শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পানির স্রোতে তলিয়ে গেল সেই বেড়িবাঁধ

রিয়াদুল ইসলাম রিয়াদ, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম)
  ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

বাঁশখালী উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে সাড়ে ৭ বছর আগে ২৫১ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ২০১৫ সালের ১৯ মে প্রকল্পটি একনেকে পাস হয়। বঙ্গোপসাগর ও সাঙ্গু নদীর পাড়ে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বাঁধ নির্মাণে কয়েক দফা সময় ও ব্যয় বেড়ে হয়েছিল ২৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ২০২২ সালে প্রকল্পের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়। তবে কয়েক বছর যেতে না যেতেই পানির স্রোতে তলিয়ে গেছে খানখানাবাদের কদমরসুল এলাকায় বাঁধ রক্ষায় নির্মিত সিসি বস্নক বেষ্টিত এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ।

সরেজমিনে তলিয়ে যাওয়া বাঁধে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশখালীর খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদমরসুল এলাকায় নির্মিত সিসি বস্নক বেষ্টিত এক কিলোমিটার বাঁধের প্রায় অধিকাংশ বঙ্গোপসাগরের পানির স্রোতে তলিয়ে গেছে। বাঁধের একাংশ বিলীনও হয়ে গেছে। বেড়িবাঁধ ক্ষয় রোধে লাগানো বস্নকের কোনো অস্তিত্বও নেই। প্রায় সবগুলো বস্নক ধসে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তলিয়ে যাওয়া বাঁধে জিওব্যাগ (বালু ভর্তি) ব্যবহার করলেও তা মুহূর্তেই সাগরে তলিয়ে যাচ্ছে। এক কথায় বলতে গেলে বাঁধে কোনো কিছুরই ঠাঁই হচ্ছে না। এতে যে কোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙ্গে বঙ্গোপসাগরের পানিতে পস্নাবিত হবে খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদমরসুল এলাকা।

এদিকে বাঁধে ভাঙন ঠেকাতে যে জিওব্যাগ (বালু ভর্তি) করা হচ্ছে। তাও নেওয়া হচ্ছে বাঁধের ৩০০ মিটার দূরবর্তী অংশে সাগরে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে। এতে ড্রেজার থেকে সরাসরি পাইপলাইনের মাধ্যমে ভর্তি করা হচ্ছে জিওব্যাগ। এতে তলিয়ে যাওয়া অংশে সে সব জিওব্যাগ বসানো হচ্ছে তাও মুহূর্তেই তলিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে বেড়িবাঁধের অবশিষ্ট অংশ আরও হুমকির মুখে। অন্যদিকে এত বড় একটা বাঁধ তলিয়ে যাওয়ার পরও পাউবোর ব্যাপক কোন তৎপরতা চোখে পড়েনি।

পাউবো সূত্র জানায়, বাঁশখালী উপজেলার বঙ্গোপসাগর ও সাঙ্গু নদীর পাড়ে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প ২০১৫ সালের ১৯ মে একনেকে পাস হয়। যাতে ব্যয় ধরা হয় ২৫১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। তবে কয়েক দফা প্রকল্পটির সময় ও ব্যয় বেড়ে তা হয়েছে ২৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় এতে ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ, ভাঙন রোধ ও পুনরাকৃতিকরণ, ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ এবং ৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ করার কথা রয়েছে।

খানখানাবাদ কদমরসুল এলাকার বাসিন্দা মো. ইউসুফ বলেন, '১৯৯১-এর ঘূর্ণিঝড়ে আমি আমার পরিবারের পাঁচ সদস্যকে হারাই। প্রতি বছরই বর্ষাকাল ও ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাপ দাদার ভিটে সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। ভাবছিলাম বেড়িবাঁধের কারণে নতুন করে প্রাণ ফিরে পাব আমরা। তবে গত পাঁচ দিন আগে এভাবে পানির স্রোতে বাঁধ তলিয়ে যাওয়ায় ভয়ে আছি। মূলত সংস্কারের নামে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, ঠিকাদার ও পাউবোর কর্মকর্তারা বাঁধের টাকা লুটপাট করেছে।'

খানখানাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জসিম হায়দার বলেন, 'আমার কদমরসুল এলাকার প্রায় এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ তলিয়ে গেছে ও ধসে পড়েছে। বাঁধ তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগাযোগ করি। পাউবো আপাতত তলিয়ে যাওয়া বাঁধে জিওব্যাগ বসাচ্ছে। মূলত সাঙ্গু নদীর মুখ পরিবর্তনের কারণে পানির স্রোতের গতিপথ পাল্টে বাঁধের নিচ তলিয়ে গেছে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না নিলে যে কোন মুহূর্তে পুরা কদমরসুল এলাকা বিলীন হয়ে যাবে।'

পাউবোর চট্টগ্রাম উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সাগর দে বলেন, 'খানখানাবাদের কদমরসুল এলাকায় বেড়িবাঁধে যে ভাঙন দেখা দিয়েছে সেই জায়গায় সাঙ্গু নদী বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। যার কারণে নদীর স্রোতের গতিপথ পাল্টে বেড়িবাঁধে আঘাত করেছে। এতে ঐ এলাকার ৭০০ মিটার বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ভাঙন ও ধসে পড়া বাঁধে জিও ব্যাগ বসানো হয়েছে। জিও ব্যাগের জন্য যে বালুটা উত্তোলন করা হচ্ছে ওটা পার্শ্ববর্তী জেগে উঠা চর থেকে নেওয়া হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রকৃতির সঙ্গে আমরা যুদ্ধ করে পারব না। এটা সম্পূর্ণ প্রকৃতিগত কারণে হয়েছে। ভুল নকশা বা নিম্নমানের কাজের প্রশ্নই উঠে না। ১২শ' কোটি টাকার একটা প্রকল্পের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এটা পাস হলে বাঁশখালীতে বেড়িবাঁধ নিয়ে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে