শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

আব্বাসপত্নীর মেয়র হওয়ার নেপথ্যে

রাজশাহী অফিস
  ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
রাবেয়া সুলতানা মিতু

রাজনীতির মাঠে আগে কখনো আব্বাসপত্নী রাবেয়া সুলতানা মিতুর দেখা মেলেনি। ঘর-সংসার আর সন্তান নিয়েই ব্যস্ত থেকেছেন তিনি। কিন্তু এই নারীই প্রথমবার রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। হারিয়ে দিয়েছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী আট প্রার্থীকে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে রাবেয়ার পাওয়া ভোটের ব্যবধান প্রায় দ্বিগুণ।

রোববারের এই উপনির্বাচনের পর ফলাফল নিয়ে এখন বিশ্লেষণ চলছে। রাজশাহীর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে রাবেয়ার এই বিজয়কে একটু আলাদা চোখেই বিচার করা হচ্ছে। কারণ, তার জয়ের নেপথ্যে রয়েছেন স্বামী সাবেক মেয়র আব্বাস আলী। তিনি পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছিলেন। ঘরোয়া আলাপের একটি অডিও ফাঁস হওয়াকে কেন্দ্র করে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং এ ঘটনায় করা মামলার কারণে প্রায় এক বছর তিনি কারাভোগ করেন। তখন তাকে মেয়রের পদ থেকেও বরখাস্ত করা হয়।

স্থানীয় রাজনীতিতে আব্বাস কোণঠাসা হওয়ার পর তার জায়গা দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন দলের নেতা আবু শামা। তিনি পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতির পদও পান। উপনির্বাচনে তিনিও মেয়রপ্রার্থী ছিলেন। তবে ভোট পেয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ৪৮৭টি। আর আব্বাসপত্নী রাবেয়া পেয়েছেন ৬ হাজার ৩০৮ ভোট। আব্বাসবিরোধী হিসেবে পরিচিত পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম রিপন পেয়েছেন ১ হাজার ৩৩৯ ভোট। এক সময়ের জামায়াত-শিবির অধু্যষিত এই এলাকায় সাবেক শিবির নেতা মিজানুর রহমান পেয়েছেন ২ হাজার ৯১৭, আর জামায়াত নেতা সিরাজুল হক পেয়েছেন ৩৮৪ ভোট। নির্বাচনে কয়েকজন প্রার্থীর জামানতও বাজেয়াপ্ত হচ্ছে।

এই উপনির্বাচনে রাবেয়ার বিজয়কে স্বামী আব্বাস আলীর বিজয় হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা। স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন দুলাল বলেন, 'কাটাখালী এলাকাটি একসময় জামায়াত অধু্যষিত ছিল। এবারের উপনির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী মিজানুর রহমানের বাবা জামায়াত নেতা মাজেদুর রহমান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। পৌরসভা গঠনের পর মেয়রও হন। সব মিলিয়ে প্রায় দেড় দশক তিনি কাটাখালীর জনপ্রতিনিধি হিসেবে জামায়াতকে শক্তিশালী করেন। পরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে দুইবার মেয়র হয়ে আব্বাস আলী জামায়াতের সেই শক্তি ভেঙে দেন। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হয়। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাকেই কোণঠাসা করে তার জায়গা দখলের চেষ্টা করেন। এই ভোটে অনেক ষড়যন্ত্রের জবাব দেওয়া হয়েছে। ভোটে আব্বাসের স্ত্রীর জয় মানে আব্বাসেরই জয়।'

আগে কখনো রাজনীতি না করেও রাবেয়ার বিপুল ভোটে এই জয়ের কারণ কী, এমন প্রশ্নে কাটাখালী বাজারের ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম বলেন, 'কারণ শুধু তার স্বামী। স্বামী আব্বাস আলীকে দেখেই পৌরবাসী রাবেয়াকে ভোট দিয়েছে। কারণ, আব্বাস আলী মেয়র থাকা অবস্থায় ভালো কাজ করেছেন। এলাকার উন্নয়ন করেছেন। বিশেষ করে করোনার সময় তিনি যেভাবে খাদ্যসহায়তা দিয়েছেন সে কথা এখনো মানুষের মুখে মুখে। তাকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু থামানো যায়নি। এই ভোটেই সেটার প্রমাণ হয়েছে।'

এই উপনির্বাচনে যে কোনো উপায়ে আব্বাসপত্নীকে ঠেকানোই ছিল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের লক্ষ্য। আইনগত বাধার কারণে আব্বাস প্রার্থী হতে না পারলে ভোটে আসেন তার স্ত্রী রাবেয়া সুলতানা। উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও দাখিলের সময় শেষেও তিনি মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ পান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী আট প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে গিয়ে তার সঙ্গে চোটপাট করেছিলেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের এই আট প্রার্থী একসঙ্গে বলেছিলেন, রাবেয়াকে যেন প্রার্থিতা দেওয়া না হয়। তাদের মধ্যে থেকে সাতজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন। একজন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন। তবে শেষপর্যন্ত তা হয়নি। ভোটে রাবেয়াই মেয়র হয়েছেন।

এখন স্বামীর দিকনির্দেশনা নিয়েই পৌরসভাকে এগিয়ে নিতে চান রাবেয়া। তিনি বলেন, 'আমার স্বামী এই পৌরসভার দুইবারের মেয়র ছিলেন। তার অনেক অভিজ্ঞতা আছে। আমি নতুন হলেও তার দিকনির্দেশনা নিয়ে পৌরসভাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমি কাজ করব।'

রাবেয়ার স্বামী সাবেক মেয়র আব্বাস আলী বলেন, 'ভোটের এই ফল সব ধরনের অন্যায়-অবিচার ও জুলুমের জবাব। এই জয় কাটাখালী পৌরসভার সব মানুষের জয়। তারা যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, এই ভোটের ফল তার প্রমাণ। এখন আগের মতো সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ভূমিদসু্যতা ও ইভটিজিংমুক্ত এলাকা গঠনই আমাদের লক্ষ্য। পৌরসভায় আবার নাগরিক সেবা ফিরে আসবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে