শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
'মুক্তিযুদ্ধ ও ছাত্র-জনতার বিপস্নব পরস্পর বিরোধী নয়'

বিতর্কিত কেউ যেন উপদেষ্টার দায়িত্ব না পায় :ফখরুল

যাযাদি ডেস্ক
  ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঙ্গলবার লালমনিরহাটের বড়বাড়িতে শহীদ জিয়া স্মৃতি টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন -সংগৃহীত

বর্তমান সরকারে বিতর্কিত কাউকে যেন উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার দুপুরে লালমনিরহাটের বড়বাড়িতে শহীদ জিয়া স্মৃতি টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, এ সরকার এসেছে একটি সংকটময় মুহূর্তে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে। সংস্কারকাজ সম্পন্ন করতে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে হবে। সহনশীলতা দেখাতে হবে। সব সমস্যা রাজনীতিতে না গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। আমাদেরকেও সহনশীল হতে হবে। যাতে সুন্দর ও শৃঙ্খলভাবে দেশের সব সংস্কার কাজ সম্পন্ন করতে পারে।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার প্রত্যেক সেক্টরকে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে ধ্বংসের দাঁড়প্রান্তে নিয়েছিল। তাই সংস্কার দ্রম্নতই সম্ভব না। যৌক্তিক সময় দেওয়া হলে সংস্কার পরিপূর্ণ হবে। বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য সব সময় ষড়যন্ত্র করেছে, অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে। এই আওয়ামী লীগ প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রায় ৭০০ মানুষকে গুম করেছে। তারা হাজার হাজার মানুষকে গুম করে ও খুন করে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে, একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সরকারকে বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে। তবে নির্বাচিত সরকার এলে বিদ্যমান সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। এ জন্য দরকার নির্বাচন ও সংস্কার।

বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, আলস্নাহর রহমতে ২০২৪ সালে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আধিপত্যবাদকে পরাজিত করা হয়, ফ্যাসিস্টদের পরাজিত করা হয়। আজ আমরা শপথ নিয়েছি, আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আধিপত্যবাদকে রুখে দেব। এর জন্য প্রয়োজনে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলব। আমরা বারবার নির্বাচন নিয়ে কথা বলছি কারণ, আমরা বিশ্বাস করি জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সংস্কার উদ্যোগ সফল হতে পারে না। এ ধরনের অংশগ্রহণ কেবল নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমেই সম্ভব।

লালমনিরহাট জেলা বিএনপির আয়োজনে ২০১৫ সাল থেকে এ ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হয়। এবার ষষ্ঠতম প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রংপুর বিভাগের ৮ জেলা, রংপুর মহানগর সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির ফুটবল দল এ টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করছেন লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু।

এতে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি তাবিথ আউয়াল, বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

'মুক্তিযুদ্ধ ও ছাত্র-জনতার বিপস্নব পরস্পর বিরোধী নয়'

এদিকে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং চব্বিশের ছাত্র-জনতার বিপস্নব পরস্পর বিরোধী নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান। মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত 'সংবিধান সংস্কার' শীর্ষক সেমিনারে তিনি এই মন্তব্য করেন।

আব্দুল মঈন খান বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং চব্বিশের ছাত্র-জনতার বিপস্নব পরস্পর বিরোধী নয়। তারা একে অপরের পরিপূরক মাত্র। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যদি আমরা বিষয়গুলোকে পর্যালোচনা করি, তাহলে সেখানে কিন্তু কোনো সংঘাতের প্রয়োজন নেই। আজকে স্বাধীনতার প্রায় ৫৩ বছর পর এসে আমরা যেখানে উপনীত হয়েছি, সেখানে আমাদের স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করতে হবে, সংঘাতময় রাজনীতিতে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে না।

তিনি আরও বলেন, সংবিধানের জন্য জনগণ নয়, জনগণের জন্য সংবিধান। এই কথাটি যদি আমরা অন্তর থেকে বিশ্বাস করি, তাহলে আজকে যে প্রশ্নটি এসেছে সংবিধান পুনর্লিখন অথবা সংশোধনের মধ্যে আমি কোনো সংঘাত দেখতে পাই না। কারণ, আমাদের মূল উদ্দেশ্য তো সংবিধান নয়, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণ। কাজেই জনগণের কল্যাণের জন্য যা কিছু প্রয়োজন আমরা সেটাই তো করব। প্রয়োজনে সংবিধান পুনর্লিখন অথবা সংশোধন করব। এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এমন একটি সিস্টেম তৈরি করা, যার মাধ্যমে আমরা একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা সৃষ্টি করব। যে রাষ্ট্রব্যবস্থা জনগণের জন্য মঙ্গলজনক হবে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, একটি কল্যাণ রাষ্ট্র সৃষ্টি করা। সেই কল্যাণ রাষ্ট্র সৃষ্টি করার জন্য যে কাজগুলো করা প্রয়োজন, সেই কাজগুলো আমরা করব। সেটা যেই পদ্ধতিতেই হোক না কেন। আমি মনে করি, আমাদের উদ্দেশ্য যদি সঠিক হয়, সৎ হয় এবং সত্যিকার অর্থে যদি আমরা জনগণের মঙ্গলের জন্য কাজ করতে চাই, তাহলে পদ্ধতি কোনো বাধা হয়ে থাকতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, মানব সমাজ পরিবর্তনশীল। যেই সমাজ এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সামনে যেতে পারে না, তারা পিছিয়ে যায়, পরাজিত হয়। বাংলাদেশ কী সেই বালুচরের চোরাবালিতে হারিয়ে যাচ্ছে কিনা? আসুন, আমরা রাজনৈতিক হিসেবে অন্যের সমালোচনা না করে, নিজের সমালোচনা করি। আমাদের রাজনীতির যে পরীক্ষা, সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন- বিপস্নবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ।

'আ'লীগকে ভোটের মাধ্যমে বাতিল করতে হবে'

এদিকে, আওয়ামী লীগকে ক্যান্সেল (বাতিল) করতে হলে জনগণের ভোটের মাধ্যমে করতে হবে, অন্যভাবে নয়- এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, আপনি যদি আওয়ামী লীগকে ক্যান্সেল করে দিতে চান অন্য কোনোভাবে, এগুলো টিকে থাকে না।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে 'টেক ব্যাক বাংলাদেশ : নাগরিক ভাবনা' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভাটির আয়োজন করে ভয়েস অব ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ভোটার রাইটস।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির জন্য সংস্কার নতুন কিছু নয়। খালেদা জিয়া ২০১৬ সালে ভিশন ২০৩০ সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তারেক রহমানও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সব দলের মতামতের ভিত্তিতে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছেন। শুধু সবাইকে নিয়ে নয়, বাস্তবায়নের জন্য ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে থাকা সব দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটা জাতীয় সরকার গঠন করা হবে।

তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে। জনগণের আস্থা নিয়ে সংস্কার করতে হবে। সেটা একমাত্র সম্ভব নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে। অনির্বাচিত কোনো সরকার তাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনা ও দর্শনে সেভাবে সংস্কার করা সুযোগ নেই। যেসব সংস্কারে ঐকমত্য আছে, সেগুলো বাস্তবায়নে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

আমীর খসরু বলেন, বিএনপি শুধু বিপস্নব নয়, বিএনপি সংহতি। বিএনপি জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদের কথা বলছে। আমরা জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে যেটা প্রতিষ্ঠিত করব, সেটাই থাকবে। তাই বিএনপি নতুন বাংলাদেশ গড়তে চায়। গণতন্ত্র অনেক ভুলত্রম্নটি থাকে। স্বাধীন মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই। দেশকে সঠিক ট্রাকে ফিরিয়ে আনতে হবে।

ভয়েস ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ভোটার রাইটসের আহ্বায়ক মোস্তফা কামাল মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন- শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক সহকারী অধ্যাপক ড. এম মুজিবুর রহমান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের রহমতুলস্নাহ প্রমুখ।

'আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে বিএনপি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ'

এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেছেন, দেশকে স্বনির্ভর হিসেবে গড়ে তুলতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সব ধরনের দুঃশাসন ও বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বিএনপি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধ জাতিকে কোনো পরাশক্তিও দমাতে পারে না এবং জাতীয় অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করতে পারে না। আজ গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ হওয়াতেই দেশ ফ্যাসিস্টমুক্ত হয়েছে। যেকোনো কিছুর বিনিময় এই ঐক্য বজায় রাখতে হবে।

মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী কর্মচারী ফেডারেশন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আমাদের মুক্তি ও অনুপ্রেরণা- শীর্ষক এই সভার আয়োজন করা হয় জাতীয় বিপস্নব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে।

দ্রম্নত নির্বাচনী রোডম্যাপ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অন্তর্র্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের দাবি, তারা যেন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করে। কোনো অজুহাতে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণায় বিলম্ব না করারও আহ্বান জানান তিনি।

সভা সঞ্চালনা করেন- ফিরোজুল ইসলাম। হাসানুজ্জামানের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির কুমিলস্না বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া। প্রধান বক্তা ছিলেন- শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন। আরও বক্তব্য রাখেন- শ্রমিকদলের প্রচার সম্পাদক মঞ্জরুল ইসলাম মঞ্জু, শ্রমিক কর্মচারী নেতা রুহুল আমিন, আবু সাঈদ, ফিরোজুল ইসলাম, জুয়েল মোহাম্মদ বিলস্নাল প্রমুখ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে