শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
২২তম দিনে এসেছে ৭৮টি নতুন বই

বৃষ্টির কবলে বইমেলা

বীরেন মুখার্জী
  ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
বৃহস্পতিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অমর একুশে বইমেলায় পছন্দের বই দেখছেন পাঠকরা -ফোকাস বাংলা

ফাল্গুনের প্রথম বৃষ্টিতে ভিজল অমর একুশে বইমেলা। বৃহস্পতিবার মেলা শুরুর ঘণ্টা যেতে না যেতে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়। এক পর্যায়ে কয়েক মিনিট ধরে ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে ভারী বৃষ্টিও হয়। তবে বৃষ্টিতে মেলার স্টল ভিজলেও বই ভেজেনি। বৃষ্টিতে বইমেলার পরিবেশে স্নিগ্ধতা আসে। ক্রেতা-দর্শনার্থীরাও স্বস্তি নিয়ে ঘোরাফেরা করেন।

এদিন বেলা ৩টায় মেলার দুয়ার খোলার পর ধীরে ধীরে বইপ্রেমীর আনাগোনা বাড়তে থাকে। বিকালের দিকে কিছুটা ভিড় দেখা গেলেও ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির ছোঁয়ায় এলোমেলো হয়ে যায় বইমেলা। ঝড়-বৃষ্টির বাগড়ায় ২২তম দিনে এসে স্বাভাবিক চিত্র হারায়। ভোগান্তিতে পড়েন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই। বই রক্ষায় প্রাণান্তকর ছোটাছুটি করতে দেখা যায় প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীদের। আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় আগে থেকেই কাপড়-পলিথিন দিয়ে বই ঢেকে ফেলে স্টলের বিক্রয়কর্মীরা। এতে বই বাঁচলেও ভিজে যায় স্টল। আয়োজকরা বসন্তের এই বৃষ্টিকেই শত্রম্ন মনে করেন। কেননা বৃষ্টি লাগলেই বই ভিজে যায়, মাঠে পানি জমতে পারে এবং পাঠক থাকে না। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসেও ঢাকাসহ সারাদেশে বৃষ্টির হতে পারে বলে জানিয়েছিল।

বৃষ্টি শুরু হলে অনেকেই ফুড কোড ও বই স্টলের দিকে ছোটাছুটি শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর আবার বৃষ্টি থেমেও যায়। এর আগে মেলা শুরুর দিন অর্থাৎ ভাষার মাসের প্রথম প্রহরে কয়েক মিনিটের ঝরা বৃষ্টি অমর একুশে বইমেলাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল যেন! তবে ওই দিন সন্ধ্যা থেকে পড়তে থাকা বৃষ্টিতে যেন কিছুটা বিড়ম্বনা দেখা দেয়। বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ায় ওই দিনও বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি স্টলগুলোয়। যদিও মেলা প্রাঙ্গণে ঘোরাঘুরি করা লেখক-পাঠকরা বৃষ্টির বাগড়ায় কিছুটা বিব্রত হন।

বৃষ্টিতে কিছু কিছু স্টলের ভেতর পানি ঢুকে পড়ে। কোনো কোনোটির সামনের অংশে জমে যায় পানি। স্টলে থাকা বিক্রয়কর্মীরা বলেন, বৃষ্টির কারণে একটু তো সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। স্টলে পানিও ঢুকে গেছে। তবে সময়মতো বইগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বৃষ্টির সময়টাতে বিক্রি কমে যায়। মেলায় এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এ হালকা বৃষ্টিতে বইমেলার পরিবেশে স্নিগ্ধতাও একটু বেড়েছে।

প্রথমা স্টলের এক বিক্রয়কর্মী জানান, আগে থেকে প্রস্তুত থাকাতে বৃষ্টির কবল থেকে বইগুলো রক্ষা করতে পেরেছি, না হলে অনেক ক্ষতি হতো।

আদর্শ প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী বলেন, 'বই ভেজেনি তবে স্টলের ভেতর কিছুটা পানি প্রবেশ করেছে। পূর্বপ্রস্তুতি থাকায় বৃষ্টি থেকে আমরা বই রক্ষা করতে পেরেছি।'

এবারের বইমেলায় ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৯৩৭টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২০টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৩টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৫১৫টি প্রতিষ্ঠান পেয়েছে ৭৬৪টি ইউনিট। মেলায় ৩৭টি (একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬টি) প্যাভিলিয়ন রয়েছে। এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায় ১৭০টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, মেলার ২২তম দিনে নতুন বই এসেছে ৭৮টি।

মূলমঞ্চের অনুষ্ঠান : বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'আসাদ চৌধুরী' ও 'জাহিদুল হক' শীর্ষক স্মরণ অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে মাহমুদা আকতার এবং কামরুল হাসান। আলোচনায় অংশ নেন দিলারা হাফিজ, বায়তুলস্নাহ কাদেরী এবং মনি হায়দার। সভাপতিত্ব করেন ডক্টর মুহম্মদ সামাদ।

প্রাবন্ধিকরা বলেন, 'কবি আসাদ চৌধুরী ষাটের দশকের বাস্তবতায় একজন ঐতিহ্যমগ্ন কবি। তার কবিতায় জাতীয়তা, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধিকার-চেতনা নান্দনিক সৌকর্য প্রতিভাত হয়েছে। যার ফলে তার কবিতার মাঝে শৈল্পিক বোধের সঙ্গে স্বজাতির প্রতি সুগভীর ভালোবাসা মূর্ত হয়ে উঠেছে।' অন্যদিকে, বাংলা কবিতার ইতিহাসে কবি জাহিদুল হক আপন প্রতিভায় উজ্জ্বল। তিনি ছিলেন একজন ছন্দসচেতন কবি। ছন্দ ও ধ্বনির ওপর দখল তাকে একজন শক্তিমান গীতিকার করে তুলেছিল।'

আলোচকরা বলেন, 'সদাবিনয়ী, মিষ্টভাষী কবি আসাদ চৌধুরী গণমানুষের কবি। বাহান্নর চেতনাকে বুকে ধারণ করে স্বদেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে তিনি দেশ, সমাজ ও সংস্কৃতিকে চিত্রিত করেছেন তার কবিতায়।'

অন্যদিকে, 'বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে কবি জাহিদুল হক তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। কবিতার পাশাপাশি গল্প ও উপন্যাস রচনাতেও তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।'

সভাপতির বক্তব্যে ডক্টর মুহম্মদ সামাদ বলেন, 'কবি আসাদ চৌধুরী ও জাহিদুল হক তাদের কবিতার মধ্য দিয়ে মানুষের প্রতি, দেশের প্রতি, ভাষার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তাই তাদের কবিতা গণমানুষের ভাষ্য হয়ে উঠেছে।'

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি শিহাব সরকার, শিশুসাহিত্যিক তপংকর চক্রবর্তী, গবেষক হোসনে আরা এবং কথাসাহিত্যিক মিলটন রহমান।

বই-সংলাপ ও রিক্সাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চের আয়োজন : দ্রাবিড় সৈকত রচিত 'বাংলার চিত্রকলা : ইতিহাসের বিভ্রান্তি এবং মনন-মনীষায় ইউরোপমুখিনতার মর্মভেদ' এবং 'ফ্রয়েডিয় লিবিডো-তত্ত্ব এবং তান্ত্রিক দেহাত্মবাদ : সমীক্ষণ ও তুলনামূলক বিচার' শীর্ষক দু'টি বই নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান : সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি নূহ-উল-আলম লেনিন, হাসান হাফিজ, সৌরভ সিকদার, ওবায়েদ আকাশ, মেঘ অদিতি, রুহুল মাহবুব এবং বাবুল আনোয়ার। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী হাসিব বিলস্নাহ, মাসুম আজিজুল বাসার, জি এম মোর্শেদ, নাঈমা হোসেন এবং অনন্যা রানী সাহা। এছাড়াও ছিল মিলন কান্তি দে'র রচনায় ও নির্দেশনায় 'দেশ অপেরা'র পরিবেশনায় যাত্রাপালা 'বঙ্গমাতা'।

আজকের অনুষ্ঠান : আজ মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। মেলার শুরু থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত চলবে শিশুপ্রহর। বেলা সাড়ে দশটায় মূলমঞ্চে অমর একুশে উদ্‌যাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আয়োজিত শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হবে। বিকাল ৪টায় মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'আখতারুজ্জামান ইলিয়াস' শীর্ষক স্মরণ অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মামুন হুসাইন। আলোচনায় অংশ নেবেন ওয়াসি আহমেদ এবং জাফর আহমদ রাশেদ। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে