শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ছোট্ট কক্ষেই তৈরি হচ্ছে উচ্চ শিক্ষার জাল সনদপত্র

প্রতারক চক্র পরিচালনকারী স্বামী-স্ত্রীসহ চারজন গ্রেপ্তার
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৬ মে ২০২৩, ০০:০০

ছোট্ট জরাজীর্ণ কক্ষেই তৈরি হচ্ছে উচ্চ শিক্ষার সনদপত্র ও নম্বরপত্র। আসল কাগজ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এসব। ফলে অনলাইনে যাচাই-বাছাই করার সময় সহসাই ওইসব সনদপত্র বা নম্বরপত্র জাল বা নকল বলে ধরা পড়ে না। এমন প্রতারক চক্র পরিচালনাকারী প্রকৌশলী স্বামী ও তার স্ত্রীসহ চারজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। জব্দ হয়েছে বিপুল পরিমাণ নকল সনদ ও নম্বরপত্র এবং শিক্ষা সংক্রান্ত কাগজপত্র।

শুক্রবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গত ৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় ঢাকার রামপুরার একটি বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় প্রতারক চক্র পরিচালনাকারী ইঞ্জিনিয়ার জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী নুরুন্নাহার মিতুকে। তাদের কাছে পাওয়া গেছে বিভিন্ন পর্যায়ের একাডেমিক সনদপত্র, নম্বরপত্র ও ইনভেলাপসহ কিছু টাকা।

ডিসি ডিবি মশিউর রহমান আরও জানান, বহু বছর ধরে তারা গোপনে অনেক টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন চলমান ও বন্ধ হয়ে যাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষার নকল সনদপত্র, নম্বরপত্র ও নানা ধরনের শিক্ষা সংক্রান্ত কাগজপত্র তৈরি করছিলেন। তারা মূলত গ্রাজুয়েশন ও পোস্ট গ্রাজুয়েশন, বিভিন্ন বোর্ডের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাসের মার্কশিট ও সার্টিফিকেট তৈরি করে বিক্রি করছিলেন।

এই পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, নকল তৈরি করা সার্টিফিকেট ও মার্কশিটগুলো তারা বোর্ড অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরবরাহ করা মূল কাগজ দিয়েই তৈরি করছিলেন। এসব নকল কাগজপত্রকে ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত করা হত। যাতে অনলাইন ভেরিফিকেশনে ধরা না পড়ে। অনলাইন যাচাই-বাছাইয়ে তা ধরাও পড়ত না। কিন্তু গোয়েন্দাদের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে তথ্য ছিল। বহুদিন ধরে গোয়েন্দারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছিলেন। শেষ পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য ও যাচাই-বাছাই শেষে প্রতারক চক্রের হোতা স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারদের দেওয়া তথ্যমতে, শুক্রবার সকাল ৭টায় ঢাকার লালবাগ থানাধীন বড়ঘাট মসজিদ এলাকার কাশ্মিরি গলির একটি বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। সেই বাড়িটির দুটি কক্ষে জাল সনদপত্র তৈরির কারখানার সন্ধান মেলে। সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ডিপেস্নামা ইঞ্জিনিয়ার ইয়াসিন আলী ও বেসরকারি দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির পরিচালক বুলবুল আহমেদ বিপুকে। গ্রেপ্তাররা বাড়িটির দুটি রুম ভাড়া নিয়ে সেখানে দামি ল্যাপটপ, ডেক্সটপ প্রিন্টার, স্ক্যানার, এমবোস মেশিন বসিয়ে রীতিমতো কারখানা স্থাপন করেছিল।

ডিসি মশিউর রহমান জানান, সেখানে পাওয়া গেছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগ্রহ করা বস্ন্যাঙ্ক (লেখাবিহীন খালি) মার্কশিট ও সার্টিফিকেটসহ উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন ধরনের কাগজপত্র। তারা বিভিন্ন ব্যক্তিদের চাহিদা মোতাবেক তাদের নামে সার্টিফিকেট ও মার্কশিট এবং প্রশংসাপত্র তৈরি করে দিতেন। ইঞ্জিনিয়ার ইয়াসিন আলী বিভিন্ন ছাপাখানা থেকে সব রকমের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সংবলিত অতি সুক্ষ্ণ জাল সনদসমূহের কাগজ ছাপিয়ে আনতেন। এরপর তা সবাই মিলে বা যার যার মত বা সম্মিলিতভাবে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করতেন। দেশ-বিদেশে অনলাইনে ভেরিফিকেশন হবে এরকম মার্কশিট, সার্টিফিকেট সরবরাহ করতেন।

ডিসি ডিবি লালবাগ মশিউর রহমান আরও জানান, পুরো প্রতারণার সঙ্গে বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও বোর্ডের কিছু দায়িত্বশীল ব্যক্তির নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। যারা অনলাইন ভেরিফিকেশন করে সার্টিফিকেট বিক্রির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া এমন প্রতারক চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। গ্রেপ্তার নুরুন্নাহার মিতু ছাড়া বাকিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা আছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে