সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
বোরো মৌসুমে চাষাবাদ নিয়ে আতঙ্কে কৃষক

যশোরে প্রতারণার মাধ্যমে সেচযন্ত্রের অনুমোদন!

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর
  ২১ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

যশোর সদর উপজেলার ডাকাতিয়া গ্রামে সেচ প্রকল্পের ১৬ সদস্যের সঙ্গে প্রতারণা করে সম্পাদক নিজের নামে গভীর নলকূপ স্থাপন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আসন্ন বোরো মৌসুমে চাষাবাদ নিয়ে আতংকে রয়েছেন কৃষকরা। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনাও বিরাজ করছে। বিক্ষুব্ধ সদস্যদের পক্ষে সেচ প্রকল্পের সভাপতি ইজাহার আলী আদালতে দু'টি মামলা করেছেন। একই সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও লিখিত অভিযোগ করেছেন। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাখিল করা মামলায় বজলুর রহমান ছাড়াও এলাকার বোরহান উদ্দিন টিটো, শামসুজ্জমান লিটন ও লাল্টুকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

জানা গেছে, যশোর সদর উপজেলার ডাকাতিয়া এলাকায় সেচ প্রকল্পের আওতায় ১৮ সদস্যের একটি কমিটি করে সমিতির মাধ্যমে ১৬০ বিঘা জমি চাষাবাদ করা হচ্ছিল। এলাকার ইজাহার আলীকে সভাপতি ও বজলুর রহমানকে সম্পাদক করে চলছিল ১৮ সদস্যের ওই সেচ প্রকল্পের কমিটি। জমিতে সেচের জন্য সভাপতি ইজাহার আলীর বৈধ ভোগদখলীয় জমিতে গভীর নলকূপ স্থাপন করে চাষাবাদ চলে আসছিল ২০০৬ সাল থেকে। কিন্তু সেচ প্রকল্পের সম্পাদক বজলুর রহমান প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে গোপনে সমিতির নাম ব্যবহার না করে নিজের নামে বিদু্যৎ সংযোগ নেন। বিষয়টি সমিতির লোকজন জেনে গেলে তিনি শালিসে একটি সাদা কাগজে অঙ্গীকার করেন সমিতির সদস্যদের জমাকৃত ১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা খরচ করে বিদু্যৎ লাইনটি তার নিজের নামে করে নিয়েছেন এবং সমিতির নাম ব্যবহার না করে ভুল করেছেন। এজন্য তিনি সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করেন।

এই গভীর নলকূপটিতে ব্যবহৃত বিদু্যৎ লাইন, মিটার বিদু্যতের সেচ অগ্রিম অর্থ প্রদানে তার কোনো অধিকার থাকবে না, এটা সমিতির আওতাভুক্ত সংযোগ। এরপর হঠাৎ বজলুর রহমান সরকারি দপ্তরকে ম্যানেজ করে গভীর নলকূপটি অকেজো দেখিয়ে ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১৮ লঙ্ঘন করে কিছুটা দূরে (২০০ গজ দূরত্বে) গোপনে আর একটি গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য অনুমোদন নেন। এখানেই শেষ নয়, মূল সমিতির গভীর নলকূপটির বিদু্যৎ লাইন কেটে নিজের নতুন নলকূপে আনারও চেষ্টা করছেন। প্রকল্পের সভাপতি ইজাহার আলীর নেতৃত্বে এলাকাবাসী মূল গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ কার্য পরিচালনা করছেন।

এদিকে, বজলুর রহমানের নলকূপকে অবৈধ ও বিধিবহির্ভূত দাবি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০০৫ সালে যৌথভাবে কৃষি কাজের সুবিধার্থে (সেচ প্রকল্পে) হাজী ইজাহার আলীর জমিতে (দাগ নং-এস এ-১০৫, জরিপ ১৩৫ দাগ) একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। অদ্যাবধি ওই নলকূপের সভাপতি ইজাহার আলী ও সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান। কিন্তু ইজাহার আলীর জমির কাগজপত্র গোপন করে নিজের জমির কাগজপত্র পলস্নী বিদু্যৎ অফিসে জমা দিয়ে নিজ নামে বিদু্যৎ লাইন পাওয়ার আবেদন করেছেন বজলুর রহমান। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মূল নলকূপটি অকেজো ও পরিত্যক্ত দেখিয়ে যে লাইসেন্স নিয়েছেন তা সবই সমিতির সব সদস্যদের অজ্ঞাতে। মূল নলকূপ থেকে মাত্র ২শ' গজের মধ্যে বজলুর রহমান একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করেছেন- যা আইনত অবৈধ। লাইসেন্সটি বাতিলের জন্য উপজেলা সেচ কমিটির প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে সভাপতির পক্ষ থেকে।

সমিতির সভাপতি ভুক্তভোগী ইজাহার আলী জানিয়েছেন, বজলুর রহমানের কারণে এলাকার সাধারণ কৃষকরা আতংকে রয়েছেন। আসছে মৌসুমে ধান আবাদ করতে না পারার শংকায় রয়েছেন। কাজেই ২০০৬ সালের মূল নলকূপটির লাইসেন্স প্রদান করতে হবে আর বজলুর তঞ্চকতাপূর্ণ লাইসেন্স বাতিল করতে হবে।

তবে, অভিযোগ অস্বীকার করে প্রকল্পের সম্পাদক বজলুর রহমান জানিয়েছেন, পুরানো নলকূপটি অকেজো, পরিত্যক্ত ও পানি ওঠে না। বালি ও কাঁদা মাটি ওঠে। কৃষকদের চাষে সমস্যা হচ্ছে। যে কারণে পাশে নতুন করে বোরিং করা হয়েছে তার নিজের জমিতে। প্রতারণার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি বৈধভাবেই লাইসেন্স নিয়েছেন, কৃষকের সেচ কাজে ভূমিকা রাখতে চান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে