শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশে পাঠানোর নামে ৩১ লাখ টাকা আত্মসাৎ

হাসান আরিফ
  ২৩ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০
বিদেশে পাঠানোর নামে ৩১ লাখ টাকা আত্মসাৎ

মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য ছয় যুবক গোল্ড ক্রেস্ট ইন্টারন্যাশনাল নামের রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে বিদেশে গিয়ে চাকরি পাওয়ার আশায় টাকা দিয়ে উল্টো বিপাকে পড়েছেন তারা। এখন টাকা ফিরে পেতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে এ যুবকদের।

রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত গোল্ড ক্রেস্ট ইন্টারন্যাশনাল নামে যে রিক্রুটিং এজেন্সিতে ৩১ লাখ টাকা দিয়েছিলেন সে প্রতিষ্ঠান তাদের মালয়েশিয়ায় নিতে পারেনি। এ বিষয়ে রিক্রুটিং এজেন্সি গোল্ড ক্রেস্ট ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মো. আব্দুল বাতেন এবং প্রতিষ্ঠানের স্টাফ মো. নাছিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে রাজধানীর বনানী থানায় মানব পাচার আইনে মামলা হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে পুলিশ বু্যরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

ভোক্তভোগী ছয় জন হচ্ছেন- কুমিলস্নার মনোহরগঞ্জ শ্রীপুরের বাসিন্দা খোরশেদ আলম, সোরক মিয়া, ইসমাইল, নিজামউদ্দিন, মঈনউদ্দিন ও জামাল। তারা মালয়েশিয়ায় চাকরির উদ্দেশ্যে ২০১৭ সালের জুনে টাকা দিয়েছিলেন।

জানা গেছে, ছয় জনের চাকরির জন্য রিক্রুটিং এজেন্সি গোল্ড ক্রেস্ট ইন্টারন্যাশনালে টাকাগুলো দিলেও তাদের বিদেশ যেতে না পারার মূল নায়ক হলেন মেসার্স ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী রুহুল আমিন স্বপন। কারণ রিক্রুটিং এজেন্সি ক্রেস্ট ইন্টারন্যাশনালের

মালিক আব্দুল বাতেন তাদের ভিসার জন্য প্রাপ্ত টাকা ও পাসপোর্ট তুলে দিয়েছিলেন ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের মালিক স্বপনের হাতে। শুধু এই ৬ যুবকই নয়, চাকরি করতে মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক আরও একাধিক যুবকের ভিসার টাকা ও পাসপোর্টও তিনি তুলে দেন তার কাছে। স্বপন টাকা মেরে দেওয়ায় বিপাকে পড়েন বাতেন। মামলা, হামলা ও হুমকির শিকার হতে হচ্ছে বাতেনকে। সে বিড়ম্বনা পোহালেও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে নেপথ্যের নায়ক স্বপন।

টাকা নিয়েও বিদেশ না নেওয়ার বিষয়ে গত ৯ নভেম্বর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবের দপ্তরে ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের মালিক স্বপনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন আব্দুল বাতেন। তিনি একই অভিযোগ পাঠিয়েছেন বায়রার প্রেসিডেন্ট, পিবিআই প্রধান (ডিআইজি) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর পরিদর্শক এসআইঅ্যান্ডও (অর্গানাইজড ক্রাইম) মো. মোক্তারুজ্জামানের দপ্তরেও। অভিযোগটি তদন্ত করে সুবিবেচনার জন্য সুপারিশ করেছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সভাপতি বেনজীর আহমেদ।

বনানী থানায় দায়ের করা মানব পাচার মামলা তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সম্প্রতি ক্যাথারিক ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যানের দপ্তরে একটি নোটিশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার মি. পল, অ্যাকাউন্টেন্ট সোহাগ মিয়া, ম্যানেজার জিয়াউর রহমান জিয়া, ভিসা অফিসার রেজাউল করিম রেজা ও এনামুল হককে ডেকেছিলেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

নোটিশে তদন্ত কর্মকর্তা উলেস্নখ করেন, জনৈক আব্দুল রহমান বাদী হয়ে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন-২০১২ এর ৬/৭ ধারায় দায়ের করা মামলাটি (বনানী থানার মামলা নং-২৬, তারিখ ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর) দায়ের করেন। মামলার ঘটনা সংক্রান্তে নিম্নোক্ত ব্যক্তিরা (ক্যাথারিক ইন্টারন্যাশনালের সাবেক ওই ৫ কর্মকর্তা ও কর্মচারী) অবগত মর্মে প্রাথমিক তদন্তে তিনি জানতে পেরেছেন, ওই ৫ জন ক্যাথারিক ইন্টারন্যাশনালের বিভিন্ন পর্যায়ের পদবিধারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী। মামলাটির সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।

পিবিআইর পরিদর্শক মো. মোক্তারুজ্জামান বলেন, মামলা সংক্রান্তে যাদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে তারা এসে নিজ নিজ বক্তব্য দিয়েছেন। তদন্তাধীন বিধায় এ মামলার বিষয়ে আর বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে