শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

জানুয়ারি পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তায় থাকবে নির্বাচন কমিশন অফিস

বিশেষ নিরাপত্তায় থাকবেন ইসি কর্মকর্তারা সার্ভার আরও সুরক্ষিত রাখার নির্দেশ
গাফফার খান চৌধুরী
  ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
জানুয়ারি পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তায় থাকবে নির্বাচন কমিশন অফিস

আগামী বছরের জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থাকবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) অফিস। পরিস্থিতি অনুযায়ী নিরাপত্তার মেয়াদ আরও বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে কমিশনের কর্মকর্তারাও থাকবেন কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে। কমিশনের সার্ভার সুরক্ষিত রাখতে বাড়তি একদল প্রযুক্তিবিদ কাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, গত ১৫ নভেম্বর থেকে বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রয়েছে নির্বাচন কমিশন ভবন। ভবনের চারদিকে আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ভবনের পশ্চিম দিকে অবস্থিত পরিবেশ অধিদপ্তরের সামনে, পূর্ব দিকে এলজিডিই ভবন, উত্তরে সরকারি কর্মকমিশন আর দক্ষিণে

বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) সামনের রাস্তা পুরোপুরি কাঁটাতারের বস্নক ফেলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ব্যারিকেডে মোতায়েন রয়েছে আনসার ও পুলিশ। তাদের সঙ্গে কাজ করছেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। ইতোমধ্যেই আশপাশের এলাকার সব ভাসমান দোকানপাট ও অস্থায়ী স্থাপনা উচ্ছেদ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি নিষিদ্ধ করা হয়েছে সর্বসাধারণের প্রবেশ।

নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন ভবন ঘিরে এমন নিরাপত্তা থাকবে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে এর মেয়াদ বাড়তে পারে। নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাড়তি কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে পরিচয়পত্র ছাড়া কাউকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। নতুন করে কোনো দোকানপাট বসতে দেওয়া হচ্ছে না। অপরিচিত লোকজনকে তলস্নাশি অব্যাহত আছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেকোনো হামলা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ বা যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতেই এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, শুধু নির্বাচন কমিশন নয়, কমিশনের কর্মকর্তারাও রয়েছেন কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে। দেশের প্রতিটি নির্বাচন কমিশন অফিস ও কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদেরও অবাধ মেলামেশার বিষয়ে বাড়তি নজরদারি চলছে। নির্বাচন কমিশন থেকে কোনো ধরনের স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁসের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তারই ধারাবাহিকতায় সারাদেশে যানবাহনে অগ্নিসংযোগসহ পুলিশকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটছে। সেই দিক বিবেচনা করে নির্বাচন কমিশনের অফিসে বা কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

\হদেশের একজন খ্যাতিমান প্রযুক্তিবিদ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ইতোপূর্বে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর থেকে তথ্য ফাঁস হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি জেলা পর্যায়েরও বিভিন্ন সরকারি দপ্তর থেকে তথ্য ফাঁস হওয়ার সত্যতা মিলেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেই তথ্য ফাঁসের ঘটনাগুলো ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকম মনিটরিং সেন্টার) থেকেও তথ্য ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠেছে।

যদিও এনটিএমসির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান জানিয়েছেন, এমন খবর সঠিক নয়। গুজব ছড়িয়ে এনটিএমসি সম্পর্কে দেশবাসীর মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব জন্ম দিতেই একটি গোষ্ঠী তথ্য ফাঁসের গুজব ছড়িয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই একটি গোষ্ঠী এসব গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে কাজের জন্য যুক্ত একজন প্রযুক্তিবিদ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, তথ্য ফাঁসের পর সরকারের তরফ থেকে নির্বাচন কমিশনের সার্ভার নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়েছে। কমিশনের সার্ভার থেকে তথ্য চুরি ঠেকাতে একদল উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রযুক্তিবিদকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। দলটি নির্বাচন কমিশনের সার্ভার চব্বিশ ঘণ্টা মনিটরিং করছে। এমনকি কোনো হ্যাকার গ্রম্নপ যাতে কমিশনের সার্ভার হ্যাক করতে না পারে, এজন্য সার্বিক প্রযুক্তি রাখা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সার্ভার স্টেশন পুরোপুরি আপডেট করা হয়েছে। এজন্য কমিশনের সার্ভার প্রায় দেড় মাস বন্ধ রাখা হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, চলতি বছর মার্কিন প্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের একটি ওয়েবসাইট থেকে লাখ লাখ বাংলাদেশির তথ্য ফাঁস হয়েছে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সাইবার অ্যাটাক ও ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের ঘটনা মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। রেজিস্ট্রার জেনারেল, বার্থ ও ডেথ রেজিস্টেশন, বিডিআরআইএস অফিস থেকে প্রায় পাঁচ কোটি নাগরিকের তথ্য ফাঁস হয়েছে। পরবর্তীতে সরকারের তরফ থেকে গঠিত কমিটি ঘটনার তদন্ত করে। তদন্তে দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে সরকারি ওয়েবসাইট থেকে তথ্য ফাঁসের চিত্র ওঠে আসে। অথচ চলতি বছরের প্রথম দিকেই সরকারি ওয়েবসাইট থেকে তথ্য ফাঁসের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে সরকারের সকল প্রতিষ্ঠানকে আগাম সতর্ক করেছিল সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো।

দেশের একজন শীর্ষ প্রযুক্তিবিদ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দীর্ঘ দিন ধরেই দেশের অধিকাংশ সরকারি ওয়েব সাইটগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা তুলনামূলক অনেক দুর্বল ছিল। সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার হ্যাক করে রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটে। এমন ঘটনার পর পরই সতর্ক হলে হয়তো তথ্য ফাঁসের ঘটনা নাও ঘটতে পারত।

উলেস্নখ্য, নির্বাচন কমিশনের নিরাপত্তা কর্মকর্তা জহুরা আক্তার বেগম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, নির্বাচন কমিশনের অধীন সব প্রকল্প, নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মিডিয়া কর্মীদের নির্বাচন ভবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সদস্যদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে হবে। পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে রাখতে হবে। অথবা এমনভাবে রাখতে হবে, যাতে সহজেই নিরাপত্তাকর্মীরা তা দেখতে পান। সাদা পোশাকে প্রচুর গোয়েন্দা সদস্যরা কাজ করছেন। এমন পরিস্থিতিতে অফিসিয়াল পরিচয়পত্র ছাড়া নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রবেশ না করার জন্য বলা হয়েছে।

\হশেরেবাংলা নগর থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই নির্বাচন কমিশন ঘিরে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারিও।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে