শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কেরানীগঞ্জে এলপিজি গ্যাস নিয়ে নৈরাজ্য

মাসুম পারভেজ, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা)
  ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

রাজধানীর কেরানীগঞ্জের সর্বত্র তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) নিয়ে চলছে নৈরাজ্য। সরকার নির্ধারিত মূল্য থেকে অতিরিক্ত বেশি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। হঠাৎ অধিক মূল্যে সিলিন্ডার বিক্রি হওয়ায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে দেশে এলপিজি ও অটো গ্যাসের দাম নির্ধারণের পদ্ধতি চালু করেছে সরকার। সেই সঙ্গে এ দুই গ্যাসের দামও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি খাতে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এই এলপিজির মূল্য এখন লাগামহীন। কেরানীগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের প্রতিটি পাড়া-মহলস্নায় সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এলপিজি সিলিন্ডার। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন প্রতি ১২ কেজি সিলিন্ডারের খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দেয় ১ হাজার ৪৯৮ টাকা। কিন্তু বর্তমান বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯শ' থেকে ২ হাজার টাকারও বেশি দামে। এতে সাধারণ গ্রাহকদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে সিলিন্ডারের দাম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার একাধিক গ্যাস বিক্রেতা বলেন, আমরা ডিলার থেকে গ্যাস কিনে অল্প লাভে বিক্রি করি। এতে আমাদের অল্প লাভ হয়। অপরদিকে, উপজেলায় মুদি-মনিহারি দোকান, ক্রোকারিজের দোকান, ভুসি মালের দোকান এবং রড সিমেন্টের দোকানসহ যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। অনেক দোকানি তাদের দোকানের সামনে রাস্তার পাশে রেখেই গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন। এতে রয়েছে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা।

গোলামবাজার হোটেল ব্যবসায়ী আলী মাহমুদ বলেন, প্রতি ৩০ কেজি এলপি গ্যাসের ক্রয়মূল্য ছিল ৩ হাজার ২শ' টাকা। এখন প্রতি সিলিন্ডারে ৯শ' থেকে ১ হাজার টাকা অতিরিক্ত দিতে হয়। এতে আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।

গৃহিণী নূরজাহান বেগম বলেন, গত মাসে গ্যাস কিনেছি ১ হাজার ৫শ' টাকায়। আজকে গ্যাস কিনতে গিয়ে দেখি গ্যাস সংকট। দোকানিরা দাম চাচ্ছেন প্রতি সিলিন্ডার দুই হাজার টাকা। পরে গ্যাস না কিনে বিদু্যতে রান্না করলাম। একই এলাকার নির্মাণশ্রমিক মুজিবুর বলেন, আমার বাসায় তিনদিন ধরে গ্যাস নেই। গ্যাসের দাম বেড়েছে। যে দোকানেই যাই দোকানদার দাম চায় দুই হাজার টাকা। তাই মাটির চুলায় রান্না করি।

শুভাঢ্যা মদিনানগর এলাকার গ্যাস বিক্রেতা বরিশাল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. ফিরোজ সরকার নির্ধারিত দামের কথা উলেস্নখ করে বলেন, আমরা দোকানদারদের কাছে পাইকারি মূল্যে ১২ কেজির গ্যাস বিক্রি করে থাকি ১ হাজার ৬৫০ টাকায়। দোকানদাররা এর চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করার চেষ্টা করবেন এটাই স্বাভাবিক। আবার কোম্পানি অনুযায়ী দামেরও কিছুটা এদিক-সেদিক হয়ে থাকে।

এদিকে, প্রয়োজনীয় এই এলপি গ্যাসের মূল্য প্রতি মাসেই ওঠানামা করছে। কিন্তু কখনো সরকার নির্ধারিত মূল্যে তা বিক্রি হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ গ্রাহক। মূল্য নিয়ে হয়রানি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সরকার এলপি গ্যাসের মূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এমনটাই প্রত্যাশা করেছেন সবাই।

কদমতলী এলাকার রিকশা চালক ইসলাম মিয়া বলেন, গাড়ি গ্যারেজে রেখে রাতে বাসায় গিয়ে দেখি গ্যাস নেই। পরে ১ হাজার ৫শ' টাকা নিয়ে এলাকার দোকানগুলোয় গ্যাস কিনতে গিয়ে জানতে পারি, গ্যাস বিক্রি করছে দুই হাজার টাকায়। কম দামের আশায় পাশের এলাকায় গিয়েও দেখি একই চিত্র। পরে গ্যাস না কিনে বাসায় চলে আসি।

এদিকে, কেউ নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে গ্যাস কিনলে সরাসরি বিইআরসিতে অথবা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে পারবেন বলে জানান কনজু্যমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম। তিনি বলেন, বিইআরসি নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দাম নেওয়া দন্ডনীয় অপরাধ। গ্রাহকের কাছ থেকে অতিরিক্ত দাম নিলে আইন অনুযায়ী প্রতিকারের ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া আমাদের কাছে অভিযোগ করলেও আমরা বিষয়টি তদারকি করতে পারব।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ ফয়সল বিন করিম জানান, এ ধরনের অভিযোগ অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে। দাম যদি খুচরা পর্যায়ে নির্ধারণ করা থাকে, সে ক্ষেত্রে বেশি দামে বিক্রির সুযোগ নেই। আমরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে