গ্রামবাংলায় এখনও কথাটা বেশ জোরেশোরেই শোনা যায়-'পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে'। এই প্রবাদটা বেশ খাটে মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদের বেলায়। বয়স যতই বাড়ছে মাহমুদউলস্নাহর তার পারফরম্যান্সের ধার যেন ততই বাড়ছে। তিনি যে কেবল নিজে পারফরম্যান্স করছেন তা নয়; ২২ গজে সতীর্থদেরও পাঠ নিচ্ছেন। কঠিন পরিস্থিতিতে রান করে চাপ কাটানোর উপায় বাতলে দিচ্ছেন, যা অনুসরণ করে সিদ্ধহস্ত হচ্ছে তরুণ তানজিম হাসান সাকিব, জাকের আলীরা। আর আঁখেরে লাভটা হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের।
মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ নিজের কাজটা নীরবে করতে ভালোবাসেন। যতক্ষণ ক্রিজে থাকেন, ভরসার একটা জায়গা তৈরি হয়। বাংলাদেশে পঞ্চপান্ডব যুগ এখন অনেকটাই অতীত। মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউলস্নাহ টিকে আছেন। ৩৮ বছর বয়সে এসে নিজেকে যেন নতুন করে গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাইলেন্ট কিলার।
সদ্য শেষ হওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে এর আগে দুটি সিরিজে বাংলাদেশ ছিল অপরাজেয়। কিন্তু ভাটা পড়ল তাতে। তিন ম্যাচ সিরিজের সব ক'টিতে হার।
বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ তৃতীয় ওয়ানডেতেও দেখা মিলল হার। জয়ের দারুণ সম্ভাবনা তৈরি করলেও অভিষিক্ত ক্যারিবীয় ব্যাটার জাঙ্গুর সেঞ্চুরিতে শেষমেশ পরাজয় মেনে নিতে হলো বাংলাদেশকে। ৪ উইকেটের জয়ে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ নিজেদের করে নিল স্বাগতিকরা। আর মিরাজরা পেল হোয়াইটওয়াশের লজ্জা।
এর আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে হার ধরলে টানা চার ম্যাচে পরাজিত দলের নাম বাংলাদেশ। অথচ লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের এটিই সবচেয়ে প্রিয় ফরম্যাট।
বাংলাদেশের ব্যর্থতার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ বোধকরি ব্যাটিং। টপঅর্ডার ভালো করে কালেভদ্রে। ওপেনিংয়ে নেই শক্ত গাঁথুনি। মিডল অর্ডারকে তাই দায়িত্ব নিতে হয়। সেখানে বুড়ো মাহমুদউলস্নাহ এগিয়ে আসেন সবার আগে। সর্বশেষ চার ম্যাচে বাংলাদেশ হারলেও মাহমুদউলস্নাহ ধারাবাহিকভাবে রান করেছেন। শেষ চার ম্যাচে তার রান ৯৮, ৫০*, ৬২, ৮৪*। চার ম্যাচে চার অর্ধশতক, দুটিতে অপরাজিত। আফগানদের বিপক্ষে দুই রানের জন্য মিস করেছেন শতক।
এর মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তার ৬২ রানের ইনিংসটি বেশ মন্থর ছিল। ৯২ বলে খেলা ইনিংসে শুরুর ধীরগতি পুষিয়ে দেন শেষে। বাকি ম্যাচগুলোতে রান তুলেছেন বলের সঙ্গে পালস্না দিয়ে। ৯৮ বলে ৯৮, ৪৪ বলে অপরাজিত ৫০ ও ৬৩ বলে অপরাজিত ৮৪, পাওয়ার হিটিংয়ে দলকে দারুণ ফিনিশিং এনে দিয়েছেন তিনি। চার ম্যাচে মাহমুদউলস্নার বাউন্ডারি মেরেছেন ১৯টি, ছক্কা মারেন ১৪টি।
ম্যাচ হারের পরও বাংলাদেশ অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ প্রশংসা করেছেন মাহমুদউলস্নাহর। মাহমুদউলস্নাহকে নিয়ে মিরাজ বলেন, '(মাহমুদউলস্নাহ) খুব ভালো করেছেন। সিরিজে তিনটি ফিফটি করেছেন, যা দলের জন্য খুব ভালো ব্যাপার। তার কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখি। এই সিরিজে তরুণদের দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগ ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সেটি করতে পারিনি।'
আগামী বছরের ফেব্রম্নয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। তার আগে আর কোনো ওয়ানডে ম্যাচ নেই টাইগারদের। মিরাজ বলছিলেন, 'এই সিরিজের পরই আমাদের সামনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। আমরা জানি, আমাদের কোথায় উন্নতি প্রয়োজন। আশা করি, সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে আমরা বুঝতে পারব কীভাবে সেসব জায়গায় উন্নতি করতে হবে।'
গত ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকেই দলে নিজেকে অপরিহার্য করে গড়ে তুলেছেন মাহমুদউলস্নাহ। খেলছেন কেবল ওয়ানডেটাই। তাতে যে বেশ মনোযোগী হয়েছেন, তার উন্নতি দেখলে আঁচ করা যায়। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে নিজেকে নিয়ে কাজ করা মাহমুদউলস্নাহকে দেখে তরুণরা উদ্যমী হতেই পারে।