বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

উলিপুরে টিয়ার ও কাবিখার কাল দেখার জন্য তদন্তে নেমেছে দুদক

রাজীবপুর প্রতিনিধ
  ০৯ মার্চ ২০২৪, ১৫:৪৮
উলিপুরে টিয়ার ও কাবিখার কাল দেখার জন্য তদন্তে নেমেছে দুদক

উলিপুর কাজ না করে সহস্রাধিক টিআর,কাবিখা ও কাবিটার প্রকল্পের ১৮ কোটি ৫৬ লাখ ২৪ হাজার ১৮৬ টাকা ও ১২২৮ মেঃ টন চাল লোপাটের অভিযোগের তদন্তে নেমেছে দুনীৃতি দমন কমিশন। এ সব প্রকল্পের বরাদ্ধ বছরের শুরুতে আসলে ও সুকৌশলে জুন মাসে প্রকল্প অনুমোদন দিয়ে কাজ না করে ৩০ জুন সমুদ্বয় বরাদ্ধের টাকা ও চাল উত্তোলন করে পি আইও, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রকল্প চেয়ারম্যান সিন্ডিকেট ভাগ বাটোয়ারা করে নেন। গত ৩ বছরে এ সিন্ডিকেট চক্রটি ভুয়া প্রকল্পের নামে সরকারী অর্থ ও চাল হরিলুট করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সব প্রকল্পের কাজ না করায় গ্রামীন যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে।

জানাগেছে,দুনীৃতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে,মো.মামুন আলী মন্ডল উপসহকারী পরিচালক দুনীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুড়িগ্রাম, ১৯ নভেম্বর/২৩ প্রকল্প অনুসন্ধানের জন্য নোটিশ দেন। ৩ ডিসেম্বর/২৩, উপজেলা প্রকল্প বাস্থবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সংশ্লিষ্ট দপ্তরে হাজির হয়ে প্রকল্পের রেকর্ডপত্রসহ বক্তব্য প্রদান করেন। এর পর প্রকল্প অনুসন্ধানে নামে দুদক।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ২০২২/২৩ অর্থ বছর দুর্গাপুর ইউনিয়নের গোড়াই বাজার জামে মসজিদ সংস্কারে বরাদ্ধ দেখানো হয়েছে দেড় লাখ টাকা। ওই মসজিদের মোয়াজ্জেম আবু তালেব ও মসজিদ কমিটির অর্থ সম্পাদক বাবর আলী বলেন, মসজিদ সংস্কারের কোনো প্রকল্প আমরা পাইনি। কোন কাজ ও হয়নি। একই অর্থ বছরে থেতরাই ইউনিয়নের টোপের ছড়ার জামে মসজিদ সংস্কার দেখানো হয়েছে ২ লাখ টাকা। ওই মসজিদের মোয়াজ্জেম মোঃ খতিব উদ্দিন জাানান, তারা কোন প্রকল্প পাননি।

এছাড়া থেতরাই কিশোরপুর বটতলী হতে পাতিলাপুর গামী রাস্তা সংস্কার ৩ লাখ টাকা। মুন্সিবাড়ী গুচ্ছ গ্রামে মাটি ভড়াট করন ৬ লাখ টাকা, হাতিয়া চর বাঘুয়া দক্ষিন পাড়া কবরস্থানে মাটি ভড়াট ৩ লাখ টাকা,ধরনীবাড়ী গুচ্ছ গ্রামগামী রাস্তা সংস্কার ৪ লাখ টাকা, হাতিয়া বাঁধের রাস্তা জামে মসজিদ হতে মালচারপাড় পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার বরাদ্ধ ৮মেট্রিক টন চাল, নয়াগ্রাম আঃ আজিজ মৌলভীর বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার বরাদ্ধ ১০ মেট্রিক টন চাল। থেতরাই কিশোরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ভড়াট করন, ২ লাখ ৫০হাজার টাকা। এ সমস্থ প্রকল্পের কাজ না করে টাকা ও চাল তুলে নেয়া হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। থেতরাই ইউপি সদস্য মো.আবু সিদ্দিক বলেন.চেয়ারম্যান কোথায় কি প্রকল্প করেন তা আমাদের জানা নাই।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সুুত্রে জানা যায়, ২০২০/২১ অর্থ বছরে গ্রামীন অবকাঠামো টিআর(সাধারন) ২৪৩ প্রকল্পের বরাদ্ধ ৩ কোটি ২৩ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৩ টাকা, কাবিটা(সাধারন) ১০৭টি প্রকল্প বরাদ্ধ ৪ কোটি ২৩ লাখ, ৬৮ হাজার ৪৯৭ টাকা। ২০২১/২২অর্থ বছরে টিআর(সাধারন) ১৯০টি প্রকল্পে বরাদ্ধ ২ কোটি ৯৬ লাখ,৭৬ হাজার ২২০টাকা,কাবিটা (সাধারন) ৫৭টি প্রকল্পের বরাদ্ধ ১ কোটি,৮৯ লাখ,৭৩ হাজার ৮৮৯ টাকা, কাবিখা (সাধারন) ৫৯টি প্রকল্পের বরাদ্ধ ৬৫২.৯৭৫২মেট্রিক টন চাল। ২০২২/২৩ অর্থ বছরে টিআর(সাধারন) ১৬৯টি প্রকল্পের বরাদ্ধ ২কোটি,৭৭ লাখ, ৪১ হাজার ৮৮৪ টাকা, কাবিটা(সাধারন) ১১৪ প্রকল্পের বরাদ্ধ ৩ কাটি,৪৫লাখ,১৯ হাজার ২২৩ টাকা, কাবিখা (সাধারন)৭৬টি প্রকল্পের বরাদ্ধ ৫৭৫.৪৪৫৮মেট্রিক টন চাল বরাদ্ধ পাওয়া যায়।

প্রকল্প চেয়ারম্যান নুর ছালমা বেগম,মতিয়ার রহমান, তাসলিমা আক্তার,সহ বেশ কয়েকজন প্রকল্প চেয়ারম্যানের ভাষ্য পিআইও অফিস ও উপজেলা চেয়ারম্যান চেক ও ডিও সহি করে নিয়েছেন। কিন্ত আমাদের কোন টাকা দেওয়া হয় নাই। কাজ ও করা হয় নাই বলে তারা জানান। হাতিয়া বাঁধের রাস্তা জামে মসজিদ হতে মালচার পাড় পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার না করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করেন স্থানীয় অবসর প্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মোঃ রফিকুল ইসলাম এথেতরাই টোপের ছড়া জামে মসজিদ সংস্কারের ২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন ওই ইউনিয়নের ১০জন ইউপি সদস্য ইউএনও, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে।

কুড়িগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশন,সমন্বিত জেলা কার্যালয় এর উপসহকারী পরিচালক মো. মামুন আলী মন্ডল বলেন, পিআইও রেকর্ডপত্র ও জবাব দিয়েছেন। পিআইও সহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে প্রকল্পে অনিয়ম দুনীতিও টাকা আতœসাতের অভিযোগের অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্থবায়ন কর্মকর্তা সিরাজুদ্দৌলা বলেন,উপজেলা চেয়ারম্যান কাজ করার কথা বলে প্রকল্পের টাকা ও বরাদ্ধকৃত চাল তুলে নিয়েছেন। কিন্ত কাজ করেনি। আমি ওই সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় ছিলাম। এসব বিষয়ে দুনীর্তি দমন কমিশন অনুসন্ধান করছে বলে জানান।

উপজেলা চেয়ারম্যান (উপঃ আ.লীগের সাধারন সম্পাদক) গোলাম হোসেন মন্টু বলেন,প্রকল্প চেয়ারম্যানদের কাছে চেক সহি নিয়ে টাকা উত্তোলন করে প্রকল্প চেয়ারম্যানদের টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্ত কাজ করেনি তা জানতাম না। কাজের তদারকির দায়িত্ব পিআইওর তিনি বলতে পারবেন। সিন্ডিকেটের বিষয় তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আতাউর রহমান বলেন, এ বিষয় গুলো আমার আসার আগের। তাছাড়া এ ধরনে কোন চিঠি পত্র আমি পাইনি। তাই কিছু জানি না।

যাযাদি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে