লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে প্রশাসন। বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ভাটা ধ্বংস ও জরিমানা করা হয়। আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার জানান, মৌলভীবাজারে অবৈধ ৩টি ইটভাটাকে ধ্বংস করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সোমবার জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয় সদর উপজেলার আমতৈল ইউনিয়নে।
জানা যায়, পরিবেশের ছাড়পত্র না থাকা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ইট পুড়ানোর লাইসেন্স না থাকায় উপজেলার অবৈধ ইটভাটা রেইনবো ব্রিকস, নিউ মাহী ব্রিকস ও মাসফি ব্রিকসকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হয়।
মৌলভীবাজার সদর ইউএনও তাজ উদ্দিন বলেন, হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত রীট পিটিশনের আদেশ প্রতিপালনার্থে ও জেলা প্রশাসক ও ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাইল হোসেনের নির্দেশনায় বুলডোজার দিয়ে ওই ৩টি ইটভাটা ধ্বংস করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সদর এসিল্যান্ড সানজিদা আক্তার, এনডিসি ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সোহাগ মিলু। অভিযান পরিচালনায় সহযোগিতা করে সেনাবাহিনী, জেলা পুলিশ, আনসার, ফায়ার সার্ভিস, গ্রাম পুলিশ বাহিনী, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা।
এদিকে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সহকারি কমিশনার অন্তরা সরকার অদ্রি'র নেতৃত্বে সোমবার মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলাধীন মুন্সিবাজার ফলের দোকান, মুদিদোকান, হোটেল, মুরগীর আড়ৎ, গোডাউন, সবজি বাজার প্রভৃতি স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ৪টি মামলার ৪ ব্যক্তিকে দন্ড দেওয়া হয়েছে।
রংপুর প্রতিনিধি জানান, রংপুরে লাইসেন্সবিহীন ইটভাটার সংখ্যা ১৭২টি। এর মধ্যে এক সপ্তাহে ৩১ ইটভাটা উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। আরও ১৪১টি অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদের অপেক্ষায় রয়েছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল জানিয়েছেন, রংপুর জেলায় মোট ২৪০টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ১৭২টিই অবৈধ পরিবেশগত লাইসেন্স নাই। লাইসেন্সবিহীন ইটভাটাগুলোতে অবৈধভাবে ইট উৎপাদন চলছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি মাটির ওপরের অংশ তুলে নেওয়ায় জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে কৃষিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি উচ্চ আদালত সারা দেশের সব অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে নির্দেশ দিয়েছে। এ কারণে অবৈধ ভাটায় ইট উৎপাদন বন্ধে অভিযান শুরু হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রমিজ আলম জােিয়ছেন, অভিযানের অংশ হিসেবে গত এক সপ্তাহে রংপুর সদর উপজেলার ৮, পীরগঞ্জ ৪, কাউনিয়া ৩, তারাগঞ্জ ৩, বদরগঞ্জ ২, মিঠাপুকুর ৬, পীরগাছার ২টিসহ জেলায় মোট ৩১টি ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। এর সাথে ওই স্থাপনাগুলো গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শর্ত ব্যতিরেকে কোট ইটভাটা ইট উৎপাদন করতে পারবেনা। যদি কেউ জোর পূর্বক ইট উৎপাদনের চেষ্টা চালাতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান। এসব অভিযানে জেলা-উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া অবৈধভাবে পরিচালিত ইটভাটা বন্ধে কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলায় অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন। অভিযানে দুই উপজেলায় ৪টি ইটভাটার স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গত রোববার অভিযান পরিচালনা করেন দুই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা।
জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলার লংলা ব্রিকস, এমএনএইচ ব্রিকস ও সোনালী ব্রিকসে রোববার দুপুরে ইউএনও মো. মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। অপরদিকে জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের ভূয়াই এলাকায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গুলশান আরা চৌধুরী মিলি'র মালিকানাধীন ইটভাটায় অভিযান চালান জুড়ীর ইউএনও বাবলু সুত্র ধর।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে অনুমোদনবিহীন অবৈধ ইটভাটা অপসারণের নির্দেশনা মোতাবেক কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলার বেশ কয়েকটি ইটভাটার অনুমোদনপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ও থানা পুলিশের সহযোগিতায় বৈধ কাগজপত্র না থাকায় দুই উপজেলায় ৪টি ইটভাটা ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
কুলাউড়া এসিল্যান্ড শাহ জহুরুল হোসেন জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া একটি চলমান ব্রিকফিল্ডকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কুলাউড়ার ইউএনও মো. মহিউদ্দিন এবং জুড়ীর ইউএনও বাবলু সুত্র ধর বলেন, হাইকোর্টের রিট পিটিশনের পরিপেক্ষিতে এসব ইটভাটাকে অবৈধ ঘোষণা করে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ সুরক্ষায় অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে।