লক্ষ্ণীপুরে ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান জসিম হত্যা মামলায় আট আসামিকে মৃতু্যদন্ড দিয়েছেন আদালত। একজন হিজবুর রমান স্বপন পলাতক রয়েছেন। দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের বাগবাড়ীর মৃত ওবায়েদ উল্যার ছেলে মোবারক উল্যা (৬৬), আলী হোসেন বাচ্চু (৫০), হিজবুর রহমান স্বপন (৪৫), মোবারকের ছেলে কবির হোসেন রিপন (৩০), একই বাড়ির মৃত রুহুল আমিনের ছেলে মো. খোকন (৫০), মো. মোস্তফা (৭০), আবুল হোসেন (৫০) ও করইতোলা গ্রামের বাগবাড়ীর আবদুল্যা মাস্টারের ছেলে জাফর আহম্মদ (৫৫)। রায়ের সময় আদালতে দন্ডপ্রাপ্ত সাতজন উপস্থিত ছিল।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আমিনা ফারহিন এ রায় দেন। রায় শুনে আসামি ও তাদের স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
লক্ষ্ণীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এ মামলায় ১২ আসামির বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করে। এর মধ্যে ৪ জন মারা গেছেন। অন্য ৮ আসামিকে মৃতু্যদন্ড দিয়েছে আদালত।
ভিকটিম জসিম চন্দ্রগঞ্জ কফিল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তিনি সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের মফিজ উল্যার ছেলে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শ্রীরামপুর গ্রামের বাগবাড়ীর মফিজ উল্যার সঙ্গে একই বাড়ির মোবারক উল্যা ও আলী হোসেন বাচ্চুদের জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এর জের ধরে মোবারকরা ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি মফিজ ও তার পরিবারের সদস্যদের মারধর করে। এ ঘটনায় থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। এরপর থেকে মামলাটি প্রত্যাহার করার জন্য মফিজ উল্যাকে হুমকি দেওয়া হয়। মফিজ ও তার পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে না যেতে পেরে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আত্মগোপনে থাকতেন।
এদিকে প্রতিপক্ষ মোবারকদের করা মামলাটি দত্তপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সেই সময়ের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নুরনবী তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে মফিজের ছেলে মেহেদী হাসান জসিমের নাম বাদ দেওয়ায় মোবারকরা চরম ক্ষিপ্ত হয়। এই ফাঁকে জসিম সৌদি আরবে যান। সেখান থেকে ছুটিতে বাড়িতে আসেন তিনি। মোবারকরা তাদের হুমকি দিলে সে বাড়িতে না থেকে সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের রাধাপুর গ্রামে আত্মীয় গোলাম মাওলার বাড়িতে আত্মগোপনে যায়।
২০১৩ সালের ১০ ফেব্রম্নয়ারি রাতে জসিমের সঙ্গে তার বড়ভাই আবদুল হাই ও গোলাম মাওলার ভাই মাসুদ একই কক্ষে ঘুমিয়ে ছিল। ওইদিন দিবাগত গভীররাতে আসামিরা জানালার গ্রিল ভেঙে ঘরে ঢোকে। জসিমের বুকে গুলি করে। তাকে বাঁচানোর জন্য অন্যরা এগিয়ে এলে আসামিরা গুলি করার হুমকি দিয়ে তাদের পিটিয়ে আহত করে। পরে জসিমকে উদ্ধার করে লক্ষ্ণীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পরদিন জসিমের বাবা মফিজ উল্যা বাদী হয়ে সদর থানায় মোবারকসহ ১২ জনের নাম উলেস্নখ ও অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও লক্ষ্ণীপুর সদর থানার সে সময়ের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু নাছের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে সাক্ষ্য-প্রমাণে মোবারক উল্যা, আলী হোসেন বাচ্চু, অজি উল্যা, কবির হোসেন রিপন, হিজবুর রহমান স্বপন, আবুল কাশেম, সফিক উল্যাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে উলেস্নখ করা হয়।
পরে আবার মামলাটি তদন্ত করে সিআইডি। লক্ষ্ণীপুর জেলা সিআইডি পুলিশের সেই সময়ের উপপরিদর্শক (এসআই) আফসার আহমেদ ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর আবার আদালতে হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দেন। এতে ওই ১২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
এর মধ্যে আসামি আবুল কাশেম, সফিক উল্যা, আমির হোসেন ও অজি উল্যা মারা গেছেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত ৮ জনের বিরুদ্ধে রায় দেন।