সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

মহেশপুরে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ৫ কোটি টাকার ড্রাগন

কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
  ১৪ আগস্ট ২০২৩, ১৮:০২

মাত্র তিনমাসে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল ড্রাগনের হাট। এ হাট থেকে প্রতিদিন প্রায় গড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫ কোটি টাকার ড্রাগন। যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। হাটটি একেবারে গ্রাম অঞ্চলে হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকাই খুব অল্প সময় হাটটি জমে উঠেছে। ড্রাগন ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসছেন পাইকারী দরে ওই হাটে ড্রাগন কিনতে।এই ড্রাগন হাটটি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের গৌরীনাথপুর গ্রামে। মহেশপুর পৌর শহর থেকে ৬ কিলোমিটার পূর্বে এবং কোটচাঁদপুর পৌর শহর থেকে চার কিলোমিটার দক্ষিণে কোটচাঁদপুর-পুড়াপাড়া সড়কে অবস্থিত।

ওই হাটের ড্রাগন আড়তদার জসিম এ প্রতিবেদককে বলেন- এই উপজেলাসহ আশপাশের উপজেলাতে ব্যাপক ড্রাগন চাষ হওয়াতে তিনি ওই হাটে বড় একটি টিনের চালা দেন ড্রাগনের আড়ৎ হিসাবে। এলাকার মানুষ অনেকেই সে সময় আমাকে পাগল বলেছিলো। তারা বলে ছিলো গ্রামের মধ্যে ড্রাগনের আবার পাইকারী বাজার হয় কখনো, পাগল কোথাকার ! তিনি তখন জেদের বসেই দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারী ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করে ড্রাগনের ব্যবসা শুরু করেন।

তিনি বলেন, আমার একটি মাত্র আড়তে ব্যাপক বেচাকেনা দেখে মাত্র তিন মাসের মধ্যে ওই বাজারে এখন ৩০টি বড় বড় ফলের আড়ত। প্রতিদিন এ হাট থেকে গড়ে প্রায় ৫কোটি টাকার ড্রাগন বিক্রি হচ্ছে।

অপর আড়ত মালিক ও ড্রাগন চাষী তরিকুল ইসলাম রিয়াল বলেন, আমি নিজেই ১৫বিঘা ড্রাগন চাষ করেছি। আগে এ জমিতে বর্গা চাষীরা ধান ও বাদাম চাষ করতো। বর্গা চাষীদের কাছ থেকে আমি পেতাম বিঘা প্রতি বছরে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। সেই জমিতে নিজেই ড্রাগন চাষ করে বিঘা প্রতি পাচ্ছি ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা।

তিনি বলেন, জমিতে একবার ড্রাগন লাগালে ৮/১০ বছর থাকে। বিঘা প্রতি বছরে গড়ে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। ভাল পরিচর্যা করলে ভাল ফলও পাওয়া যায়। ওই এলাকার ড্রাগন চাষী আজিজ খান বলেন, আমি আজ ক্ষেত থেকে আড়াই’শ কেজি ড্রাগন এনে এ হাটে বিক্রি করলাম। দাম পেয়েছি পাইকারী দরে প্রতি কেজি ১৭০ টাকা। গ্রামের হাটে পরিবহন খরচ কম। মোটামুটি ভাল দাম পেয়েছি।

ওই গ্রামের ড্রাগন চাষী ও ড্রাগন আড়ত মালিক নাজমুল হক বলেন, আমি ১৫ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করেছি। গাছে ভাল ড্রাগন ফল এসেছে। আশা করছি বিঘা প্রতি সর্ব নিম্ন ৮লাখ টাকা করে ড্রাগন বিক্রি করতে পারবো । তিনি বলেন এসব জমিতে আগে ধান, ভ‚ট্ট ও বাদাম চাষ করতাম।

এ সকল চাষে খুব বেশী হলেও বিঘা প্রতি বছর পাওয়া যেত ১লাখ ২০হাজার টাকা। এর মধ্যে কৃষিশ্রমিক সার কীটনাষকসহ আনুসাঙ্গিক খরচ বাদ দিলে খুব একটা লাভ নাই।

একই গ্রামের ড্রাগন চাষী সোহাগ বলেন, এবার আমি ২৫ বিঘা ড্রাগনের চাষ করেছি। ড্রাগনে যে পরিমান টাকা আসে যা অন্য কোন আবাদে তেমনটি পাওয়া যায় না। তিনি বলেন এই গৌরীনাথপুর গ্রামের মাঠে এখন শুধুই ড্রাগনের চাষ। যে কারণে ধানি জমি প্রচন্ড ভাবে কমে গেছে। এ গ্রামসহ আশপাশ এলাকাতেও এখন ড্রাগনের চাষই বেশী। তিনি বলেন, নিজের সংসারের জন্য এবার মাত্র ২বিঘা জমিতে ধান লাগাবো। যা আগে লাগাতাম ১৫ থেকে ২০ বিঘা।

কোটচাঁদপুর উপজেলার হরিন্দিয়া গ্রামের মিজানুর রহমান তিনি এ হাট থেকে ড্রাগন কিনে চট্রগ্রাম নিয়ে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, এ হাটে প্রতিদিন প্রচুর পরিমানে ড্রাগন ওঠে। যে কারণে চাহিদা অনুযায়ী পছন্দমত সাইজের আমরা ড্রাগন পাইকারী দামে কিনতে পারি। পাশাপাশি যোগযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকায় এই হাটটি আমরা এখন বেছে নিয়েছি।

কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ দুটি উপজেলাতে প্রায় ৭শত হেক্টর জমিতে ড্রাগন চাষ হয়েছে। তা ছাড়া এ চাষ প্রতি নিয়ত বাড়ছে।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে