রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভর্তুকি মূল্যেও মাংস কিনতে পারছে না নিম্ন আয়ের মানুষরা

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
  ২৬ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
গরুর মাংসের কয়েকটি টুকরো

পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে সরকার যে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করছে তাতেও মাংসের দাম নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে।

পেশায় রিকশাচালক মোহাম্মদ বাদশা খামারবাড়িতে স্থাপন করা ভর্তুকি মূল্যের বিক্রয় পয়েন্টে গরুর মাংস কিনতে গিয়েছিল কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় না কিনেই চলে যেতে হলো তাকে।

বাদশা বলেন, 'যে দাম নির্ধারণ করেছে তাতে আমাদের মতো গরিবরা কিনতে পারবে না। যারা বড়লোক তাদের জন্যই এ সুবিধা।'

মোহাম্মদ বাদশা থাকেন মোহাম্মদপুরে। পরিবারে তার ৫ জন সদস্য। তিনি বলেন, 'ঘরভাড়া বাবদ আমাকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়। যে আয় হয় তাতে ডালভাত খেয়ে বেঁচে আছি। ৫০০ টাকা গরুর মাংস হলে ১ কেজি কিনতাম। রোজায় পরিবার একটু মাংস খেত।'

রমজান মাসে নিম্ন আয়ের মানুষদের আমিষের চাহিদা পূরণে সহায়তা করার লক্ষ্যে ২৩ মার্চ বিকালে রাজধানীর খামারবাড়িতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রাঙ্গণে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

এই উদ্যোগের আওতায় নিম্ন আয়ের মানুষ প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৪০ টাকায় (বাজারমূল্য কেজিপ্রতি ৭৫০ টাকা), খাসির মাংস প্রতি কেজি ৯৪০ টাকায় (বাজারমূল্য ১,১০০ টাকা), ড্রেসড ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ৩৪০ টাকায়, দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকায় (৯০ টাকা) এবং ডিম প্রতি পিস ১০ টাকায় (বাজারে ১২ টাকা) কিনতে পারবেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, 'সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে এবার দুধের আধা লিটারের ছোট প্যাকেট, অল্প পরিমাণ ডিম এবং আধা কেজির মাংসের প্যাকেট রাখা হবে যাতে একেবারে নিম্ন আয়ের মানুষও তার সাধ্যের ভেতর এসব পণ্য কিনতে পারেন। আমাদের লক্ষ্য সচ্ছল মানুষরা নয়, বরং যারা তুলনামূলকভাবে স্বল্প আয়ের তারাই।'

কিন্তু শনিবার খামারবাড়ি স্পটে গিয়ে প্রায় ১০ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাদের এই বাড়তি দামে কেনার সামর্থ্য নেই। আর যারা পণ্য কিনেছেন তারা বেশিরভাগই চাকরিজীবী, না হয় ব্যবসায়ী।

রাজধানীর গ্রিনরোডে নিজস্ব বাড়ি আছে শহিদুল পাটোয়ারীর। তিনি ডিম কিনেছেন ৩০টি, গরুর মাংস ১ কেজি এবং মুরগির মাংস ১ কেজি। খাসির মাংস শেষ হয়ে যাওয়ায় আর কিনতে পারেননি। শহিদুল বলেন, 'স্ত্রী সকালে বললো এখানে থেকে বাজার করতে তাই এখানে আসা। আমার ইঞ্জিনিয়ার ছেলে ভালো বেতনে চাকরি করে। আমি আইটি ব্যবসা করতাম, কিছুদিন হয় সেটা বাদ দিয়েছি। এখন ঘুরতে যাবো আমেরিকা।'

সিএনজি চালক ইমাম বলেন, 'ভেবেছিলাম কিনব কিন্তু দাম বেশি দেখে কিনলাম না। খাসির মাংস প্রতি কেজি ৯৪০ টাকা, ড্রেসড ব্রয়লার প্রতি কেজি ৩৪০ টাকা- এটা আমাদের জন্য না। এত টাকা কই পাব।'

৪০ হাজার টাকা বেতনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মোস্তাফিজুর রহমান। তেজকুনিপাড়ায় ভাড়া থাকেন। বলেন, 'একটু দেখতে এলাম।'

সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয়েছিল বিক্রি। সাড়ে ১১টার ভেতরে গরু ও খাসির মাংস শেষ হয়ে যায়।

খামারবাড়ি ডিলারশিপ ট্রাকের ক্যাশিয়ারদের একজন মোকাদ্দাস ইসলাম বলেন, আজ ১৫৩ জন পণ্য ক্রয় করেছেন।

'আমরা ১০০ কেজি গরুর মাংস, ৭০ কেজি ড্রেসড বয়লার চিকেন, ২২০০টি ডিম, ২০০ লিটার দুধ আর ৭ কেজি মাটন নিয়ে এসেছি সব বিক্রি হয়ে গেছে।'

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'কারা ধনী কারা গরিব, এটা তো আমরা বুঝতে পারি না। যারা লাইনে দাঁড়ায় তাদের কাছেই পণ্য বিক্রি করি।'

প্রিতি সুলতানা নামের এক ক্রেতা কিনতে এসে না পেয়ে ফিরে যান। তিনি বলেন, 'আরও পণ্য রাখা উচিত ছিল।'

আর তেজগাঁও এলাকা থেকে তাসলিমা বেগম এসে কিনতে পেরেছেন শুধু মুরগি। তাসলিমা বলেন, 'এত কষ্ট করে আসলাম এসে শুনি শুধু মুরগির মাংস আছে। আমার তো কোনো লাভ হলো না। ড্রেসড ব্রয়লার ১ কেজি ৩৪০ টাকায় কিনলাম। বাজারেও তো একই দাম। এ মুরগির দাম এখানে ২০০ টাকা কেজি হলে ভালো হতো।'

গত রমজানে এসব বিক্রয়কেন্দ্রে গরুর মাংস ৫৫০ টাকা কেজি, খাসির মাংস ৮০০ টাকা কেজি, ড্রেসড ব্রয়লার চিকেন ২০০ টাকা কেজি, দুধ ৬০ টাকা লিটার এবং চারটি ডিম ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

এবার কেন এত দাম জানতে চাইলে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ ও পরিবহণ খরচ অনেক বেড়ে গেছে। গতবারের চেয়ে এবার পণ্যবাহী যানের ভাড়া বেশি।

'একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ এক কেজি গরুর মাংস, এক কেজি মুরগি, এক লিটার দুধ, এক ডজন ডিম এবং এক কেজি খাসির মাংস কিনতে পারবেন', জানান তিনি।

উলেস্নখ্য, সচিবালয় সংলগ্ন আব্দুল গণি রোড, খামারবাড়ি রোড, মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটি, মিরপুর ৬০ ফুট রোড, আজিমপুর ম্যাটারনিটি হাসপাতাল, পুরান ঢাকার নয়াবাজার, আরামবাগ, নতুন বাজার, মিরপুরের কালশী, খিলগাঁও রেলগেট, নাখালপাড়া, সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার, মোহাম্মদপুরের বসিলা, উত্তরার দিয়াবাড়ি, যাত্রাবাড়ী, গাবতলী, হাজারীবাগ, বনানীর কড়াইল বস্তি, কামরাঙ্গীরচর ও রামপুরায় ভ্রাম্যমাণ সেলসপয়েন্ট থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে