষী হয়ে বছরটি বিদায় নিল। অতীতের সফলতা ও ব্যর্থতার ওপর দাঁড়িয়ে ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য এখন দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যেতে হবে। একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণই আমাদের অভিষ্ট্য লক্ষ্য হবে। নতুন বছর অর্জন আর প্রাচুর্যে, সৃষ্টি আর কল্যাণে সমৃদ্ধ হোক। নববর্ষের মূলসুর হলো নতুনের আগমন। নতুন জীবন নতুন আশায় মানুষের মনকে ভরিয়ে রাখে। মানুষকে সোনালি ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখায়। তিনি আরও বলেন, আমাদের হয়তো আরও কষ্টকর পথ অতিক্রম করতে হবে। প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। রাষ্ট্র ও সমাজে গণতন্ত্রের চর্চা এবং বিকাশ সাধনে আমাদের আরও বেশি তৎপর হতে হবে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। নতুন বছরে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে