শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১

পাকিস্তানে সিরিজজয়ী ক্রিকেটারদের সংবর্ধনা দিলেন প্রধান উপদেষ্টা

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
পাকিস্তানে সিরিজজয়ী বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে বৃহস্পতিবার তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে সংবর্ধনা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস -সংগৃহীত

সাদা পোশাকে পাকিস্তানের বিপক্ষে অতীত অভিজ্ঞতা ছিল বরাবরই তিক্ত। সেই তিক্ততাই এবার রূপ নিয়েছে মধুর ফলাফলে। পাকিস্তানের মাটিতে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। দুই টেস্টের দুটিতেই দাপট দেখিয়ে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। তাও আবার প্রথমবার।

আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ দুই টেস্ট খেলতে পাকিস্তান সফর করে বাংলাদেশ। এই সফরে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জেতে লাল-সবুজরা। প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটের বিশাল জয়ের পর দ্বিতীয় টেস্টেও এসেছে ৬ উইকেটের অসামান্য এক জয়। এমন ইতিহাস গড়া সিরিজের জন্য বৃহস্পতিবার সংবর্ধনা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস।

গতকাল দুপুরে অনুশীলন শেষে তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ে যমুনায় যান ক্রিকেটাররা। সঙ্গে যান বিসিবির নতুন সভাপতি ফারুক আহমেদসহ বিসিবির কয়েকজন পরিচালক। উপদেষ্টার কার্যালয়ে ক্রিকেটারদের জন্য মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়। যেই মধ্যাহ্নভোজে অংশ নিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও।

সাধারণভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেটে একটি বিষয় প্রচলিত আছে যে, সংবর্ধনা মানেই পুরস্কার। প্রধান উপদেষ্টার সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ঘিরে এমন আলোচনাই হচ্ছিল। ক্রিকেটাররা হয়তো গাড়ি, বাড়ি, জমি কিংবা টাকা-পয়সা পেতে যাচ্ছেন! কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জেতার পর বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের সংবর্ধনা দেওয়া হলেও সেসব কোনো পুরস্কারের ঘোষণা আসেনি। যদিও ক্রিকেটার থেকে শুরু করে বিসিবির পরিচালকরাও বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ক্রিকেটারদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা পাকিস্তানে ক্রিকেটারদের এ সাফল্যকে ঐতিহাসিক বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, পুরো জাতি তাদের অর্জনে গর্বিত। খেলোয়াড়দের উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, 'জয়ের পর অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে সবার সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং জাতির পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম।'

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া কঠিন সময়ে সাফল্য আনার জন্য খেলোয়াড়দের স্বাগত জানিয়েছেন।

এ সময় প্যারিস অলিম্পিকে একজন উপদেষ্টা এবং রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করার কথা উলেস্নখ করেন ড. ইউনূস। এ ছাড়াও একটি জাতিকে একত্রিত করতে খেলাধুলার শক্তির কথা খেলোয়াড়দের স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। জাতীয় দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ড. ইউনূসকে তার কার্যালয়ে এ সংবর্ধনা আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, 'প্রত্যেক খেলোয়াড় এখানে আসতে পেরে খুশি। এটি সত্যিই আমাদের অনুপ্রাণিত করবে।'

দলের সাফল্য নিয়ে শান্ত বলেন, 'খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফদের কঠোর পরিশ্রম পাকিস্তানে তাদের সাফল্যের জন্য মুখ্য ছিল।'

বিসিবির নবনির্বাচিত পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেছেন, 'আমাদের সমাজের একটি বড় ভুল ধারণা হচ্ছে, সংবর্ধনা মানেই নানা পুরস্কার ঘোষণা। ওনার মতো (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) একজন মানুষের সঙ্গে আমরা সাক্ষাৎ করতে পেরেছি, সেটাই তো অনেক বড় পুরস্কার। উনি সবার সামনে এসে দাঁড়ালেন, কথা বললেন- এটাই তো অনেক বড় কিছু। এর চেয়ে বড় পুরস্কার আর কী হতে পারে। উনি বাংলাদেশ সরকারের প্রধান, পুরো জাতিকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। এর চেয়ে বড় ট্রিট তো আর কিছুতে হতে পারে না।'

বোর্ড পরিচালক ফাহিমের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন জাতীয় দলের সিনিয়র এক ক্রিকেটার। তিনি বলেছেন, 'উনি আমাদের যেভাবে মোটিভেট করলেন, এটাই তো পুরস্কার। আমরা সবাই দারুণ কিছু সময় ওনার সঙ্গে কাটালাম। আমি বলব যে, ওনার কথাগুলো আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম শিক্ষা হয়ে থাকবে। তার কথাই আমাদের কাছে বড় পুরস্কার।'

মধ্যাহ্নভোজ শেষে ড. মুহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করেন ক্রিকেটার শরিফুল ইসলাম। যেখানে প্রধান উপদেষ্টা ও ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে একই ফ্রেমে বন্দি হন ক্রিকেটাররা। একই ফ্রেমে ছিলেন বিসিবিপ্রধান ফারুক আহমেদও।

ছবিটির ক্যাপশনে শরিফুল লিখেছেন, 'মাননীয় উপদেষ্টা সত্যিকারের একজন খেলাপ্রেমী মানুষ। ইনশাআলস্নাহ দেশের পাশাপাশি ক্রিকেটকে অনেক দূর নিয়ে যাবেন।'

এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্ট জয়ের পর নাজমুল হোসেনকে ফোন করেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশ অধিনায়ককে ফোনে সেদিন প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, 'আমার ও সরকারের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন। পুরো জাতি তোমাদের নিয়ে গর্বিত।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে