সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাপ্তাইয়ে ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে বাস করছে শত শত পরিবার

পাহাড় ধসের ৬ বছর আজ
মো. আজগর আলী খান, কাপ্তাই
  ১৩ জুন ২০২৩, ০০:০০

২০১৭ সালের ১৩ জুন। কাপ্তাইবাসীর জন্য ছিল এক বিভীষিকাময় দিন। এর আগের দিন (১২ জুন) মধ্যরাত থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। টানা বর্ষণে তখন ঘরবন্দি প্রায়ই মানুষ। অতিবৃষ্টিতে সেইদিন কাপ্তাইয়ের সব সড়ক যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। অজানা আশঙ্কা ভর করেছিল জনমনে।

১৩ জুন সকালে কাপ্তাইবাসী শুনলো ভয়াবহ পাহাড় ধসের কথা। বিভিন্ন প্রান্ত হতে আসতে লাগল মৃতু্যর খবর। সেইদিন সকালে প্রথম দুঃসংবাদটি আসে ১নং চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের মিতিঙ্গাছড়ি থেকে। ভয়াবহ পাহাড় ধসে সেইদিন ওই এলাকার বসবাসরত নুরন্নবীসহ তার ছেলের গর্ভবতী স্ত্রী এবং তার শিশুপুত্র ঘটনাস্থলে পাহাড় ধসে মারা যায়। এরপর একে একে ওয়াগ্‌গার মুরালীপাড়া, রাইখালীর কারিগরপাড়া এবং চিৎমরম হতে পাহাড়ধস ও মৃতু্যর খবর আসতে থাকে। সেইদিনের পাহাড় ধসে কাপ্তাইয়ে প্রাণ হারায় ১৮ জন। পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় শত শত একর সবজি ক্ষেত, বিনষ্ট হয় বহু ঘরবাড়ি। এখনো সেইদিনের কথা মনে হলে স্থানীয় বাসিন্দারা শিউড়ে ওঠে।

কাপ্তাইয়ের পাহাড় ধসের ৬ বছর পূর্ণ হলো আজ। এখনো কাপ্তাইয়ের অনেক জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে শত শত পরিবার। বিশেষ করে ৪নং কাপ্তাই ইউনিয়নের ঢাকাইয়া কলোনিতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করছে শত শত পরিবার। এছাড়া ওয়াগ্‌গা ইউনিয়নের মুরালীপাড়া, রাইখালী ইউনিয়নের কারিগরপাড়া, তিনছড়ি, মিতিঙ্গাছড়িসহ দুর্গম অনেক জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করছে অনেক পরিবার। বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টি হলে এদের প্রশাসনের পক্ষ হতে আশ্রয় কেন্দ্র নিয়ে আসা হলেও এসব পরিবারগুলোকে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করা যায়নি।

এ বিষয়ে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমন দে জানান, 'উপজেলা প্রশাসন সবসময় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সতর্ক করে আসছে। অতিবৃষ্টি হলে আমরা এদের নিকটস্থ স্কুলে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছি, যাতে প্রাণহানি না ঘটে।' তিনি জানান, 'ইতিমধ্যে আমরা কাপ্তাই এবং ওয়াগ্‌গা ইউনিয়নে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছি যাতে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে।'

৪নং কাপ্তাই ইউপি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ জানান, প্রতি বছর বর্ষা আসলে তারা অজানা আতঙ্কে থাকেন, বিশেষ করে তার ইউনিয়নের ঢাকাইয়া কলোনিতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে শত শত পরিবার। তিনি জানান, 'অতিবৃষ্টি হলে আমরা তাদের কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয়ে এনে আশ্রয় দিই এবং তাদের খাবার পরিবেশন করে থাকি।' কিন্তু এটা কোনো স্থায়ী সমাধান না, তাই তিনি পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের স্থায়ীভাবে কোনো নিরাপদ জায়গায় পুনর্বাসন করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানান।

কাপ্তাই জেলা নৌ স্কাউটসের জেলা স্কাউট লিডার ও কাপ্তাই বিএন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ এম জাহাঙ্গীর আলম জানান, '২০১৭ সালের ১২ জুন দুপুর ২টার সময় যখন কাপ্তাই- চট্টগ্রাম সড়কের শিলছড়ি এলাকায় পাহাড় ধসে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, সেই সময় সড়কের উভয় পাশে শত শত যান আটকে পড়ে, আমরা নৌ স্কাউটসের ৪০ জন সদস্য নিয়ে সড়ক চলাচল উপযোগী করি। এছাড়া পাহাড় ধসে নিহতের লাশ উদ্ধারে সহায়তা করি।'

প্রতি বছর বর্ষা আসলে অতিবৃষ্টি হলে কাপ্তাইয়ে অনেক জায়গায় পাহাড়ধস হয়, প্রাণহানি ঘটে, ক্ষতি হয় সম্পদের। ঘটনার পর ছুটে আসেন মন্ত্রী, এমপি, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা। সবাই আশ্বাস দেন এদের পুনর্বাসনের। কিন্তু বর্ষা শেষ হলেই সেসব প্রতিশ্রম্নতি নিয়ে আর কেউ মাথা ঘামায় না। তাই কাপ্তাইয়ের সর্বস্বরের জনগণের দাবি, এ পরিবারগুলোকে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করা হোক যেন আর কারও মায়ের বুক খালি না হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে