সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রজাপতির রঙিন ডানায় দিনভর মুগ্ধতা

শিহাব উদ্দিন, জাবি
  ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

'প্রজাপতি' প্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। প্রকৃতিতে রয়েছে হরেক রকমের বর্ণিল প্রজাপতি। রঙে আর বৈচিত্র্যে প্রজাপতির তুলনা শুধু প্রজাপতিই। এদের নিয়ে মানুষের জল্পনা-কল্পনা দীর্ঘদিনের। প্রজাপতি নিয়ে হাজারো কবিতা, গল্প ও গানে ভাবাবেগ প্রকাশ করেছেন সাহিত্যিকেরা। প্রতিটি রঙিন পাখায় ফুটে ওঠে হাজারো জীবন্ত ছবি। যে ছবি শব্দ জোগায় সাহিত্যিকের হৃদয়ে। ছোটবেলায় এসব প্রজাপতির ডানা ছুঁতে ছোটেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে আধুনিকতা ও নগরজীবনের বিলাসিতায় দ্রম্নতগতিতে কমেছে প্রজাপতির সংখ্যা। তবে বর্ণিল এই প্রজাপতি সংরক্ষণে এখনো চারদিকে নানা আয়োজন চোখে পড়ার মতো। এমনি আয়োজনের মধ্যে অন্যতম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজাপতি মেলা।

প্রিয় পতঙ্গের প্রতি ভালোবাসা জানাতে এবং প্রজাপতি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শুক্রবার ১৩তম জাবি ক্যাম্পাসে আয়োজিত হলো প্রজাপতি মেলা-২০২৩। প্রজাপতি সংরক্ষণ কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর এই মেলা আয়োজিত হয়ে আসছে। 'উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি' স্স্নোগানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কীটতত্ত্ব শাখার উদ্যোগে এই মেলার আয়োজন করা হয়। ইট-পাথরে ঘেরা শহর থেকে একটুখানি হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে অনেকেই ছুটে এসেছেন প্রকৃতির কোলে রঙ ছড়ানো এই পতঙ্গটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে। মেলায় ঘুরতে আসা ছোট-বড় হাজারো মানুষের ভিড়ে জমজমাট হয়ে ওঠে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ প্রাঙ্গণ।

শুক্রবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে প্রজাপতি মেলার উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ-প্রকৃতি সংরক্ষণে বর্তমান প্রশাসন সব ধরনের চেষ্টা করছে। পরিবেশ-প্রকৃতি ভালো থাকলে মানুষ ভালো থাকবে। প্রকৃতির সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার রক্ষার জন্য সবাইকে আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে।

এবারের মেলায় দিনব্যাপী আয়োজনের মধ্যে ছিল সচেতনতা বিষয়কর্ যালি, প্রজাপতির গল্পে পাপেট শো, শিশু-কিশোরদের জন্য প্রজাপতি-বিষয়ক ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা এবং প্রজাপতি ও প্রকৃতিবিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির হাট দর্শন, প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি উড্ডয়ন, প্রজাপতি সম্পর্কিত

বারোয়ারি বিতর্ক প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি-বিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী ইত্যাদি। এছাড়াও প্রজাপতি সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধিতে মেলায় স্থাপিত হয়েছে বিভিন্ন স্টল। যেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো আগত দর্শনার্থীদের প্রকৃতি রক্ষায় প্রজাপতির গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত করেন।

মেলায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় ছিল প্রজাপতির হাট দর্শন। অডিটোরিয়ামের ঠিক সামনেই স্থাপন করা হয়েছে এই হাট। হরেক রকমের বাহারি ফুলের চারপাশে সাদা জাল দিয়ে ঘেরা। এমন হরেক রকমের ফুল গাছ দিয়ে বোঝানো হচ্ছে প্রজাপতির টিকে থাকা ও বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশকে। এর মাঝে রঙিন ডানা ঝাপটে ওড়াওড়ি করছে বর্ণিল প্রজাপতি। মুগ্ধ নয়নে এসব প্রজাপতির ওড়াওড়ি দেখছে দর্শনার্থীরা। ছোট্ট শিশু-কিশোররা আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠছে এসব প্রজাপতি দেখে।

ঢাকা থেকে প্রজাপতি মেলা দেখতে আসা শিশু তাইফা নুর বলেন, প্রজাপতি দেখতে খুবই ভালো লাগে। গ্রামে গেলে প্রজাপতি দেখতে পাই। কিন্তু ঢাকায় আর দেখা যায় না। আজকে এখানে এসে নানা রঙ-বেরঙের প্রজাপতি দেখছি। খুবই ভালো লাগছে।

বন্যপ্রাণী ও প্রজাপতি সংরক্ষণে সার্বিক অবদানের জন্য এবারের প্রজাপতি মেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল ইসলামকে বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জহির রায়হানকে বাটারফ্লাই ইয়াং ইনথুসিয়াস্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এছাড়াও প্রথমবারের মতো তিনজন প্রসিদ্ধ সাংবাদিককে বাটারফ্লাই মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে। প্রজাপতি সংরক্ষণে সচেতনতা সৃষ্টিতে সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে অভূতপূর্ব অবদান রাখায় এ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে।

মেলার আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, প্রজাপতি সংরক্ষণবিষয়ক সচেতনতা এবং প্রকৃতিতে প্রজাপতির গুরুত্ব তুলে ধরতে আমরা এই মেলার আয়োজন করে থাকি। প্রজাপতি যে শুধু পরিবেশের শোভাবর্ধক তা নয়। বরং পরাগায়নেও প্রজাপতি অসামান্য অবদান রাখে। প্রজাপতি টিকে থাকলে প্রকৃতি সুন্দর থাকবে। তাই প্রতিটি সচেতন মানুষের প্রজাপতি রক্ষায় এগিয়ে আসা উচিত।

২০১০ সাল থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর আয়োজিত হয়ে আসছে প্রজাপতি মেলা। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১১০ প্রজাতির প্রজাপতি ছিল। তবে বিগত কয়েক বছরে এই সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ৫৭ প্রজাতির প্রজাপতি পাওয়া যায়। প্রজাপতির বংশবিস্তারের জন্য অনুকূল ঝোপঝাড় কমে যাওয়ায় প্রজাপতির সংখ্যা দ্রম্নত গতিতে কমছে বলে জানান গবেষক অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন। ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য রক্ষায় প্রজাপতি সংরক্ষণের প্রতি সব নাগরিকের সচেতন হওয়ার প্রতি বিশেষ আহ্বান জানান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে