শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

নিষ্প্রাণ বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ

১৭তম দিনে এসেছে ১৭১টি নতুন বই বই সংলাপ ও রিকশাচিত্র মঞ্চের উদ্বোধন
বীরেন মুখার্জী
  ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
অমর একুশে বইমেলার শিশুপ্রহরে সিসিমপুরের সঙ্গে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে শিশুরা। ছবিটি শনিবার সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যান থেকে তোলা -যাযাদি

ভাষার মাস ফেব্রম্নয়ারির অর্ধেকের বেশি সময় পেরিয়ে অমর একুশে বইমেলা এখন জমজমাট। প্রতিদিন মেলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বইপ্রেমীদের ভিড় থাকছে বইমেলার সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যান অংশে। তবে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। শনিবার বইমেলার ১৭তম দিনেও জমে ওঠেনি বইমেলার এ অংশ। ফলে একাডেমি প্রাঙ্গণে বরাদ্দ পাওয়া স্টলগুলোর বিক্রয়কর্মীরা অলস সময় পার করছেন। তারা বলছেন, বইমেলার মূল মঞ্চ এখানে থাকায় সন্ধ্যার আগে কিছুটা জনসমাগম হলেও বেচাবিক্রি খুব একটা নেই। কিছু ক্রেতা এসে আগে থেকেই নির্বাচনে রাখা বইটি কিনে চলে যান উদ্যানে। শুক্রবার দর্শনার্থীর সংখ্যা দেখা গেলেও শনিবার একেবারেই নেই বললে চলে।

বাংলা একাডেমির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এবারের মেলায় ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ পেয়েছে ৯৩৭টি ইউনিট। এর মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২০টি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে ১৭৩টি স্টল। শনিবার বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মেলার ১৭তম দিনে প্রকাশিত হয়েছে ১৭১টি বই। এর মধ্যে কবিতা ৫৭টি, গল্প ২৩ ও উপন্যাস ৩৩টি ও প্রবন্ধ ১২টি। এ ছাড়া সাহিত্যের অন্য শাখার বই বাকিগুলো।

শনিবার মেলার দুয়ার খুলে দেওয়া হয় সকাল ১১টায়। এদিন মেলার মূলমঞ্চ একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর সঙ্গীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। ক-শাখায় ১ম হয়েছেন নীলান্তী নীলাম্বরী তিতির, ২য় হয়েছেন রোদসী আদৃতা এবং ৩য় হয়েছেন নৈঋতা ভৌমিক। খ-শাখায় ১ম হয়েছেন তানজিম বিন তাজ প্রত্যয়, ২য় হয়েছেন সুরাইয়া আক্তার এবং ৩য় হয়েছেন রোদসী নূর সিদ্দিকী। গ-শাখায় ১ম হয়েছেন কে. এম. মুনিফ ফারহান দীপ্ত, ২য় হয়েছেন নবজিৎ সাহা এবং ৩য় হয়েছেন সরকার একান্ত ঐতিহ্য। বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন সংগীত-ব্যক্তিত্ব শেখ সাদী খান, মো. ইয়াকুব আলী খান এবং চন্দনা মজুমদার।

এদিন সোহ্‌রাওয়ার্দী অংশের শিশুচত্বরে ছিল শিশুপ্রহর। সকাল থেকেই শিশুরা তাদের পিতা-মাতার হাত ধরে মেলায় আসে। সিসিমপুর মঞ্চে ইকরি, মিকরি, হালুমদের সঙ্গে মেতে ওঠে উচ্ছ্বাসে।

প্রতিবছরের মতো এ বছরও মেলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। মেলার সার্বিক নিরাপত্তায় এক হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানালেন ডিএমপির রমনা জোনের এডিসি মো. আখতারুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'ডিএমপির প্রায় প্রতিটি থানার পুলিশ সদস্যকে বইমেলার দায়িত্ব পালন করতে হয়।

শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই মেলার সোহ্‌রাওয়ার্দী প্রাঙ্গণে ছিল ক্রেতা-দর্শনার্থী উপচে পড়া ভিড়। দীর্ঘলাইন ধরে সুশৃঙ্খলভাবে দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করেন। এ সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা দর্শনার্থীদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ তলস্নাশি করেন।

মেলার সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যান অংশ ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায় জমজমাট। সেখানকার স্টলগুলোতে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষের জটলা লেগেই থাকছে। তবে সে তুলনায় অনেকটাই ফাঁকা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। সেখানে ভিড় নেই বইপ্রেমীদের। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শিশুদের বইয়ের স্টল মাইক্রোস ডিজিটালের বিক্রয়কর্মী আয়শা আক্তার বলেন, 'এখানে ভিড় অনেক কম। ক্রেতা তেমন পাচ্ছি না। শুক্রবার লোকজন ছিল কিছুটা, আজ একেবারেই কম। বেচাবিক্রিও নেই।

শনিবার দুপুরে বইমেলার উভয় অংশ ঘুরে দেখা যায়, সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে ক্রেতা-দর্শনার্থীতে ঠাসা। অনেকে বই কিনছেন, কেউবা হ পৃষ্ঠা ১৫ কলাম ১

ঘুরে ঘুরে পছন্দের বই দেখছেন, বই নিয়ে সেলফি তুলছেন। অনেকে নির্ধারিত স্টল বা বইয়ের খোঁজ করছেন।

বিক্রয়কর্মীরা জানান, শনিবার হওয়ায় ভিড় মোটামুটি ভালো। শুক্রবার আরও ভিড় ছিল। অনুভব প্রকাশনীর স্টলের সামনে দেখা মিলল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নওশীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'উদ্যানের গেট দিয়ে মেলায় ঢুকেছি। আগে উদ্যান অংশে ঘুরব। সময় পেলে বাংলা একাডেমিতে যাব।'

শনিবার বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'স্মরণ : শহীদ সাবের' এবং 'স্মরণ : পান্না কায়সার' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে মনির ইউসুফ এবং মামুন সিদ্দিকী। আলোচনায় অংশ নেন গিয়াস উদ্দিন, রতন সিদ্দিকী এবং শমী কায়সার। সভাপতিত্ব করেন রামেন্দু মজুমদার।

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি শান্তা মারিয়া, কথাসাহিত্যিক এশরার লতিফ, শিশুসাহিত্যিক আহসান মালেক এবং প্রাবন্ধিক সুমন শামস্‌।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মিনার মনসুর, হাফিজ রশিদ খান ও আয়শা ঝর্না। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী গোলাম সারোয়ার এবং রফিকুল ইসলাম। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পুঁথি পাঠ করেন কাব্য কামরুল। এ ছাড়া ছিল আবিদা রহমান সেতুর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'বহ্নিশিখা' এবং মঙ্গল চন্দ্র মন্ডলের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'বুলবুল ললিতকলা একাডেমী'-এর পরিবেশনা। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী জীবন চৌধুরী, মীম বাউল, ঝর্ণা বিশ্বাস, ফারুক হোসেন, নাফিসা ইসলাম ফাইজা, অমিয় বাউল এবং তামান্না নিগার তুলি। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন তুলসী সাহা (তবলা), ডালিম কুমার বড়ুয়া (কী-বোর্ড), মো. আতিকুল ইসলাম (বাঁশি), অরূপ কুমার শীল (দোতারা) এবং আকাশ আহমেদ কবির (বাংলা ঢোল)।

বই সংলাপ ও রিকশাচিত্র মঞ্চের উদ্বোধন

অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ প্রথমবারের মতো সংযোজিত 'বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চ'-এর উদ্বোধন হয় বিকাল ৫টায় সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যান অংশের লেকসংলগ্ন মঞ্চে। মঞ্চের উদ্বোধন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা।

আজ রোববার থেকে এই মঞ্চে প্রতিদিন রিকশাচিত্র প্রদর্শনের পাশাপাশি মেলায় প্রকাশিত মানসম্পন্ন নির্বাচিত বই নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান চলবে। অনুষ্ঠানে প্রকাশকরা বইমেলার বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে নিয়মিত আলোচনায় অংশ নেবেন। এ ছাড়া বাংলা একাডেমি প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ বই বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।

এ ছাড়া আজ বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'স্মরণ : জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন স্বরোচিষ সরকার। আলোচনায় অংশ নেবেন লুভা নাহিদ চৌধুরী এবং এম আবদুল আলীম। সভাপতিত্ব করবেন কবি কামাল চৌধুরী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে