'ওরা আমার মেয়েকে ডাক্তার হতে দিল না। ওরা আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে। আমি তাদের শাস্তি চাই। মধুপুরে বেড়াতে নিয়ে গিয়ে সহপাঠীরা পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করেছে।'
এভাবেই বিলাপ করছিলেন টাঙ্গাইল শহরের কুমুদিনী সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী অথৈ মনির মা আলেয়া বেগম। বিলাপের ফাঁকে ফাঁকে তিনি বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। গত বুধবার বিকালে অথৈ মনির গ্রামের বাড়ি জেলার মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
কলেজছাত্রী অথৈ মনির মা আলেয়া বেগম অভিযোগ করেন, পানির সঙ্গে তার মেয়েকে নেশার ওষুধ খাইয়ে খুন করা হয়েছে। তার মর্মান্তিক মৃতু্যর খবর শুনে আশপাশের লোকজন তাদের বাড়িতে ভিড় করছে। এদিকে প্রাইভেট পড়ার কথা বলে ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ায় মধুপুরে বেড়াতে যাওয়া আটজন ছাত্রীকে কুমুদিনী সরকারি কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
নিহত কলেজছাত্রী অথৈ মনির সহপাঠী ঐশী ও তন্নী জানায়, ঘটনার দিন অথৈ মনি সহপাঠী সুমাইয়া মোস্তফা অপির ভাই আবিরের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে বাসযোগে মধুপুর বেড়াতে যায়। মধুপুরে গিয়ে আবিরের সহযোগিতায় একটি ঘরে গিয়ে তারা ফ্রেস হয়। ঘোরাঘুরি শেষে তারা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় মধুপুর বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশে যাত্রা করে। পথে অথৈ মনি অটোরিকশা থেকে নেমে জাকারিয়ার মোটর সাইকেলে ওঠে। পরে তারা দুর্ঘটনার খবর পেয়ে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে যায়। সেখান থেকে আহতাবস্থায় অথৈ মনিকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। তারা জানায়, জাকারিয়া নামের ওই কলেজছাত্র তাদের সঙ্গে মধুপুর বনে বেড়াতে যায়। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল থেকে অথৈ মনিকে ঢাকার পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তার অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত সোমবার তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে কলেজছাত্রী অথৈ মনি মারা যায়।
অথৈ মনির খালা রুমি আক্তার বলেন, দুর্ঘটনার রাতে অথৈ মনির মুঠোফোন ঐশীর কাছে ছিল। সারারাত অথৈ মনির ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপ সচল ছিল। দুই দিন পর তারা (সহপাঠীরা) মুঠোফোন ফেরত দিয়েছে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসক উজ্জ্বল মলিস্নক এবং কনক কান্তি তাদের জানিয়েছেন, 'অথৈ মনিকে নেশার ট্যাবলেট খাইয়ে খুন করা হয়েছে।'
নিহত কলেজছাত্রী অথৈ মনির মা আলেয়া বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, 'আমার মেয়েকে ফুঁসলিয়ে মধুপুরে বেড়াতে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। সহপাঠী ঐশী ও তন্নী একেক সময় একেক কথা বলছে। আমি দোষীদের শাস্তি চাই।'
মধুপুর থানার ওসি এমরানুল কবীর জানান, কলেজছাত্রী অথৈ মনির মৃতু্যর বিষয়টি তিনি বুধবার বিকালে জানতে পেরেছেন। কয়েকদিন আগে কয়েকজন কলেজছাত্রী তিনটি মোটর সাইকেলে মধুপুরে বেড়াতে আসে। ওই সময় একটি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হয়। পরে আহত মেয়েটিকে ফেলে অজ্ঞাতপরিচয় ছেলেটি পালিয়ে যায়। তবে সঠিক তথ্য উদঘাটনে পুলিশ কাজ করছে।
টাঙ্গাইল শহরের কুমুদিনী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর খলিলুর রহমান জানান, আটজন মেয়ে গত ৮ জানুয়ারি ক্যাম্পাস থেকে বের হয়। তারা প্রাইভেট পড়ার কথা বলে মধুপুরে বেড়াতে গেছে এমন খবর জানতে পেরে তাদের কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।