রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
দেশে ১৬৮টি চা-বাগান

১০ মাসে চা উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৮৩ লাখ কেজি

দেশে চা বিক্রির জন্য তিনটি নিলাম বাজার রয়েছে। তবে শতবর্ষী চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক নিলামেই ৯৫ শতাংশ চা বিক্রি হয়
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
  ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

অনুকূল পরিবেশ ও পর্যাপ্ত বৃষ্টি আশীর্বাদ হয়ে এসেছে দেশের চা খাতে। এতে চা উৎপাদনে উলস্নম্ফন ঘটেছে। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় জনপ্রিয় পানীয় পণ্যটির উৎপাদন বেড়েছে ৮৩ লাখ ৭২ হাজার কেজি। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি বছরের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি চা উৎপাদন হবে বলে প্রত্যাশা চা-বাগান মালিকদের।

খাত-সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, দেশে ১৬৮টি চা-বাগান রয়েছে। এসব বাগান থেকে ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে মোট ৭ কোটি ৫২ লাখ ১১ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। চলতি বছরের একই সময় উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৩৫ লাখ ৮৩ হাজার কেজিতে।

আর সর্বশেষ তিন মাসে (আগস্ট-অক্টোবর) উৎপাদন হয়েছে ৪ কোটি ৩৩ লাখ ৭৮ হাজার কেজি। এর মধ্যে শুধু অক্টোবরেই ১ কোটি ৪৫ লাখ ৯৩ হাজার কেজি চা উৎপন্ন হয়েছে। এই হিসাবে নভেম্বর ও ডিসেম্বরের উৎপাদন যুক্ত হলে চলতি বছরের প্রত্যাশিত ১০ কোটি ২০ লাখ কেজি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত চা চাষের জন্য উপযোগী। এতে বাগানগুলোয় ফলন বেড়ে যায়। বাগান-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ বছর শুরুতে বৃষ্টিপাত কম হলেও মৌসুমের শেষ দিকে এসে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। এখনো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনিয়মিত হলেও বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ কারণে বাগানগুলোয় গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি চা উৎপাদন হয়েছে।

সাধারণত জুন-অক্টোবর পর্যন্ত সময়কে চা উৎপাদনের শীর্ষ মৌসুম ধরা হয়। তবে এ বছর নভেম্বর এমনকি ডিসেম্বরেও বৃষ্টিপাতে বাড়তি উৎপাদন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতে ফলন বৃদ্ধির পাশাপাশি ভালো মানের চা পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন বাগান মালিকরা।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্যমতে, ২০২১ সালে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ কোটি ৭৭ লাখ ৮০ হাজার কেজি। ওই বছর প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ৯ কোটি ৬৫ লাখ ৬ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়। পরের বছর লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ১০ কোটি কেজি নির্ধারণ করা হলেও তা পূরণ হয়নি। বছরটিতে ৯ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। তবে চলতি বছর আবহাওয়াগত সুফলের কারণে বাড়তি উৎপাদনের দিকে যাচ্ছে চা খাত। এতে দেশের বার্ষিক চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানির সুযোগ বাড়বে বলে মনে করছেন বোর্ড কর্মকর্তারা।

উদালিয়া চা-বাগানের সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'বাড়তি চা উৎপাদন হলে দেশে চায়ের ঘাটতি থাকবে না। আবার বেশি চা উৎপাদন হলে নিলামে ভালো দাম পাওয়া নিয়ে সংশয় থাকে। তবে ভালো চায়ের কদর থাকে বাজারে।' এজন্য বাগানগুলোকে বাড়তি চায়ের পাশাপাশি মানসম্মত চা উৎপাদনের দিকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

চা খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিলামে প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম ১৯০ টাকার মধ্যে হলেও কিছু বাগান ৩০০-৩৫০ টাকারও বেশি দামে পাচ্ছেন। মূলত চাহিদাসম্পন্ন চা উৎপাদনে নিলামে ভালো দাম পাচ্ছেন তারা। দেশের ১৬৮টি বাগানের মধ্যে ৪০-৫০টি বাগান কেজিপ্রতি ২০০-৩৫০ টাকা কেজিতে চা বিক্রি করলেও অধিকাংশ বাগানের চা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে। দেশে চা উৎপাদনের গড় খরচ কেজিপ্রতি ২০০ টাকার মতো হওয়ায় এসব বাগান লোকসানের ঝুঁকিতে।

দেশে চা বিক্রির জন্য তিনটি নিলাম বাজার রয়েছে। তবে শতবর্ষী চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক নিলামেই ৯৫ শতাংশ চা বিক্রি হয়। কয়েক বছর আগে শ্রীমঙ্গলে দেশের দ্বিতীয় চায়ের নিলাম বাজার এবং কয়েক মাস আগে পঞ্চগড়ে খোলা হয়েছে তৃতীয় ও অনলাইন চা নিলাম বাজার। অবকাঠামোগত সংকটসহ নতুন হওয়ার কারণে এই দুটি নিলামে চা বিক্রির পরিমাণ একেবারেই কম।

এদিকে উৎপাদনের পাশাপাশি নিলামেও আগের বছরগুলোর তুলনায় বাড়তি চা সরবরাহ করছে বাগান মালিকরা। ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে ৩২তম নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই নিলামে বিক্রির জন্য ৪২ লাখ ৭১ হাজার ৭৮৯ কেজি চা প্রস্তাব করা হয়েছিল, যা আগের বছরের একই নিলামের তুলনায় ৯ লাখ ৫০ হাজার ৪৪৫ কেজি বেশি।

জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় ৩৩তম চট্টগ্রাম নিলামে বিক্রির জন্য প্রস্তাব করা হতে পারে ৪৮ লাখ ৩৭ হাজার ৪০৫ কেজি চা, যা পূর্ববর্তী বছরের ৩৩তম নিলামের চেয়েও ১৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫৫১ কেজি বেশি। নিলামেও বাড়তি চা সরবরাহে চায়ের গড় দাম কমে কেজিপ্রতি ১৮০ টাকার নিচে নেমে এসেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে