সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

উত্তরাঞ্চলের সাড়ে তিন কোটি মানুষের জন্য মাত্র ৮ ডুবুরি!

ইমরান হোসাইন লিখন, বগুড়া
  ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
উত্তরাঞ্চলের সাড়ে তিন কোটি মানুষের জন্য মাত্র ৮ ডুবুরি!
বগুড়ায় এক শিশু পানিতে পড়ার প্রায় ৮ ঘন্টা পর উদ্ধার অভিযানে নামে রাজশাহীর ডুবুরি দল -যাযাদি

বর্তমানে উত্তরাঞ্চলের জনসংখ্যা ৩ কোটি ৬৯ লাখ ৬৪ হাজার। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা এবং নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা দিতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর কাজ করে থাকে। প্রায় সব দপ্তরেই রয়েছে প্রয়োজন মতো কম বেশি জনবল। তবে মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতোভাবে জড়িয়ে রয়েছে পানি। অর্থাৎ নদীমাতৃক দেশে রয়েছে অসংখ্যা পুকুর, ডোবা, নদ-নদী, খাল-বিল ও ঝিল। বিভিন্ন সময় পানির কবলে পরে প্রাণহানির ঘটনা অহরহ ঘটেই থাকে কিন্তু এই মহা বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য তেমন কোন জোরালো ভূমিকা নেই সরকারের। উত্তরাঞ্চলে শুধু বিভাগীয় পর্যায়ে অর্থাৎ রাজশাহী ও রংপুরে ৪ জন করে মোট ৮ জন ডুবুরী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা পর্যায়ে দূরের কথা, জেলা পর্যায়েও রাখা হয়নি কোন ডুবুরি দল। এছাড়া জনবলের পাশাপশি প্রয়োজনীয় যন্ত্র ও সরঞ্জামাদীর রয়েছে পর্যান্ত অভাব। এতে করে বিভিন্ন সময় নৌ দুর্ঘটনা অথবা পানিতে ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষনিকভাবে উদ্ধার করার কোনোই সুযোগ নেই। বিভাগীয় পর্যায়ে খবর দেয়ার প্রায় ৬-১২ ঘন্টা পর আসে ডুবুরী দল। ততক্ষনে জীবিত উদ্ধারতো দূরের কথা মৃত ব্যক্তিকেও উদ্ধার করতে সময় লেগে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। কারণ ততক্ষনে ওই মরদেহ ভেসে চলে যায় বহুদুর। বিভিন্ন সময় কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত ভেসে যাওয়ার ঘটনা রয়েছে।

উত্তরে প্রায় ২২২টি নদী ও খাল রয়েছে। তবে এর মধ্যে বর্তমানে বেঁচে রয়েছে মাত্র ২০টি। কিন্তু বর্ষাকালে নিম্নাঞ্চলগুলো পস্নাবিত হওয়ার কারনে মৃত খাল ও নদীগুলোও কিছুদিনের জন্য জীবিত হয়ে ওঠে। বেশিরভাগ অঞ্চলে এই অল্প দিনের পানি থাকার কারনে সাঁতার শেখার প্রবণতা দিন দিন কমে গেছে। যার কারনেই প্রতিবছর পানিতে পরে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে।

রাজশাহী বিভাগের দেওয়া তথ্যানুযায়ী ২০২৪ সালে বিভিন্নস্থানের পুকুরে, নালায় ও নদীতে সর্বমোট ৬৭টি ডুবুরি কল হয়। অর্থাৎ ৬৭টি দুর্ঘটনা ঘটে। এসব স্থানে রাজশাহীর ডুবুরী দল পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে মোট ৫১ জন ব্যক্তিকে উদ্ধার করে। তবে উদ্ধার করতে না পেরে নিখোঁজ রয়েছে ২২ জন।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মঞ্জিল হক বলেন, নদী অঞ্চলগুলোর পাশে যেসব জেলা রয়েছে যেমন, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনাসহ অন্য জেলাগুলোতেও ডুবুরি দল দেওয়ার জন্য ইতমধ্যে অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন। প্রতিটি জেলায় ডুবুরি দল দিলে একদিকে বিভাগীয় ডুবুরি দলের উপর চাপ কমবে, অন্যদিকে অনেক বেশি সুবিধা হবে সাধারণ মানুষদের জন্য।

রংপুর বিভাগের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালে বিভিন্নস্থানের পুকুরে ও নালায় দুর্ঘটনা হয় ২৪টি। এর মধ্যে পুরুষ আহত হয় ২জন ও মহিলা আহত হয় ১৮ জন এবং পুরুষ নিহত হয় ২৪ জন ও মহিলা নিহত হয় ৩ জন। এছাড়া নদী ও খালে দুর্ঘটনা হয় ৬৭টি। এতে পুরুষ আহত হয় ৫ জন নারীর সংখ্যা নেই, নিহত হয় পুরুষ ৫৬ জন ও মহিলা ১৮ জন। ট্রলার ও নৌকা ডুবিতে দুর্ঘটনা হয় ২টা। এতে পুরুষ নিহত হয় ১ জন ও মহিলা নিহত হয় ১১ জন। অর্থাৎ রংপুর বিভাগে মোট ৯৩টি দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১১৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮১ জন ও মহিলা ৩২ জন।

এসব তথ্য নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিসের রংপুর বিভাগীয় কর্মকর্তা (সহকারী পরিচালক) আনোয়ারুল হক বলেন, ডুবুরী সম্প্রসারণের একটি প্রজেক্ট ইতিমধ্যে হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করতে আমাদের পস্নানিং শাকা কাজ করে যাচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন হলে এই সংকট কেটে যাবে।'

বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, 'বগুড়ায় ডুবুরি দল নেই বিষয়টি আমার জানা ছিল না। যেহেতু আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম বিষয়টি নিয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বগুড়া ফায়ার সার্ভিসে একটি ডুবুরি দল যেন নিয়োগ করা হয় সেদিকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে যা যা প্রয়োজন তা বগুড়া জেলা প্রশাসন অবস্যই করবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে