ভোলার চরফ্যাসনে আশ্রায়ন প্রকল্পের জরাজীর্ণ ঘরগুলো পুনঃনির্মাণ শুরু হওয়ায় আশ্রিত হতদরিদ্র পরিবারগুলোর মুখে হাসি ফুটেছে। প্রথম ধাপে পুনঃনির্মাণ করা এমন ৩শ ৭০টি ঘর শীঘ্রই আশ্রিত পরিবারগুলোকে বুঝিয়ে দেয়া হবে এবং বাকী ১ হাজার ২০টি ঘর পর্যায়ক্রমে পুনঃনির্মাণ করা হবে বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নওরীন হক জানিয়েছেন।
জানা যায়, গত বছরের জুলাই মাসে চরফ্যাসন উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদে নওরীন হক যোগদানের পরপর আশ্রায়ন প্রকল্পগুলো ঘুরে দেখেন। এসময় আশ্রিত আশ্রিতদের দুর্দশা এবং ঘরগুলোর জরাজীর্ণ অবস্থা প্রত্যক্ষ করেন তিনি। প্রকল্পের ঘরে আশ্রিত হতদরিদ্র অসহায় মানুষগুলোর জন্য কিছু করার জন্য উদ্যোগী হন এবং মুজিববর্ষের ঘরের আদলে আশ্রায়ন প্রকল্পের সবগুলো ঘর পুনঃনির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করেন। প্রাথমিক ভাবে অনুসন্ধান করে এমন জরাজীর্ণ ১ হাজার ৩শ ৯০টি ঘরে আশ্রিতদের তালিকা প্রস্তত করেন। প্রেরিত প্রস্তাব অনুযায়ী গত নভেম্বর মাসে মন্ত্রণালয় থেকে প্রথম ধাপে ৩শ ৭০টি ঘর পুনঃনির্মাণের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
হাজারীগঞ্জের ঝিনুক আশ্রায়নে আশ্রিত সত্তর বছরের বৃদ্ধা জোবেদা জানান, ৩০ বছর আগে দিনমজুর স্বামী মোস্তফা মারা যান। নিঃসন্তান জোবেদার যেমন আপনজন আর কেউ ছিল না তেমনি ছিল না মাঠাগোজার ঠিকানা। বিশাল এই পৃৃথিবীতে ভূমিহীন ইসমাইল-জোবেদার আপনজন বলতে যেমন কেউ নেই, তেমনি ছিল না নিজের কোন জমি বা মাথাগোঁজার ঠাই । নৌবাহিনীর করুণায় ২০ বছর আগে হাজারীগঞ্জের ঝিনুক আশ্রায়ন প্রকল্পের একটি ঘর পান জোবেদা। সেই ঘরে হয়ে উঠে জোবেদার ঠিকানাহীন জীবনের ঠিকানা। সময়ের ব্যবধানে ঘরটি জরাজীর্ণ হয়ে যায়। মেরামত করার সামর্থ ছিল না পেশায় ভিক্ষাজীবী জোবেদার। পলিথিন মুড়িয়ে ওই ঠিকানা আকঁড়ে ছিলেন তিনি। এখন সরকারের উদ্যোগে উপজেলা প্রশাসন জোবেদার জরাজীর্ণ ঘরটি পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু করেছে। ফলে জীবনসাহ্নে এসে সেমি পাকা ঝকঝকে একটি নতুন ঘর জোবেদার জীবনে একঝলক হাসি হয়ে ধরা দিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নওরীন হক জানান, ভাসমান দরিদ্র মানুষের আশ্রয় নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সময়ে টিনের ছাউনী আর টিনের বেরা বেষ্টিত এসব ঘর নির্মাণ করা হয়। ঘরগুলো এতো জরাজীর্ণ যে তা সংস্কারের উপযোগীও নেই। তাই আশ্রিত পরিবারগুলোর দুর্দশা লাগবের কথা ভেবেই ঘরগুলো মুজিববর্ষের ঘরের আদলে পুনঃনির্মাণের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর করা হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে চরফ্যাসনে প্রথম ধাপে ৩শ ৭০টি ঘর পুনঃ নির্মাণ করা হচ্ছে। ঘরগুলো পুনঃনির্মাণে সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রত্যেকটি ঘর পুনঃনির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩ লাখ ৪ হাজার টাকা। সেমি পাকা এসব ঘরে থাকছে রঙ্গিন টিনের ছাউনি। বারান্দাসহ ২টি কক্ষ, রান্নাঘর এবং একটি সংযুক্ত শৌচাগার । আছে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা এবং পাকা ঘাটলাসহ পুকুর।
যাযাদি/ এসএম