সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
তাজরীন ট্র্যাজেডির ১১ বছর

ন্যায্য ক্ষতিপূরণ ও বিচার না পাওয়ায় আক্ষেপ

নিহতদের স্মরণে স্বজন-আহত শ্রমিকদের শ্রদ্ধা পর্যাপ্ত চিকিৎসাসহ পুড়ে যাওয়া ভবনটি সংস্কার ও পুনর্বাসনের দাবি
যাযাদি ডেস্ক
  ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
আপডেট  : ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ১১:০৭

পোশাক কারখানার অন্যতম কালো অধ্যায় তাজরীন ট্র্যাজেডি। ১১ বছর আগে এই দিনে তাজরীন ফ্যাশনের অগ্নিকান্ডে ১১৭ জন শ্রমিক আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়। দিনটি স্মরণে ও নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে পুড়ে যাওয়া ভবনটির সামনে সমবেত হন নিহতের স্বজন, আহত শ্রমিক ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। শুক্রবার সকাল থেকেই নিহত শ্রমিকদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তারা। এ সময় কারখানা ফটকে গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সুয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ শ্রম ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পোশাক-শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন, গার্মেন্টস টেইলার্স ওয়ার্কার্স লীগসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা জানান স্বজন, আহত শ্রমিক, সাধারণ শ্রমিক ও শিল্প পুলিশও। নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও নীরবতা পালন করে মোনাজাত করা হয়। পরে শ্রমিক নেতারা বিভিন্ন স্স্নোগান দেন। শ্রমিক নেতারা আক্ষেপ করে বলেন, শতাধিক শ্রমিক নিহতের আজ ১১ বছর হয়ে যায়। কিন্তু খুনি মালিকের কোনো শাস্তি হয়নি। আহত শ্রমিক ও নিহতের স্বজনরা তাদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত। আহতরা আজ কর্মক্ষমতা হারিয়ে অন্যের গলগ্রহ। রোজগার করতে না পারায় তারা আজ বেঁচে থাকার তাগিদে ধুঁকছেন। আজও আগুনের ক্ষত লেগে আছে আহতদের গায়ে। শ্রমিকদের এক জীবনের ক্ষতিপূরণ ও আহতদের পর্যাপ্ত চিকিৎসাসহ পুড়ে যাওয়া ভবনটি সংস্কার করে হাসপাতাল নির্মাণের দাবি জানান তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন, ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগ, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। এদিকে, তাজরীন গার্মেন্টস দুর্ঘটনার ১১ বছর উপলক্ষে ১০ দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছে শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম (এসএনএফ)। শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, তাজরীন গার্মেন্টস দুর্ঘটনার আজ ১১ বছর। যেখানে অগ্নিদগ্ধ হয়ে যে শ্রমিকরা মারা গেছেন তাদের পরিবার আজও ক্ষত স্মৃতি বেয়ে বেড়াচ্ছে। আহত হয়েছেন অসংখ্য শ্রমিক, সেই ক্ষত এখনো শ্রমিকদের গায়ে লেগে আছে। এ দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা আজও তাদের ক্ষতিপূরণ পায়নি ও পুনর্বাসন হয়নি। তারা বলেন, শুধু তাজরীন গার্মেন্টস ও রানা পস্নাজা দুর্ঘটনা নয়। দেশে এখনো শ্রমিকরা নিপীড়নের শিকার। ন্যায্য অধিকার চাইতে গেলে তাদের গুলি করা হচ্ছে। জেলে রেখে অত্যাচার করা হচ্ছে। সম্প্রতি মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনেও শ্রমিকদের ওপর প্রশাসন নির্বিকারে অত্যাচার চালিয়েছে। তবুও তাদের প্রাপ্য মজুরি নিশ্চিত হয়নি। আজকের মানববন্ধনে আমরা সব শ্রমিকের জন্য নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবি জানাই। এ সময় জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- ১. তাজরীন ও রানা পস্নাজাসহ সারাদেশের বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ভাইবোন ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আইএলও কনভেনশন ১২১ এবং মারাত্মক দুর্ঘটনা আইন ১৮৫৫-আইনের আলোকে সারা জীবনের আয়ের ক্ষতির ভিত্তিতে ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আদালতের আদেশে প্রদত্ত ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ২. প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক নির্বিশেষে সব শ্রমিককে শ্রম আইনের আওতায় আনতে হবে। ৩. আন্তর্জাতিক আইন ও কনভেনশন, মারাত্মক দুর্ঘটনা আইন এবং উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুসরণে ক্ষতিপূরণের জাতীয় মানদন্ড তৈরি করতে হবে। ৪. আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। ৫. ঝুঁকিপূর্ণ কর্মক্ষেত্রসমূহ পরিদর্শনে দেশব্যাপী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা বা ঝটিকা পরিদর্শন ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং সবার জন্য নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করতে পরিদর্শন ব্যবস্থাকে জোরদার করতে হবে। ৬. পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি হাসপাতালে বিশেষ ইউনিট ও বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং সব শ্রমিককে বিমার আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ৭. কর্মক্ষেত্রের সব দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের দ্রম্নত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। দুর্ঘটনার অবহেলাজনিত ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে বা অন্যান্য সব কারণ নির্ণয় করতে হবে, তদন্ত রিপোর্ট জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। ৮. শ্রমিকসহ সব মানুষের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় সংস্কৃতি গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। ৯. প্রতিটি শিল্প-কারখানায় শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন ও এর কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। শ্রম সংক্রান্ত আইন ও বিধিবিধান লঙ্ঘনকারীর উপযুক্ত শাস্তির বিধান করতে হবে। ১০. ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত মামলাসহ শ্রমিকদের সব মামলা দ্রম্নত নিষ্পত্তিতে সংশ্লিষ্টদের অধিক সংবেদনশীল হতে হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের সভাপতি হামিদা হোসাইন, কার্যকরী সভাপতি, আব্দুল ওয়াহেদসহ বিভিন্ন গার্মেন্টস শ্রমিক নেতারা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে