দেশে প্রথমবারের মত গবাদিপশুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান প্রদাহ রোগের ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের দাবি করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাইক্রোবায়োলজি এন্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ও ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন ড. মো. বাহানুর রহমান ও তার গবেষক দল।

ডিন অধ্যাপক বাহানুর রহমান বলেন, গবাদিপশুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান প্রদাহ মূলত গাভীর ওলানে সংঘটিত ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক ব্যাধি। এ রোগে গাভীর ওলান ফুলে যায়, ওলানে জ্বালাপোড়াসহ ব্যাথা অনুভূত হয় ও গাভীর দুধ উৎপাদন কমে যায়। অধিক সংক্রমণে গাভীর দুধ উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এতে খামারীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকেন। এ রোগের ব্যাকটেরিয়া প্রচলিত এন্টিবায়োটিক রেসিট্যান্ট হওয়ায় প্রতিষেধক চিকিৎসায় কার্যকরী ফলাফল পাওয়া যায় না।

চার বছরের গবেষণা শেষে এই ভ্যাক্সিন উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছেন বলে জানান ড. বাহানুর। এ বিষয়ে তিনি বলেন, '২০২০ সালে আমরা গবেষনাটি শুরু করি। আমরা ঢাকা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনাসহ ৯ জেলার ২০৯ খামারে জরিপ পরিচালনা করি। জরিপে আমরা ৪৬% গাভীতে ম্যাসটাইটিসের সংক্রমণ খুঁজে পাই। মাঠ পর্যায় থেকে আমরা স্যাম্পল নিয়ে সোমটিক সেল কাউন্টের মাধ্যমে ম্যাসটাইটিসের সংক্রমণ ও এর তীব্রতা নিরুপণ করি। পরবর্তীতে গবেষণাগারে দীর্ঘ ক্লিনিকাল টেস্ট ও প্রক্রিয়াকরণ শেষে আমরা এই ভ্যাক্সিন উদ্ভাবনে সক্ষম হই।' তিনি আরও বলেন, 'আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী কোনো ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা ৭০ শতাংশ হলেই সেটি সফল হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু উদ্ভাবিত আমাদের ভ্যাক্সিনটি প্রায় শতভাগ কার্যকর।'

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, '৫১৭ গাভী থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এই গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে। ভ্যাক্সিন তৈরিতে ৪টি ব্যাকটেরিয়া নিয়ে কাজ করেছি। ব্যাকটেরিয়াগুলো হলো- ঝঃৎবঢ়ঃড়পড়পপঁং ধমধষধপঃরধব, ঊংপযবৎরপযরধ পড়ষর, ঝঃধঢ়যুষড়পড়পপঁং ধঁৎবঁং ও ঝঃৎবঢ়ঃড়পড়পপঁং ঁনবৎরং। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো গবেষণায় ব্যবহৃত নমুনা থেকেই সংগ্রহ করা হয়েছে। চারটি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে বিধায় একে চড়ষুাধষবহঃ গধংঃরঃরং ঠধপপরহব বলে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো জুনোটিক স্বভাবের কারণে প্রাণী থেকে মানুষেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।'

সেচ সংকটে তাহিরপুরের ২৩ হাওড়ের ইরি বোরো ফসল

অধ্যাপক বাহানুরের এই গবেষক দলে ছিলেন ড. মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত কয়েকজন শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী-ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার (বাস-ইউএসডিএ) প্রোগ্রামের অর্থায়নে ২০২০ সালের ১ অক্টোবর গবেষণাটি শুরু হয়ে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়। গবেষণার মেয়াদকাল ছিলো তিন বছর এবং এটি ২০২৪ সালের ১১ জুন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে উপস্থাপন করা হয়। ড.বাহানুর বলেন, ভালো দুধ উৎপাদনে গাভীর ওলানের সুস্থতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মূলত ব্যাকটেরিয়া ও ক্ষেত্র বিশেষে কিছু ছত্রাকের আক্রমণে গাভীর এই রোগ হয়ে থাকে। দেশে পূর্বে এই রোগের ভ্যাক্সিন বিদেশ থেকে আমদানি করা হলেও বর্তমানে এই ভ্যাক্সিন দেশে আর পাওয়া যায় না। গাভীর সুস্থতা নিশ্চিত করতে ও দুধ উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয় সেই উদ্দেশে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে আমরাই প্রথম ম্যাসটাইটিস ভ্যাক্সিনটি উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছি।