রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আমদানি জটিলতায় জর্জরিত দেশের বিলাসবহুল হোটেলগুলো

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
  ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের মতে, হোটেগুলোতে পরিষেবা সম্পর্কিত প্রায় ১০০০-১২০০ ধরনের পণ্য ব্যবহার করা হয়; এ পণ্যগুলোর ৫০-৬০% আমদানি নির্ভর। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এলসি খোলা চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠায় এ পণ্যগুলো সরবরাহে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া, বিদেশি ব্র্যান্ডের মদ পেতে হোটেল মালিকদের কমপক্ষে ছয় মাস থেকে এক বছরের বেশি সময় লাগে, কারণ পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য একাধিক কর্তৃপক্ষের অনুমতি প্রয়োজন হয়।

বিদেশিসহ অন্যান্য অতিথিদের পরিষেবার মান নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশের বিলাসবহুল হোটেলগুলো। আমদানি-নির্ভর পণ্য যেমন, খাদ্য পণ্য, অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় এবং রুম অ্যামেনিটির অভাবে পরিষেবার যথাযথ মান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, সরকারি বিধিনিষেধ এবং ডলার সংকটের ফলে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশে অবকাশকালীন পর্যটকের উপস্থিতি কম হওয়ার পেছনে একটি কারণ হিসেবে এ জটিলতাকে দায়ী করেছে খাত সংশ্লিষ্টরা। এ দেশে বিলাসবহুল হোটেলগুলোতে আসা ৭০%ই বিদেশি অতিথি, যারা মূলত ভ্রমণকারী ব্যবসায়ী।

বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের মতে, হোটেগুলোতে পরিষেবা সম্পর্কিত প্রায় ১০০০-১২০০ ধরনের পণ্য ব্যবহার করা হয়; এ পণ্যগুলোর ৫০-৬০% আমদানি নির্ভর।

পর্যটন মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধিত ৪৬টি তারকা হোটেল রয়েছে, যাদের বেশিরভাগই এসব পণ্যের জন্য তৃতীয় পক্ষের সরবরাহকারী এবং আমদানিকারকদের উপর নির্ভরশীল।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এলসি খোলা চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠায় এ পণ্যগুলো সরবরাহেও জটিলতা দেখা দিয়েছে।

রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত গোল্ডেন টিউলিপ-দ্য গ্র্যান্ডমার্ক নামক একটি ৪ তারকা হোটেলের খাদ্য ও পানীয় হিসেবে প্রায় ১৬৫টি পণ্য ব্যবহৃত হয়। এরমধ্যে মাত্র ১১টি (যা মাত্র ৭%) পণ্য আসে স্থানীয় উৎস থেকে, বাকিগুলো আমদানি-নির্ভর।

\হহোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খালেদ উর রহমান বলেন, 'এ প্রক্রিয়া এতই জটিল এবং সময়সাপেক্ষ যে আমরা নিজেরাই খাদ্য বা অন্যান্য পণ্য আমদানি করতে সাহস পাই না। এলসি খোলা, বিএসটিআই সিল পাওয়া এবং সর্বোপরি উচ্চমানের খরচের কারণে আমরা নিজেরা আমদানি না করে এসব পণ্য তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে কিনি।'

অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ বিধি অনুসারে, দেশের হোটেলগুলো তাদের প্রয়োজনীয় মোট অ্যালকোহলের ৪০% পর্যটন কর্পোরেশনের শুল্ক-মুক্ত দোকান থেকে বা আমদানির মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারে, বাকি ৬০% অবশ্যই দেশীয়ভাবে উৎপাদিত উৎস থেকে শুল্ক ও কর মিটিয়ে কিনতে হবে।

বেশিরভাগ হোটেলই পর্যটন কর্পোরেশন থেকে মদ সংগ্রহ করে, কারণ এটি নিজেরা আমদানি করার চেয়ে তুলনামূলকভাবে সহজ।

তবে এক্ষেত্রে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের পূর্বানুমতি প্রয়োজন, যা কমপক্ষে ছয় মাসব্যাপী দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়া।

চট্টগ্রামের একটি চার তারকা হোটেল গত বছরের মে মাসে কর্পোরেশন থেকে মদের চালানের জন্য আবেদন করে এবং চলতি বছরের জুন মাসে তারা সে চালান পেয়েছে বলে জানায় কর্মকর্তারা।

ঢাকার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক রাজীব মিনা বলেন, 'বিদেশি মদের জন্য একটি হোটেলের আবেদন একাধিক পর্যায়ে তদন্ত করা হয়। অধিদপ্তরের জেলা পর্যায় থেকে তা আমাদের বিভাগীয় পর্যায়ে আসে। বিভাগ থেকে, আমরা সর্বোচ্চ তিন দিনের মধ্যে হেড অফিসে পাঠাই। তাই আমাদের এখানে প্রক্রিয়ায় কোনো বিলম্ব নেই।'

'এ তদন্ত একটি চেকলিস্টের ভিত্তিতে করা হয় যেখানে সমস্ত প্রাসঙ্গিক নথি যাচাই করা হয়। যদি একটি হোটেলের অনুমোদন পেতে বিলম্ব হয়, তাহলে হয়তো তাদের কোনো কিছুতে সমস্যা আছে,' বলেন এ বিভাগের অন্য একজন কর্মকর্তা।

আতিথেয়তা খাতকে যেভাবে প্রভাবিত করছে ডলার সংকট

এলসি খোলার জটিলতার কারণে আমদানিকারকরা আতিথেয়তা (হসপিটালিটি) খাতে প্রত্যাশিত পরিমাণ পণ্য সরবরাহ করতে পারছেন না।

অ্যালিয়ন ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মো. পারভেজ ভূঁইয়া বলেন, 'হোটেলে দুধ, সস এবং তেলের মতো বিভিন্ন পণ্য সরবরাহ করি আমি। বর্তমানে সরকার ঘন ঘন ট্যাক্স পরিবর্তন করে, একইসঙ্গে বিলাসবহুল পণ্য আমদানিও সীমাবদ্ধ রাখে। আমি আগে প্রতি মাসে ৬-৭টি এলসি খুলতে পারলেও এখন এলসি খুলতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগে।' তিনি আরও বলেন, 'আমরা আমদানি করতে না পারায় চাহিদা অনুযায়ী হোটেলগুলোতে পণ্য সরবরাহ করতে পারছি না।'

পাঁচ তারকা হোটেলের একজন ম্যানেজার বলেন, সম্প্রতি পচনশীল পণ্য নিয়ে নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ খাদ্যসামগ্রী আমদানিকারক ও সরবরাহকারী সমিতির সহ-সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'ডলার সংকটের কারণে আমরা এলসি খুলতে পারছি না।'

এদিকে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাকিম আলী টিবিএসকে বলেন, 'আমরা যদি পর্যটন শিল্পের বিকাশ চাই, তাহলে প্রতিবেশী দেশগুলোর নীতি অনুসরণ করতে পারি।' মদ আমদানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমরা দীর্ঘদিন ধরে মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছি, কিন্তু কোনো উন্নতি হচ্ছে না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে