বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপিত

যাযাদি ডেস্ক
  ২৬ মে ২০২৩, ০০:০০
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তার সমাধিতে পরিবারের পক্ষ থেকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয় -যাযাদি

'বল বীর- বল উন্নত মম শির!/ শির নেহারি' আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!' বাংলা সাহিত্যে 'বিদ্রোহী' কবিতার অমর স্র্রষ্টা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী সারা দেশে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠন।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত জাতীয় কবি কাজী নজরুল

ইসলামের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ। সকালেই বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর ভালোবাসায় ফুলে ফুলে কবির সমাধি ভরে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কবির পরিবার, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং শ্রেণিপেশার সংগঠনের পক্ষ থেকে কবির কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করা হয়েছে।

প্রতিবছরের মতো এবারও জাতীয় পর্যায়ে নজরুলজয়ন্তী পালনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় ছায়ানট, শিল্পকলা একাডেমি, নজরুল ইনস্টিটিউটসহ সারা দেশে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও গ্রহণ করা হয়েছে বিস্তারিত কর্মসূচি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- পুষ্পস্তবক অর্পণ, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সকাল ৬-১৫ মিনিটে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমবেত হয়ে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শোভাযাত্রা সহকারে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করেন। এ ছাড়া সকালে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কবি পরিবারের সদস্যরা। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

এদিন সকালে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন- আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন নাছিম, বিএনপির পক্ষ থেকে যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, বাংলা একাডেমি, ঢাকা নজরুল সেনা, ছাত্রলীগসহ অনেকে।

পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে কবির সমাধি প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ সামাদ এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, 'নজরুলের যে মর্মবাণী, সেটি হলো সাম্প্রদায়িক ও মানবিক সমাজ, একটি সাম্যের সমাজ। সেটি প্রতিষ্ঠা করার যে অবারিত প্রয়াস, সেটি আমাদের রাখতে হবে।'

উপাচার্য বলেন, 'মানবতার কবি, সাম্যের কবি, ভালোবাসার কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে তার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। যুগে যুগে তার অসামান্য অবদানের জন্য তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। নজরুল তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অগ্নিবীণা', যাকে উৎসর্গ করেছেন, সেটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেই বারীন্দ্র কুমার ঘোষ ছিলেন তৎকালীন সমগ্র ভারত ও বাংলার মহানায়ক। আমার ধারণা, যদি তিনি (নজরুল) সুস্থ থাকতেন এবং তার (বঙ্গবন্ধু) বয়স সেই রকম হতো, যা হয়েছিল চলিস্নশের দশকে, তিনি সেই সময় যে অসামান্য অবদান রেখেছেন, কবি নজরুল হয়তো এই কাব্যগ্রন্থটি বঙ্গবন্ধুর নামেই উৎসর্গ করতেন। কেননা, একটি জাতির রাষ্ট্র সৃষ্টির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু যে অবদান রেখেছেন, কাজী নজরুল তার এই কাব্যগ্রন্থ উৎসর্গের জন্য সব বৈশিষ্ট্য বঙ্গবন্ধুর মাঝে খুঁজে পেতেন।'

সংস্কৃতি-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদের নেতৃত্বে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিতে সংস্কৃতি-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। এ সময় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক চন্দন কুমার দে, কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুলস্নাহসহ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, 'কবি নজরুল প্রেমের, বিদ্রোহ ও বেদনার কবি। সাহিত্যের সব শাখাতেই তার বিচরণ। তিনি অসাম্প্রদায়িক ও মানবতার কবি। এই চেতনায় আমরা উজ্জীবিত হতে চাই। আমরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলব। সেটাই হবে নজরুলের চেতনার প্রতীক।'

এদিকে, সকালে পরিবার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি খিলখিল কাজী বলেন, 'তিনি আজীবন মানুষের জয়গান গেয়েছেন, সবাইকে একই গাছের তলায় এনে দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন এবং ভীষণভাবে অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ ছিলেন। অন্যায়ের প্রতিবাদে মুখর ছিল তার লেখনী। ১৯৪২ সালে যদি তিনি অসুস্থ না হতেন, তাহলে হয়তো আমরা তার আরও ক্ষুরধার লেখা পেতাম। আজ যেসব জাতিগত বিভেদ দেখা যাচ্ছে, কাজী নজরুল ইসলাম বেঁচে থাকলে সেগুলো হতো না। বেঁচে থাকলে তিনি সমাজটাকেই বদলে দিতেন।'

তিনি আরও বলেন, 'তাকে জাতীয় কবি বলা হলেও আমরা তাকে সব পর্যায়ে পৌঁছাতে পারিনি। পশ্চিমবঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনটি ছুটি ঘোষণা করা হয়। আমি অনেকদিন ধরে কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিনটি ছুটি ঘোষণার কথা বলে আসছি।'

জাতিসংঘের কাছে আবেদন জানিয়ে নজরুল দৌহিত্রী বলেন, '১৯২১ সালে কাজী নজরুল ইসলাম কালজয়ী বিদ্রোহী কবিতা লিখেছিলেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে এটি মানুষকে উজ্জীবিত করেছে এবং মুক্তিযুদ্ধেও মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল, বঙ্গবন্ধুকেও অনুপ্রাণিত করেছিল। জাতিসংঘের কাছে আবেদন করছি, কবিতাটি হেরিটেজ করা হোক এবং পৃথিবীর বুকে হেরিটেজ করে কবিতাটি ছড়িয়ে দেওয়া হোক।'

প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (২৪ মে, ১৮৯৯ সাল) জন্মগ্রহণ করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৭৬ সালের ২৭ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে সমাহিত করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে