সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

নবাবগঞ্জে ইছামতি নদীতে নৌকা বাইচ

নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
  ০৫ আগস্ট ২০২৩, ১৮:৪৪

'আল্লায় বলিয়া নাও খোলরে ভাই সক্কলি। আল্লাহ বলিয়া খোল। ওরে আল্লা বল নাও খোল শয়তান যাবে দূরে।

ওরে যে কলমা পইড়া দেছে মোহাম্মদ রাসূলরে ভাই সক্কল 'এই সারি গানের তালের ঝোঁকে ঝোঁকে বৈঠা টানের মধ্য দিয়ে শনিবার অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার ইছামতি নদীর দেওতলা থেকে হাসনাবাদ পয়েন্টে গ্রাম বাংলার শত বছরের ঐতিহ্যের নৌকা বাইচ ।

হাসনাবাদ, মৌলভীডাঙ্গি, নয়ানগর, মোলাশীকান্দা, নতুন বান্দুরা ও পুরাতন বান্দুরা গ্রাম বাসীর সার্বিক সহযোগিতায় এ নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয় ।

বাইচে ঢাকা, মানিকগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের ৯ টি (ঘাসি ও খেলনা নৌকা) নৌকা অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও আরোও ছোট নৌকাও অংশগ্রহণ করে।

থৈ থৈ পানি, মাঝি-মাল্লার বৈঠার ছন্দ আর লাখো দর্শনার্থীর হৈ হৈ রব, কাঁশি-বাঁশি আর ঝাঁঝরের সুর, ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ আর দর্শনার্থীর করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে ইছামতি নদীর দুই তীর। ঝাঁঝ ও কাঁশি বাজিয়ে নৌকার দলনেতা সতীর্থদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা ও উৎসাহ জোগান। বাংলা ও বাঙ্গালীর চিরায়ত সংস্কৃতির প্রাচীনতম এ উৎসব উপভোগ করতে শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকলেই মেতে ওঠে আনন্দে-উল্লাসে। নদের পাড়ে বসে গ্রাম্য মেলা।

নৌকা বাইচ আয়োজক কমিটির সভাপতি মো. কামাল হোসেন বলেন, নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটি ও নৌকা মালিক সমিতির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় ৩৫ বছর পর আবার দেওতলা টু হাসনাবাদ পয়েন্টে নৌকা বাইচের আয়োজন করি। এবার যদি নৌকার মালিক ও দর্শক সুশৃঙ্খলভাবে বাইচ সম্পন্ন করতে সহযোগিতা করে তাহলে প্রতি বছরই এই পয়েন্টে নৌকা বাইচের আয়োজন করা হবে।

নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা বলেন, আমাদের এই বাইচ কমিটি দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় যেসব স্থানে আগে নৌকা বাইচ হতো কিন্তু বর্তমানে নানা কারণে বন্ধ আছে, সেসব এলাকার আয়োজকদের বাইচ আয়োজনে উদ্বুদ্ধ করি। তারা আমাদেরকে বাইচ না আয়োজনের কারণ প্রসঙ্গে জানান, বাইচ আয়োজন এখন অনেক ব্যয় বহুল। নবাবগঞ্জে নৌকা বাইচের ঐতিহ্য প্রায় শত বছরের। আমাদের এলাকার বাইচের সুনাম দেশব্যাপী। সেই সুনাম ধরে রাখতে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।

নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি মাসুদ মোল্লা নৌকার মালিক বলেন, বাংলার ঐতিহ্য ও দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার জন্যই আমরা এই বাইচে অংশগ্রহণ করে থাকি। বাইচে নানান ধরনের ঝামেলার সৃষ্টি হয় বলে কমিটি ও নৌকা মালিকেরা অংশগ্রহণ করতে চায় না বাইচে। তবে আমাদের নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা কমিটি থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা ও হারানো নৌকা বাইচের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আশা করি আমাদের ঐতিহ্য ফিরে আসবে।

শোল্লা থেকে আসা দর্শনার্থী কাউসার আহাম্মেদ বলেন, অনেক বছর পর এই বাইচ দেখতে আসলাম। এই বাইচ দেখতে লাখ লাখ দর্শনার্থী উপস্থিত হয়। আশেপাশের মুন্সিগঞ্জ, ঢাকা, মানিকগঞ্জ জেলার অনেক দর্শনার্থীরা তাদের পরিবার নিয়ে উপস্থিত হন।

বাইচে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দোহার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেন।

বাইচ উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসেডিয়াম সদস্য মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, গেস্ট অব অর্নার ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মতিউর রহমান, বিশেষ অতিথি নবাবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম শেখ। আরো উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কালিপদ হালদার, নয়নশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পলাশ চৌধুরী, বান্দুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির, বান্দুরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হিল্লাল মিয়া, বান্দুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রাজন কুমার সম্ভু, সাধারণ সম্পাদক মো. আইয়ুব ও বান্দুরা ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য রতন ডি রোজারিও প্রমুখ।

বাইচের শেষে বিজয়ীদের মাঝে ১টি মোটরসাইকেল ও ৮টি ফ্রীজ পুরষ্কার দেওয়া হয়।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে