সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সেচ সংকটে দিশেহারা দাকোপের তরমুজ চাষিরা

দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি
  ২৪ মার্চ ২০২৪, ১৫:৩১
সেচ সংকটে দিশেহারা দাকোপের তরমুজ চাষিরা

খুলনার দাকোপে গত বছরের ন্যায় এবারও তরমুজের আবাদ করেছে কৃষকেরা। তবে সেচের পানির অভাবে তরমুজ চাষ মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে লোকসানের আশঙ্কায় এলাকার হাজারো চাষি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে এ উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় মোট চাষ যোগ্য জমি রয়েছে ২০ হাজার ৮৮৩ হেক্টর। এর মধ্যে গত বছর ৭ হাজার ৬০৫ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছিল। ভালো ফলন হলেও দাম অনেক কম পাওয়ায় এবার চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে।

এছাড়া বোরো ধান ৩৫০ হেক্টর, সূর্য্যমুখি ১৩৮ ভূট্টা ১৮ হেক্টর, বাঙি ৩৫ হেক্টর, গম ২ হেক্টর, মুগ ডাল ৪ হেক্টর, তিল ৩ হেক্টর ও ১৫ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। কিন্তু পানির উৎস সরকারি খাস খাল, জলাশয়গুলোর গভীরতা সংকটে এবং প্রচন্ড খরার কারণে পুকুরগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় তরমুজ ক্ষেতে সেচ দিতে পারছেন না এলাকার কৃষকরা।

সরেজমিনে স্থানীয় একাধিক কৃষকের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, এ অঞ্চলের প্রধান ফসল আমনের পর রবি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি লাভ হয় তরমুজ চাষে। ১ বিঘা জমিতে তরমুজের বীজ রোপন থেকে ফসল তোলা পর্যন্ত খরচ হয় ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা। আর বিক্রি হয় নিম্নে ৩০ হাজার থেকে শুরু করে লাখ টাকারও বেশি। কৃষকরা লোকসান খাওয়ায় প্রতি বছর এ আবাদ কমে আসছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ জমিতে তরমুজ গাছ অনেক বড় হয়ে গেছে। গাছে ফুল ও ফল আসা শুরু করেছে। কিছু ক্ষেতে আবার তরমুজ বড় হয়ে উঠেছে। অধিকাংশ ক্ষেতে সার ও কীটনাষক ছিটানোয় ব্যস্ত সময় পার করছেন নারী-পুরুষরা। তবে প্রচন্ড খরার কারণে মাঠের মধ্যে খাল বিলগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় ক্ষেতে সেচের পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। প্রথম দিকে অনেকে মাঠের ছোট ছোট কুয়ো থেকে ক্ষেতে সেচ দিলেও সে সব পানির উৎসগুলো এখন শুকিয়ে গেছে। আবার অনেক কৃষক পাম্প ও লম্বা পাইপ দিয়ে দুরের খাল থেকে সেচ দিলেও সে সব খালে এখন আর পানি নেই বললেই চলে। ফলে লোকসানের আশঙ্কায় এলাকার হাজারো কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

কৈলাশগঞ্জ এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য ও কৃষক সিন্ধু রায় বলেন, তিনি এবছর ৮ বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। প্রথম দিকে তিনি মাঠে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের কেটে দেওয়া ছোট ছোট কুয়ো থেকে ক্ষেতে সেচ দিয়েছেন। এখন সেখানে পানি প্রায় শুকিয়ে গেছে। তাছাড়া খরার কারণে খালগুলোর পানিও সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেছে।

এছাড়া বাজুয়া চড়া নদীতে লবণ পানি আসায় সেখানকার পানি তারা ব্যবহার করতে পারছেন না। ফলে সেচ দিয়ে কোন রকমে গাছগুলো বাঁচিয়ে রেখেছেন। সেচের পানির অভাবে ফল ভালো বড় হবে না, গাছও মরে যেতে পারে। এতে তার ব্যাপক লোকসান হতে পারে। আর লোকসান হলে ধার দেনা ও ঋণ শোধ করতে না পারলে তিনি পথে বসবেন বলে জানান।

চুনকুড়ি এলাকার কৃষক জীবনানন্দ মন্ডল জানান, উপজেলার সকল ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অধিকাংশ সরকারি খাস খাল, জলাশয়গুলো অবৈধ দখলদার ও ইজারাদাররা ঘন ঘন টোনাজাল, নেটপাটা দেওয়ার কারণে পলি পড়ে গভিরতা কমে যাওয়ায় খাল ও ব্যক্তিগত পুকুরগুলোর পানি শুকিয়ে গেছে। ফলে তরমুজ ক্ষেতের সেচের পানির তীব্র সংকট চলছে। সেচের পানির অভাবে তরমুজ চাষ মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে লোকসানের আশঙ্কায় এলাকার হাজারো তরমুজ চাষীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন অনেক স্থানে সেচের পানি নিয়ে ঝগড়া বিবাদও লেগে আছে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, মাঠের খাল ও জলাশয়গুলোতে পলি পড়ে গভিরতা কমে যাওয়ায় পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। নদীর পানিও প্রচন্ড লবণ থাকায় ব্যবহার করতে পারছেন না কৃষকরা। এ পর্যন্ত কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় ১৫০টি মিনি পুকুর, ১টি বড় কেনাল ৫০ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে। এছাড়া আরো ৮টি খাল খননের জন্য তালিকাসহ মন্ত্রণালয় প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সব খালগুলো খনন করতে পারলে কৃষকদের সেচের পানি সংকট কিছুটা লাঘব হবে। তাছাড়া প্রত্যেক কৃষক নিজ নিজ জমিতে মিনি পুকুর কেটে নিলে সেচ দিতে ভালো হয় বলে তিনি মনে করেন।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে