শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
রাউজানে গণপিটুনিতে মূল আসামি নিহত

অপহরণের ১৩ দিন পর সেই ছাত্রের খন্ডিত লাশ উদ্ধার

মীর আসলাম (চট্টগ্রাম) রাউজান
  ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

চট্টগ্রামের রাউজানে অপহরণের ১৩ দিন পর শিবলি আল সাদিক হৃদয়ের (১৯) খন্ডিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার সকালে উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের পূর্ব পার্শ্বের পাহাড়ের চূড়া থেকে তার খন্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয়। হৃদয়ের পরিহিত কাপড় দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয় লাশটি হৃদয়ের। এদিকে, অপহরণ মামলার মূল আসামি উমংচিং মারমার (২৬) স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সোমবার সকাল ৮টার দিকে লাশের খন্ডিত অংশ উদ্ধার করে রাউজান থানা পুলিশ।

স্থানীয়রা জানায়, দুর্গম পাহাড়ের চূড়ায় কলাগাছ দিয়ে ঢাকা অবস্থায় পুলিশ মাথার খুলি, পায়ের দুটি নলা, হাতের একটি নলা, মুখ ও হাত রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় খন্ডিত লাশটি উদ্ধার করে। দেহের অন্যান্য অংশ সেখানে ছিল না।

তারা আরও জানায়, উদ্ধারকৃত আলামতসহ পুলিশ আসামিকে নিয়ে থানায় ফেরার পথে কদলপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের রওশন আল কেরানীর বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় গাছের গুঁড়ি ফেলে হৃদয়ের পাড়াসহ এলাকার কয়েক হাজার নারী-পুরুষ রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরি করে পুলিশের গাড়িতে থাকা আসামিকে ছিনিয়ে নিতে প্রস্তুতি নেয়। উত্তেজিত জনতার হাতে ছিল লাঠিসোটা। এ সময় ব্যারিকেডে পড়ে পুলিশের গাড়ি। বিক্ষুব্ধ জনতা আসামি ছিনিয়ে নিতে পুলিশের গাড়িতে হামলা করে এক পর্যায়ে গাড়ির দরজা ভেঙে আসামি উমংচিং মারমাকে বের করে সেখানে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে। পুলিশ আসামিকে রক্ষায় চেষ্টা করলে বিক্ষুব্ধরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এ সময় আহত হয় ওসিসহ কয়েকজন।

গণপিটুনিতে নিহত আসামি উমংচিং মারমা (২৬) পার্বত্য রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পূর্ব রঙিপাড়া এলাকার উথোয়ামং মারমার ছেলে।

পুলিশ জানায়, উত্তেজিত জনতার হামলায় পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। আহত হয়েছেন রাউজান থানার ওসি আবদুলস্নাহ আল হারুন (৪২), ওসি তদন্ত সিদ্দিকুর রহমান, (৪৫) সেকেন্ড অফিসার অজয় দেব শীল (৩৫), এসআই কানু লাল অধিকারী (৪১), এসআই শাহাদাত হোসেন (৩১), এসআই কিশোর কুমার দে (৩৩), এসআই জসিম (৫৫), এস আই আজিজুল হাকিম (২৯), এএসআই শাহিদুলসহ (৩৬) ১০ পুলিশ সদস্য আহত হন।

উলেস্নখ্য, গত ২৮ আগস্ট রাত ১০টায় রাউজান উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের হযরত আশরাফাশাহ (রা.) মাজার গেইটের পূর্ব পার্শ্বের পাহাড়ি জনপদে নিজ বাড়ির অদূরে ইলিয়াছ পোল্ট্রিফার্ম থেকে ওই কলেজ ছাত্র নিখোঁজ হন। সে কদলপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী হলেও ওই পোল্ট্রি ফার্মের ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন। এই ফার্মে আরও কয়েকজন উপজাতি কাজ করতেন। হৃদয়ের সঙ্গে মাস দুয়েক আগে ওই ফার্মে কর্মরত যুবকদের মনোমালিন্য হওয়ায় হৃদয়কে অপহরণ করা হয়েছে বলে তার পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন।

অপহরণকারীরা মুক্তিপণ দাবি করলে অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত হয় তারা। ছেলের মুক্তির আশায় হৃদয়ের বাবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২ লাখ টাকা প্রদান করলেও তাকে ছেড়ে দেয়নি। পরে হৃদয়ের মা মানাহিদা আকতার অপহরণে জড়িত ৬ জনের নাম উলেস্নখ করে রাউজান থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নিয়ে পুলিশ ৬ আসামির মধ্যে দুইজনকে পার্বত্য জেলার কাউখালী উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার দুইজন বেতবুনিয়া ইউপির ৬নং ওয়ার্ডের উহ্লাপ্রমং মারমার ছেলে ও আছুমং মারমা (২৬), কাপ্তাই থানার চিৎমরং ইউপির ৪নং ওয়ার্ডের আমতলী পাড়ার উষাচিং মারমার ছেলে ঊক্যথোয়াই মারমা (১৯)।

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুলস্নাহ আল হারুন বলেন, রোববার মামলার ১ নাম্বার আসামি উমংচিং মারমাকে আটক করে সোমবার ভোরে তার দেওয়া তথ্যমতে কদলপুর-রাঙ্গুনিয়া সীমান্তবর্তী দলুছড়ি পাহাড়ি এলাকায় অভিযানে যায় পুলিশ। সেখান থেকে অপহৃত কলেজ ছাত্রের খন্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয়। সেখানে ১ নাম্বার আসামিকে দেখে স্থানীয় কয়েকশ' উত্তেজিত জনতা গণপিটুনি দিয়ে তাকে হত্যা করে। আমাদের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। অন্তত ১০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তারা রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে