রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
জাবেদ আবেদীন শাহীন, কক্সবাজার
  ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৬:৫৩
কক্সবাজারে রাতে কুয়াশার দাপট

শীতে কুয়াশার দাপটে দিনভর সূর্যের দেখা মেলেনি পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী একেবারে অন্ধকার হয়ে ছিল পুরো জেলা। রাতে হালকা হালকা বৃষ্টি,ঘন কুয়াশা ও কনকনে হিমেল হাওয়ায় শীতে বিপর্যস্থ। শিশিরকণা দিনে-রাতে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির মতো ঝরতে থাকে। গত কয়েকদিন ধরে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে সূর্যের দেখা মিলছে না। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়ে স্থবির হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিপাকে পড়েছে স্কুলগামী শিশু ও বয়স্ক মানুষ। খেটে খাওয়া মানুষগুলো শীত আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করেই জীবিকার তাগিদে কাজে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি অফিস আদালতে দরজা ও জানালা আটকিয়ে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান জানান, গতবুধবার দুপুর পর্যন্ত কক্সবাজার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিশেষ করে শীত বেশি লাগার কারণ হচ্ছে বায়ুর গতিবেগ। উত্তর-পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, সেটি শীতকালের। বাতাসের গতিবেগ বেশি হলে শীতের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পায়। সে অনুপাতে এ অঞ্চলে এখন শীতের তীব্রতা বেশি হচ্ছে। এ পরিস্থিতি আরও কয়েকদিন থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

কক্সবাজারে বেড়াতে আসা খুলনার পর্যটক খরশীদ আলমগীর বলেন, কক্সবাজারে বেড়াতে এসে রাত ও দিনে প্রচুর ঠান্ডা অনুভব করছি। হোটেল থেকে গরম কাপড় গায়ে দিয়ে, কানটুপি ও গলায় মাফলার পেঁচিয়ে বাইরে বের হতে হচ্ছি। দিনভর মেঘাচ্ছন্ন নগরী কুয়াশায় ঢেকে ছিল রাস্তাঘাট। সূর্যের আলোর দেখা মিলেনি। ঠান্ডায় হাত-পা ব্যথা করে। তাই সৈকতে হাটাহাটি করে শরীর গরম করছি।

কক্সবাজার বাহারছড়ার এলাকার গুহিনী ফরিদা বেগম বলেন, দুদিন ধরে সূর্য মেঘে ঢাকা রয়েছে কক্সবাজার। হিমেল বাতাস বইছে। হঠাৎ করেই আবহাওয়ার এ পরিবর্তনে ছিন্নমূল মানুষকে চরম বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে। টমটম চালক সুলতান আলম জানান, তীব্র শীতের কারণে মানুষজন সন্ধ্যার পর পরেই বাড়ি ফিরে তাই ভাডা হচ্ছে না আগের মত। আগে গভীর রাত পর্যন্ত চালালে গাড়ি ভাডা দিয়ে কিছু টাকা আয হত যা দিয়ে সংসার চলতো। এখন শীতের কারনে খুব কষ্ট হচ্ছে সংসার চালাতে। সন্ধ্যার পর আর ভাড়া পাওয়া যায় না ।

কনকনে হিম বয়ে আনা বাতাসে হাড় কাঁপুনি শীত। শীতের হিমেল হাওয়ায় শীতের পোশাক পরেও ঠক ঠক করে কাঁপছে মানুষ। কদিন ধরেই কক্সবাজারে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। জেলায় রাতভর ঘন কুয়াশা, কোথাও কোথাও কুয়াশা থাকছে দিন-রাত সব সময়ই। গত কয়েক দিন সকালে আগুন জ্বেলে সাজাল জালিয়ে হাত-পা সেঁকেছে মানুষ। প্রচন্ড শীতে সীমাহিন কষ্টে দিন কাটছে এ জনপদের মানুষের। রাত একটু গড়াতেই রাস্তা-ঘাট হয়ে পড়ে সুনসান। জরুরি প্রয়োজন বিকেল থেকে মানুষ ঘরের বাইরে বের না হওয়ায় রাস্তাঘাট, হাটবাজার, রেলস্টেশন বাস টার্মিনালসহ পাবলিক প্লেসে লোকজনের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। গত বৃহস্পতিবারের দিনভর কক্সবাজারের চিত্র এমনই। তাপমাত্রার পারদ দিনদিন যত নামছে, ঠান্ডায় ততই বাড়ছে শীতের পোশাকের বিক্রি।

এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে দিনে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে শিশুসহ তিন সহ সহস্রাধিকেরও বেশী রোগী ভর্তি হয়েছে। বিশেষ করে শীত ও কুয়াশার কারণে বিশেষ করে শিশু-বৃদ্ধদের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর আউটডোরে ঠান্ডাজনিত রোগীদের মধ্যে সন্দি-কাশি, জ্বর শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, হাঁপানি ও ডায়রিয়াসহ নানান রোগী রয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। চিকিৎসকরা রোগীদের সেবার পাশাপাশি শীতজনিত রোগ থেকে বাঁচতে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন বলে সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে।

কক্সবাজার শিশু বিশেষজ্ঞ নুরুল আলম বলেন, গত এক সপ্তাহের বেশী সময় জেলায় তীব্র শীতে কাবু হচ্ছে শিশুরা ও বৃদ্ধরা। ভাইরাস জ্বর, সন্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। হঠাৎ করে ঠান্ডাজনিত কারনে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। এ সময চলাফেরায় সবাইকে সাবধান হতে হবে, বিশেষ করে শিশু ও বযস্কদের ঠান্ডা লাগানো একেবারেই যাবে না। হাসপাতালে চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা করে রোগীদের দিচ্ছে বলে জানান তিনি।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে