বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

হোলি আর্টিজান দিবসে ফুল দিয়ে নিহতদের স্মরণ

যাযাদি রিপোর্ট
  ০২ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
হোলি আর্টিজান দিবসে ফুল দিয়ে নিহতদের স্মরণ
সোমবার গুলশানের হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্মরণে স্থাপিত 'দীপ্ত শপথ স্মৃতি স্তম্ভে' পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং দূতাবাসের কর্মকর্তারা -স্টার মেইল

নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে হোলি আর্টিজান দিবস পালিত হয়েছে। নিহতদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বাংলাদেশ পুলিশ,র্ যাব ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতসহ দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন তারা। তবে হোলি আর্টিজানে হামলার আট বছর পেরিয়ে গেলেও দেশে এখনো জঙ্গিবাদের বীজ রয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

সোমবার গুলশানের আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্মরণে স্থাপিত 'দীপ্ত শপথ স্মৃতি স্তম্ভে' পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান,র্ যাব মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশীদ, পুলিশের বিশেষ শাখার প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম, ডিএমপির সিটিটিসির (কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম) প্রধানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এছাড়া বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং দূতাবাসের কর্মকর্তারাও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, ৩০তম বিসিএস পুলিশ ফোরাম ও বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন গুলশান থানা

1

ভবনের সামনে নির্মিত 'দীপ্ত শপথ' ভাস্কর্যে পৃথকভাবে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করে। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সবাই এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে নিহতদের স্মরণ করেন।

পরে ডিএমপি কমিশনার পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গি সংগঠনগুলো প্রযুক্তিগত নানা মাধ্যমে সক্রিয়। তাদের ভার্চুয়াল অপপ্রচার রোধ করাই বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য অভিভাবকদের উচিত সন্তানরা কোথায় যাচ্ছে, কাদের সঙ্গে মেলামেশা করছে, মোবাইল বা অনলাইনে কী করছে সে বিষয়ে খেয়াল রাখা। অনলাইনে জঙ্গিদের তৎপরতা এবং তাদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলে ডিএমপির সিটিটিসি (কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম), ডিবি, সিআইডি ও এসবিসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার মনিটরিং করছে।

র্

যাব মহাপরিচালক পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ব্যারিস্টার হারুন অর রশীদ বলেন, বাংলাদেশে আর জঙ্গিবাদের উত্থান হবে না। কারণ জঙ্গিদের তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে আমরা আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় কাজ করছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জঙ্গিরা যেমন তৎপর, তেমনির্ যাবও তৎপর।

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, দেশে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে আছে। হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর জঙ্গি দমনে পুলিশ ব্যাপক তৎপরতা চালিয়েছে। কারণ বিদেশিদের ধারণা ছিল, বাংলাদেশ কোনোদিনই জঙ্গিবাদ থেকে মুক্ত হতে পারবে না। সেটি ভুল প্রমাণিত হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের ওপর কঠোর নজরদারি অব্যাহত আছে।

সিটিটিসি প্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, সাইবার জগতে জঙ্গিদের কিছুটা তৎপরতা আছে। তবে দেশ থেকে জঙ্গিবাদ পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। যে কারণে আত্মতুষ্টিতে থাকার কোনো কারণ নেই। তবে জঙ্গিবাদ ইসু্যতে সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত আছে। ঢাকার সিজেএস আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর দিনদুপুরে মৃতু্যদন্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তারে নানামুখী তৎপরতা অব্যাহত আছে। প্রসঙ্গত, তাদের গ্রেপ্তার করতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে পুলিশের তরফ থেকে।

উলেস্নখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে ঢাকার গুলশানে ৭৯ নম্বর রোডের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় পাঁচজনের একটি সন্ত্রাসী দল অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীরা কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তা, ৯ জন ইতালি, ৭ জন জাপানি, ১ জন ভারতীয়, বাংলাদেশ-আমেরিকার দ্বৈত নাগরিক ১ জন ও ২ জন বাংলাদেশিসহ মোট ২২ জনকে হত্যা করে। নারকীয় হত্যাযজ্ঞের সাক্ষী পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রতিরোধ অভিযানে জীবিত উদ্ধার হয় ৩২ জনকে। যার মধ্যে পুলিশের অভিযানে উদ্ধার হয় ২ জন বিদেশিসহ ১৯ জন। এরপর সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার হয় দেশি-বিদেশিসহ মোট ১৩ জন। সন্ত্রাসী হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে নিহত হন ডিবির সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. রবিউল করিম ও বনানী থানার ওসি মো. সালাহ উদ্দিন খান। পরে সেনাবাহিনীর অপারেশন 'থান্ডার বোল্ড' পরিচালনা করলে আট জঙ্গি নিহত হন। একই সঙ্গে উদ্ধার করা হয় অন্যান্য জিম্মিদের। হোলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলায় পুলিশের আত্মত্যাগ স্মরণ করতে ২০১৮ সালের ১ জুলাই গুলশান থানা ভবনের সামনে 'দীপ্ত শপথ' নামে ভাস্কর্যটি স্থাপন করে পুলিশ।

হোলি আর্টিজান হামলা হামলায় ২০১৯ সালের ৭ ডিসেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইবু্যনাল ৭ জঙ্গিকে মৃতু্যদন্ডের আদেশ দেন। একজনকে খালাস দেন। আসামিরা আপিল করেছেন। গত বছরের অক্টোবরে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শেষে বিচারপতি সহিদুল করিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ ৭ জঙ্গির মৃতু্যদন্ড কমিয়ে আমৃতু্য কারাদন্ডে দন্ডিত করেন। এখনো পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে