কাতারে ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের পর আরও একটি বিশ্বকাপের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল লিওনেল মেসির উত্তরসূরিরা। তবে জার্মানির কাছে সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে কপাল পোড়ে জুনিয়র আলবিসেলেস্তেদের। পরে মালির কাছে হেরে চতুর্থ হয়ে ফিরলেও ঠিকই আলো কেড়েছেন আগুস্তিন রুবের্তো।
অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে হ্যাটট্রিক করেন আগুস্তিন রুবের্তো। তবে তার দল আর্জেন্টিনা ম্যাচটি হেরে যায়। শিরোপার স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে গেলেও ব্যক্তিগত সাফল্যে ঠিকই ভাস্বর হয়েছেন রুবের্তো। 'দ্য জায়ান্ট' নামে খ্যাতি পাওয়া এই কিশোর ৮ গোল করে হয়েছেন আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা। জিতেছেন গোল্ডেন বুট। সেই সঙ্গে নাম লিখিয়েছেন লিওনেল মেসি, সার্জিও অ্যাগুয়েরোর মতো কিংবদন্তিদের পাশে। মেসি-অ্যাগুয়েরোও এমন বয়সভিত্তিক বিশ্বকাপের আসরেই আলো ছড়িয়ে জানান দিয়েছিলেন আগমনের। এখন পর্যন্ত মোট পাঁচজন আর্জেন্টাইন বয়সভিত্তিক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন। যে তালিকায় মেসি-অ্যাগুয়েরোর পর সবশেষ সংযোজন রুবের্তো। তিনি বাদে বাকিদের কীর্তিটা অবশ্য অনূর্ধ্ব
২০ বিশ্বকাপে।
রামন দিয়াজ (অনূর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপ, ১৯৭৯) : এটি ছিল অনূর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসর। এই আসর স্মরণীয় হয়ে আছে দিয়েগো ম্যারাডোনার আত্মপ্রকাশের আসর হিসেবে। ম্যারাডোনার জাদুকরি নৈপুণ্যে টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছিল আর্জেন্টিনা। সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন ম্যারাডোনা। তবে ফুটবল ঈশ্বরকে ছাপিয়ে আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন রামন দিয়াজ। করেছিলেন ৮ গোল।
সে বছরেই আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে অভিষেক হয় দিয়াজের। ক্যারিয়ার অবশ্য দীর্ঘায়িত হয়নি। ১৯৮২ সালে জাতীয় দলে শেষবার সুযোগ পাওয়ার আগে ২২ ম্যাচে করেছেন ১০ গোল। ক্লাব পর্যায়ে বেশিরভাগ সময় খেলেছেন রিভার পেস্নটে। খেলেছেন ম্যারাডোনার মতোই নাপোলিতে। এছাড়াও খেলেছেন ইন্টার মিলান, মোনাকো, ফিওরেন্টিনার মতো ক্লাবে।
হাভিয়ের স্যাভিওলা (অনূর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপ, ২০০১) : 'নতুন ম্যারাডোনা' নামে আর্জেন্টিনার ফুটবল আকাশে উদয় হয়েছিল স্যাভিওলার। ২০০১-এর অনূর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপ দিয়েই আগমনী গান শুনিয়েছিলেন তিনি। সে বিশ্বকাপে ১১ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার পাশাপাশি সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছিলেন তিনি। রাতারাতি বনে গিয়েছিলেন তারকা। দীর্ঘ ৩২ বছর পর কোনো আর্জেন্টাইন সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন।
আর্জেন্টিনার মূল দলে অবশ্য আগেই অভিষেক হয়েছিল স্যাভিওলার। ২০০০ সালে অভিষেকের পর খেলেছেন ২০০৭ সাল পর্যন্ত। ৩৯ ম্যাচ খেলে করেছেন ১১ গোল। ক্লাব পর্যায়েও উজ্জ্বল ছিলেন তিনি। তিনিই সর্বশেষ খেলোয়াড় যিনি বার্সেলোনা থেকে সরাসরি রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিয়েছিলেন। বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়াও তিনি খেলেছেন সেভিয়া, বেনফিকা, মোনাকো, রিভার পেস্নটের মতো ক্লাবে। ২০০৪ সালে পেলের নির্বাচিত 'ফিফা হান্ড্রেড'-এ জায়গা পান তিনি। যেখানে তিনি জীবিত ১২৫ জন সেরা খেলোয়াড়কে বেছে নিয়েছিলেন।
লিওনেল মেসি (অনূর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপ, ২০০৫) : এই বিশ্বকাপেই নিজের আগমনের ঘোষণা দেন মেসি। ৬ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতার পাশাপাশি সেরা খেলোয়াড়ও হন মেসি। সে আসরে মিসর, কলম্বিয়া, স্পেন এবং ব্রাজিলের বিপক্ষে একটি করে গোল করেন তিনি। এরপর ফাইনালে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোল করেন মেসি। কাতার বিশ্বকাপেও সেরা গোলদাতা হওয়ার পথে ছিলেন মেসি। ফাইনাল পর্যন্ত করেন ৭ গোল। তবে কিলিয়ান এমবাপে ফাইনালে হ্যাটট্রিক করে ৮ গোল নিয়ে গোল্ডেন বুট জিতে নেন। মেসি অবশ্য দ্বিতীয়বারের মতো সেরা খেলোয়াড়ের গোল্ডেন বল জেতেন।
সার্জিও অ্যাগুয়েরো (অনূর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপ, ২০০৭) : রুবের্তোর আগে বয়সভিত্তিক বিশ্বকাপে সবশেষ আর্জেন্টাইন হিসেবে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন সার্জিও অ্যাগুয়েরো। সেবারই বয়সভিত্তিক বিশ্বকাপে শেষবারের মতো বিশ্বকাপ জেতে আর্জেন্টিনা। ৬ গোল করে মেসির মতোই সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন অ্যাগুয়েরো। এরপর জাতীয় দল, অলিম্পিক দলে মেসির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন। অলিম্পিকে দলকে স্বর্ণ এনে দিলেও জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা হয়নি অ্যাগুয়েরোর। ২০২১-এর কোপা আমেরিকায় চ্যাম্পিয়ন হওয়াটাই জাতীয় দলের হয়ে তার একমাত্র সাফল্য।
১০১ ম্যাচ খেলে ৪১ গোল করেন। এছাড়া ক্লাব পর্যায়ে ম্যানচেস্টার সিটি ছাড়াও অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার হয়ে খেলেছেন। তাকে ম্যানচেস্টার সিটির ইতিহাসে সেরা খেলোয়াড় হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার তিনি।