শুধু প্রতিশ্রম্নতিতেই কেটে গেছে বছরের পর বছর। কিন্তু ভোগান্তি নিরসনে কাজ করেনি বিগত সময়ের কোনো সরকার। বগুড়ায় হাজারো প্রতিশ্রম্নতির মধ্যে রয়েছে সোনাতলা উপজেলার জোরগাছা ইউনিয়নের হলিদাবগা এলাকায় বাঙ্গালী নদীর উপর ব্রিজটিও। অবশেষে নিজেদের ভোগান্তি নিরসনে বিভিন্ন গ্রাম থেকে সহস্রাধিক বাঁশ সংগ্রহ করে নিজেদের শ্রম ও কয়েক লক্ষাধিক টাকার পারিশ্রমিকে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এই অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিতরা, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন বাউল মুকুল। এতে করে এই বাঙ্গালী নদীর দুইপাশের হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের পথ সুগম হয়েছে। ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেয়েছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। উন্মোচিত হয়েছে নদীর তীরের বাঙ্গালী বাজারটি।
তবে এই সুখ বেশি দিনের নয় বলে আক্ষেপ সুবিধা বঞ্চিতদের। কারন প্রতিবছর এতো পরিমান বাঁশ সংগ্রহ করে সাকোঁ তৈরি সম্ভব নয়। তাই একটি ব্রিজ নির্মাণের মাধ্যমে লাখো মানুষের ভোগান্তির অবসান করতে জোর দাবি এই অঞ্চলের মানুষগুলোর।
উত্তরের লোকাল রেল স্টেশনগুলোর মধ্যে সবথেকে বেশি যাত্রী ওঠানামার মধ্যে অন্যতম ছিল সোনাতলার ভেলুরপাড়া স্টেশন। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভাটা পরার কারনে বর্তমানে প্রায় জরাজীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। গত প্রায় ১০ বছর ধরে স্টেশন মাস্টারও নেই এখানে। এই এলাকায় রয়েছে কলেজ, হাইস্কুল, ইউনিয়ন পরিষদ, সোনালী ব্যাংক, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী দপ্তর। কিন্তু বাঙ্গালী নদীর পূর্ব পাড়ের মানুষগুলো এসব সেবা থেকে বরাবরই বঞ্চিত। যার কারনে এ অঞ্চলটির উন্নয়ন একেবারেই থমকে আছে। বরং ধীরে ধীরে অনুন্নত অঞ্চলে পরিনত হচ্ছে।
ব্রিজটি নির্মাণ হলে কয়েক অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের পথ সুগম হবে। দূরত্ব কমবে প্রায় ১৫ কিলোমিটারের। এবং স্থানীয় প্রায় অর্ধশত গ্রামের মানুষ প্রতিনিয়ত সুবিধা ভোগ করতে পারবে। রেল স্টেশনটি ফিরবে পূর্বের অবস্থায়, অনায়াসে যাতায়াত করতে পারবে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী, নতুন দ্বার উন্মোচন হবে হাজারো ব্যাবসায়ীর। উন্নয়ন চলে আসবে দাড়ে দাড়ে। এ বিষয়ে বাঙ্গালী বাজার ও বাঁশের ব্রিজ তৈরির উদ্দ্যেক্তা বাউল মুকুল বলেন, 'এক যুগের প্রতিশ্রম্নতি যখন কেউ বাস্তবায়ন করতে পাড়ল না তখন বাধ্য হয়ে এই অঞ্চলের দুইপারের মানুষের মিলবন্ধন সৃষ্টি করতে আমরা সবাই মিলে ৩০০ মিটারের বাঁশের ব্রিজটি তৈরি করেছি। সরকারের কাছে আমাদের দাবি ব্রিজটি তৈরির মাধ্যমে লাখো মানুষের ভোগান্তির অবসান ঘটুক।' জোরগাছা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রুস্তম আলী মন্ডল বলেন, 'বছরের পর বছর কেটে গেছে নানা প্রতিশ্রম্নতিতে। কিন্তু এটি নির্মাণ হয়নি। আমরা বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি ব্রিজটি নির্মাণ করে লাখো মানুষের যাতায়াতের পথ সুগম করে দেওয়া হোক।'
বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী বলেন, ব্রিজটি হলে একদিকে বগুড়া শহরের সঙ্গে এই অঞ্চলের মানুষের দূরত্ব কমবে, অন্যদিকে লাখ লাখ টাকা গাড়ি ভাড়া বেঁচে যাবে। এছাড়া হাজার হাজার মণ কাঁচা সবজি রপ্তানি করে লাভবান হবে চরাঞ্চলের মানুষ। নতুন এক দ্বার উন্মোচন হবে এই অঞ্চলের মানুষের। সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বীকৃতি প্রামানিক বলেন, ব্রিজটি হওয়া অতি জরুরী। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে এলজিআরডিসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সবার প্রচেষ্ঠায় ব্রিজটি হলে এই অঞ্চলের মানুষের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হবে।
বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, 'এলজিআরডি'র সঙ্গে কথা বলব এবং ব্রিজটি যেনো নির্মাণ করা হয় সেদিকে যথাযথ চেষ্টা করব।'